বাংলাদেশের জন্যই ‘ভস্মাসুর’ হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা মুসলিমরা, শরণার্থীরা অস্ত্র হাতে নেওয়ায় সরকার নড়েচড়ে বসেছে

রোহিঙ্গা (Rohingya) মুসলমানদের আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশের (Bangladesh) জন্য এই শরণার্থীরা ‘ভস্মাসুর’ হয়ে উঠতে পারে। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী মিয়ানমারের (Myanmar) রাখাইন প্রদেশে (Rakhine Province) সক্রিয় আরাকান আর্মি (Arakan Army) এর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিয়েছে।

রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পতাকা তুলেছে। বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলিতে (Refugee Camps) এই যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর ফলে বাংলাদেশের মিয়ানমার সংলগ্ন সীমান্তে উত্তেজনা বেড়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (International Crisis Group) এই রিপোর্টটি সবার টনক নড়িয়ে দিয়েছে।

রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের কক্সবাজার (Cox’s Bazar) এলাকায় অস্থায়ী শিবিরগুলির আশেপাশে রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের নিয়োগ করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের এই বিদ্রোহী মনোভাব মিয়ানমারে এই মুসলিম শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের আশায় জল ঢেলে দিতে পারে। বাংলাদেশ এই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর যে চেষ্টা করছে, তা ব্যর্থ হতে পারে। এই বিদ্রোহী রোহিঙ্গারা তখন বাংলাদেশেই সহিংসতা (Violence) এবং অরাজকতার (Anarchy) কারণ হয়ে উঠতে পারে।

বাংলাদেশে প্রায় ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম রয়েছে, যারা শরণার্থী শিবিরগুলিতে বসবাস করছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কথিত অত্যাচারের পর এই বিদ্রোহীরা ২০১৭-১৮ সালে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছিল। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই কার্যকলাপকে জাতিসংঘ (UN) জাতিগত গণহত্যা (Ethnic Cleansing) বলে আখ্যা দিয়েছে। এই বিষয়ে কেসিজি (KCG) এর রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, যার শিরোনাম ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার-রোহিঙ্গা বিদ্রোহের হুমকি’। রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা মিয়ানমার সীমান্তে আরাকান আর্মির উপর বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে। কিন্তু তারা কোথা থেকে এবং কিভাবে অস্ত্র-প্রশিক্ষণ পাচ্ছে, সে বিষয়ে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ নীরব রয়েছে।

রিপোর্টে সতর্ক করা হয়েছে যে, এই বিদ্রোহ আরাকান আর্মির জন্য সহিংসতা বয়ে আনলেও, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য রোহিঙ্গা শরণার্থীদের, যারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চায়। বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার সীমান্তে উভয় দিকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় একটি নতুন মাথাব্যথার সৃষ্টি হবে।

রাখাইন প্রদেশে বৌদ্ধ (Buddhist) জনসংখ্যা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা তাদের লক্ষ্যবস্তু করতে পারে। কিন্তু যদি রাখাইনে আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কার্যকলাপ তীব্র হয়, তাহলে অবশিষ্ট রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরও স্থানচ্যুতি (Displacement) ভোগ করতে হতে পারে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা মুসলমানদের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি হয়ে গেছে। বেকারত্ব (Unemployment), দারিদ্র্য (Poverty) এবং অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক অস্থিরতার (Economic-Political Upheaval) শিকার বাংলাদেশে এখন তাদের ফেরত পাঠানোর দাবিও জোরদার হয়েছে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মোহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর জন্য একটি করিডোর (Corridor) তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন। জাতিসংঘে এই বিষয়ে একটি সম্মেলনও আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিদ্রোহের কারণে পুরো বিষয়টি উল্টো ফল দিতে চলেছে বলে মনে হচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *