পাকিস্তানে লোকতন্ত্রের নামে প্রহসন, মুনীরের উপর ট্রাম্পের সিলমোহরের পর অঘোষিত মার্শাল ল’র ইঙ্গিত!

পাকিস্তানে লোকতন্ত্রের নামে প্রহসন, মুনীরের উপর ট্রাম্পের সিলমোহরের পর অঘোষিত মার্শাল ল’র ইঙ্গিত!

পাকিস্তানে গণতন্ত্রের স্বরূপ দীর্ঘকাল ধরে বিতর্ক এবং সন্দেহের বেড়াজালে আটকে রয়েছে। গত দশকে পরপর দুটি নির্বাচনের পর প্রতিবেশী দেশটিতেও গণতন্ত্রের বিকাশের সম্ভাবনা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ইমরান খানের দল সবচেয়ে বেশি আসন জেতার পরও জেল থেকে মুক্তি পাননি। পাকিস্তানি সেনাকে নিশানা করার কারণে তাকে এমনভাবে ফাঁসানো হয়েছে যে, হয়তো জীবদ্দশায় তিনি আর জেল থেকে বের হতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে আংশিক হলেও, অন্তত বলার মতো গণতন্ত্র পাকিস্তানে বেঁচে ছিল। কিন্তু গত কয়েক মাসে সেনাপ্রধান আসিফ মুনীর যেভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন, তাতে এই লোকদেখানো গণতন্ত্রও দেশ থেকে উধাও হয়ে গেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানি ফিল্ড মার্শালকে যে সম্মান দিয়েছেন, তার পর মুনীরের পা আর মাটিতে পড়ার নয়। স্পষ্টতই, এখন পাকিস্তানে লোকদেখানো গণতন্ত্রেরও কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। বর্তমান সময়ে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিফ মুনীর দেশের রাজনীতি এবং নীতি নিয়ন্ত্রণকারী সর্বোচ্চ ক্ষমতার কেন্দ্র। আমেরিকার মতো শক্তিশালী দেশও পাক প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে মুনীরের সাথে কথা বলাকে উপযুক্ত মনে করেছে। এখন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ একটি পুতুলের মতো কেবল নামমাত্র নেতা।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সেনাবাহিনী দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে
১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে পারভেজ মোশাররফের শাসন পর্যন্ত, সেনাবাহিনী বারবার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করেছে। সাম্প্রতিক দশকগুলিতে, যদিও সরাসরি সামরিক শাসন কম হয়েছে, সেনাবাহিনীর প্রভাব কমেনি। ২০২২ সালে ইমরান খানের সরকারের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব, যা অনেক বিশ্লেষক সেনা-প্রয়োজিত বলে মনে করেন, তার একটি উদাহরণ।

১. শাহবাজ শরিফ, একজন দুর্বল প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা:
সোশ্যাল মিডিয়াতেও শাহবাজ শরিফ সম্পর্কে একটি X পোস্ট ভাইরাল হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, শাহবাজ শরিফকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কেবল ভিক্ষাপাত্র হাতে রাখার জন্য রেখেছে, বাকি সমস্ত চুক্তি ও বৈঠক সেনাপ্রধান আসিফ মুনীর নিজেই সেরে ফেলেন। এটি জনগণের সেই অনুভূতিকে প্রতিফলিত করে যে, শাহবাজের শাসন কেবল সামরিক নেতৃত্বের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।

শাহবাজ শরিফ, যিনি ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, তাকে সেনাবাহিনীর পছন্দের প্রার্থী বলে মনে করা হয়। শাহবাজের দল, পিএমএল-এন (PML-N), সেনাবাহিনীর সমর্থনে একটি জোট সরকার গঠন করেছে, যদিও ইমরান খানের পিটিআই (PTI) সবচেয়ে বেশি আসন জিতেছিল। এই পরিস্থিতি স্পষ্ট করে যে, শাহবাজের প্রধানমন্ত্রী হওয়া জনগণের ম্যান্ডেট থেকে কম এবং সামরিক হস্তক্ষেপের ফল বেশি ছিল। তবে বর্তমান সময়ে আসিফ মুনীরকে যে গুরুত্ব আমেরিকা দিয়েছে, তা শাহবাজকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। এটি এভাবেই দেখা যেতে পারে যে, শাহবাজ আমেরিকায় মুনীর এবং ট্রাম্পের সাক্ষাৎ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি। এমনকি তার টুইটার হ্যান্ডেলও নীরব রয়েছে।

তবে শাহবাজ ইতিমধ্যেই নিস্তেজ হয়ে পড়েছেন। এমনটি অনেকবার দেখা গেছে, যা দেখে মনে হয়েছে যে তিনি কেবল একটি লোকদেখানো নেতা। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৫ সালের মে মাসে ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর সময়, শাহবাজ স্বীকার করেছিলেন যে, সেনাপ্রধান আসিফ মুনীর রাত ২:৩০টায় তাকে জানিয়েছিলেন যে, ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র নূরে খান বিমান ঘাঁটিতে হামলা করেছে। এই স্বীকারোক্তি দেখায় যে, গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও জাতীয় নিরাপত্তা সিদ্ধান্তে শাহবাজের ভূমিকা নগণ্য। এছাড়াও, শাহবাজ কর্তৃক আসিফ মুনীরকে একটি জাল ছবি উপহার দেওয়া, যা ‘অপারেশন বুনিয়ান-উল-মারসুস’ (Operation Bunyan-ul-Marsous) হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল, তা তার বিশ্বাসযোগ্যতাকে আরও দুর্বল করেছে।

২. আমেরিকার স্বীকারোক্তি: সেনাবাহিনীই আসল ক্ষমতা:
আমেরিকা, যারা দীর্ঘকাল ধরে পাকিস্তানের কৌশলগত অংশীদার, তারা পরোক্ষভাবে স্বীকার করেছে যে, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্বই প্রকৃত ক্ষমতার কেন্দ্র। সম্প্রতি, যখন গুজব ছড়িয়েছিল যে, আসিফ মুনীরকে মার্কিন সেনা দিবসের কুচকাওয়াজে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তখন আমেরিকা তা অস্বীকার করেছিল। তা সত্ত্বেও, ওয়াশিংটন ডিসিতে পাকিস্তানি-আমেরিকানরা মুনীরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে, যেখানে বেসামরিক শ্রেষ্ঠত্বের দাবি জানানো হয়। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর শ্রেষ্ঠত্বকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।

পাকিস্তানের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক জটিল। একদিকে, আমেরিকা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানের সহযোগিতা চায়, কিন্তু অন্যদিকে, তারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে চিন্তিত। X-এর একটি পোস্টে দাবি করা হয়েছিল যে, আমেরিকার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উপর দখল আছে, যা এই ধারণাকে প্রতিফলিত করে যে আমেরিকা সামরিক নেতৃত্বের সাথে সরাসরি আলোচনা করে, বেসামরিক সরকারের সাথে নয়।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে আমেরিকা, পাকিস্তানে সামরিক আধিপত্যকে নীরব সম্মতি দিয়েছে, কারণ এটি সন্ত্রাসবাদ বিরোধী এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য তাদের স্বার্থ পূরণ করে। তবে, এই সম্মতি গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকারক। শাহবাজ শরিফের নামমাত্র ভূমিকা এবং আসিফ মুনীরের শ্রেষ্ঠত্ব এই কথার প্রমাণ যে, দেশে সামরিক শক্তি বেসামরিক শাসনকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

আমেরিকা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তির নীরব সম্মতি এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ সংস্কারের প্রয়োজন নেই, বরং সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সীমিত করার জন্য আন্তর্জাতিক চাপও প্রয়োজন। ইমরান খানের মতো নেতাদের মুক্তি এবং স্বাধীন নির্বাচন এই দিকে প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে। তবে, যতক্ষণ না সেনাবাহিনী তাদের ক্ষমতা ছাড়তে প্রস্তুত হয়, ততক্ষণ পাকিস্তানে প্রকৃত গণতন্ত্র একটি দূরের স

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *