খামেনি কি ট্রাম্পের ওপর প্রতিশোধ নিলেন? আমেরিকার সবচেয়ে বড় শত্রুর হাতে তুলে দিলেন ইরানি বাহিনীর কমান্ড

ইরানে এমন একটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যা আমেরিকাকেও (America) হতবাক করে দিয়েছে। আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি (Ayatollah Ali Khamenei) এমন একজন ব্যক্তিকে বেছে নিয়েছেন যাকে পশ্চিমা দেশগুলো ‘মানবাধিকারের হত্যাকারী’ (Human Rights Abuser) বলে মনে করে।

আসলে ইরান (Iran) ও ইসরায়েলের (Israel) মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনার মধ্যে খামেনি মোহাম্মদ কারামিকে (Mohammad Karami) আইআরজিসি গ্রাউন্ড ফোর্সের (IRGC Ground Force) নতুন কমান্ডার (Commander) হিসেবে নিযুক্ত করেছেন।

কারামি সেই ব্যক্তি যার বিরুদ্ধে ২০১৯ এবং ২০২২ সালের বিক্ষোভে নৃশংস দমনের অভিযোগ রয়েছে এবং যিনি আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (European Union) এবং ব্রিটেনের (Britain) নিষেধাজ্ঞার (Sanctions) তালিকায় রয়েছেন। সামরিক নেতৃত্বে হঠাৎ পরিবর্তনের এবং বর্তমান অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে কারামি এই দায়িত্ব পেলেন।

মোহাম্মদ কারামিকে কেন কমান্ড দেওয়া হলো?
মোহাম্মদ কারামিকে এখন আইআরজিসি গ্রাউন্ড ফোর্স কমান্ডার মোহাম্মদ পাকপুরের (Mohammad Pakpour) স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। পাকপুরকে জেনারেল হোসেন সালামীর (Hossein Salami) মৃত্যুর পর আইআরজিসি-র কমান্ডার-ইন-চিফ (Commander-in-Chief) করা হয়েছে। আয়াতুল্লাহ খামেনি আদেশে লিখেছেন, “ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ কারামি; আইআরজিসি কমান্ডার-ইন-চিফের সুপারিশ এবং আপনার অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা বিবেচনা করে আপনাকে গ্রাউন্ড ফোর্সের কমান্ড দেওয়া হলো।”

কে এই মোহাম্মদ কারামি?
মোহাম্মদ কারামি পুরনো বিতর্কিত নামগুলির মধ্যে অন্যতম। ২০১৯ সালের নভেম্বরে যখন ইরানে ব্যাপক সরকারবিরোধী বিক্ষোভ (Anti-government Protests) হয়েছিল, তখন কারামির বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। এরপর আমেরিকা তাকে তাদের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। ২০২২ সালে (ইরানি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৪০১) দেশব্যাপী বিক্ষোভ দমনে তার ভূমিকার জন্যও তিনি ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও তাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের (Human Rights Violations) দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

সিস্তান-বালুচিস্তানে কারামির কঠোরতা
কারামিকে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে আইআরজিসি-র কুদস সদর দপ্তরের (IRGC’s Quds Headquarters) কমান্ডার করা হয়েছিল, যা সিস্তান ও বালুচিস্তান (Sistan and Baluchestan) এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইরানের কেরমান প্রদেশে (Kerman Province) পরিচালিত হয়। এই এলাকাগুলো প্রায়শই সরকারবিরোধী কার্যকলাপ এবং বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। ইব্রাহিম রাইসির (Ebrahim Raisi) সরকার গঠনের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমদ ওয়াহিদির (Ahmad Vahidi) সুপারিশে কারামিকে সিস্তান ও বালুচিস্তানের গভর্নর (Governor) করা হয়েছিল।

‘রক্তাক্ত শুক্রবার’ এবং কারামি
২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর জাহেদান শহরে (Zahedan City) একটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটে, যা ‘রক্তাক্ত শুক্রবার’ (Bloody Friday) নামে পরিচিত। এই দিনে নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালায়, যাতে প্রায় ১০০ জন নিহত হয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর (Human Rights Organizations) মতে, এই ঘটনার জবাবদিহিতা নির্ধারণে কারামির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দুই বছর আগে ব্রিটেন কারামির সঙ্গে আইআরজিসি-র আরও তিন কর্মকর্তা এবং তিন বিচারককে তাদের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *