নকল লাশ, মিথ্যা পরিচয়: রাজ এবং সোনমের তৈরি করা এক ভয়ংকর অপরাধ কাহিনী, পুলিশও হতবাক!

জাতীয় ডেস্ক: সোনম এবং রাজ মিলে রাজা-কে খুন করে নিজেদের বাঁচানোর এক ধূর্ত পরিকল্পনা করেছিল। বিয়ের আগে থেকেই রাজ একটি ভুয়া নম্বর থেকে ‘সঞ্জয় বর্মা’ সেজে সোনমের সাথে কথা বলেছিল। হত্যার তিনটি ব্যর্থ চেষ্টার পর, তারা রাজাকে খুন করে।
সোনম একটি ভুয়া মৃতদেহ দেখিয়ে পালাতে এবং বোরকা পরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ব্যর্থ হয়। পুলিশ এখনও হত্যা সংক্রান্ত একটি কালো ব্যাগের সন্ধান করছে।
বিয়ের ভিডিওতে লুকিয়ে ছিল ভয়ংকর ষড়যন্ত্র
সোনম এবং রাজার বাগদান ও বিয়ের অনেক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media) সামনে এসেছে। এই ভিডিওগুলিতে সোনম হাসিমুখে রাজাকে আংটি পরাচ্ছে এবং বিয়ের রীতি-নীতি পালন করছে বলে দেখা যাচ্ছে। বাগদানের সময় তাদের একে অপরের হাত ধরে থাকতেও দেখা যায়। সোনম উপস্থাপকের প্রশ্নের উত্তর লাজুক ভঙ্গিতে দিচ্ছে। এই আনন্দময় মুহূর্তগুলোর মধ্যে কেউ কল্পনাও করতে পারত না যে তার মন ও মস্তিষ্কে একটি ভয়ংকর ষড়যন্ত্র চলছে।
হত্যার আগেই ‘সঞ্জয় বর্মা’ সেজেছিল রাজ কুশওয়াহা
শিলং পুলিশের (Shillong Police) তদন্তে যে তথ্য সামনে এসেছে, তাতে সবাই স্তম্ভিত। সোনম তার বিয়ের তিন মাস আগে থেকেই ‘সঞ্জয় বর্মা’ নামের এক ব্যক্তির সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলত। ১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চের মধ্যে সোনম ‘সঞ্জয়’-এর সাথে ১১২ বারেরও বেশি কথা বলেছিল। কিন্তু যখন পুলিশ সেই নম্বরটি ট্র্যাক করে, তখন তারা হতবাক হয়ে যায়। ফোন ব্যবহারকারী কোনো সঞ্জয় ছিল না, বরং সোনমের প্রেমিক রাজ কুশওয়াহা (Raj Kushwaha) নিজেই ছিল। এখন পুলিশ তদন্ত করছে যে, কার আধার কার্ড (Aadhar Card) ব্যবহার করে এই নম্বরটি নেওয়া হয়েছিল, এই নম্বরে কী কী চ্যাট হয়েছিল, এবং এটি কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট (Bank Account) খুলতেও ব্যবহৃত হয়েছিল কিনা। পুলিশ মনে করছে যে, হত্যার পরিকল্পনা মার্চ মাস থেকেই করা হচ্ছিল।
হত্যার একাধিক ব্যর্থ চেষ্টা
শিলং এর পুলিশ সুপার বিবেক সিয়েম (Vivek Siem) জানিয়েছেন যে, রাজার হত্যা হঠাৎ করে হয়নি। এটি কার্যকর করার জন্য কমপক্ষে তিনবার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছিল। প্রথমে গুয়াহাটিতে (Guwahati), তারপর নংরিয়াটে (Nongriat) এবং পরে ওয়েসডাং ফলস (Wesodong Falls) এর কাছেও রাজাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, কিন্তু কোনো না কোনো কারণে সেগুলো ব্যর্থ হয়। অবশেষে, ২৩ মে মেঘালয়ের (Meghalaya) সোহরাতে (Sohra) রাজের বন্ধু বিশাল (Vishal), আকাশ (Akash) এবং আনন্দ (Anand) মিলে সোনমের সাথে রাজাকে হত্যা করে।
ভুয়া মৃতদেহ দেখিয়ে পালানোর ধূর্ত পরিকল্পনা
মেঘালয়ের রাজা রঘুবংশী হত্যা মামলার তদন্তে সোনম রঘুবংশীর (Sonam Raghuwanshi) ধূর্ত মস্তিষ্কের আরও একটি স্তর উন্মোচিত হয়েছে। মেঘালয় পুলিশ দাবি করেছে যে, সোনম অন্য কোনো মহিলাকে হত্যা করে তার মৃতদেহকে নিজের বলে চালিয়ে চিরদিনের জন্য নিখোঁজ হওয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল। সে এই পরিকল্পনা কার্যকর করতে পারেনি।
বোরকা পরে সিনেমার মতো পলায়ন
রাজার হত্যার পর সোনম পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে বোরকা পরে সিনেমার স্টাইলে শিলং থেকে পালিয়ে যায়। সে শিলং থেকে আসাম (Assam), সেখান থেকে পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) হয়ে বিহার (Bihar) এবং ইউপির (UP) অনেক শহর পেরিয়ে অবশেষে ইন্দোরে (Indore) ফিরে আসে। ইন্দোরে রাজ একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিল, যেখানে সোনম বেশ কয়েকদিন ছিল এবং তারপর গাজিপুরে (Ghazipur) গিয়ে আত্মসমর্পণ করে।
কালো ব্যাগের রহস্য এখনও অমীমাংসিত
শিলং পুলিশ ইন্দোরে সোনমের সেই ভাড়া ফ্ল্যাটটিও তল্লাশি করেছে, যেখানে সে ছিল। পুলিশ সেই কালো ব্যাগটির সন্ধান করছিল, যেটি সোনম রাজার হত্যার পর তার সাথে নিয়ে এসেছিল। পুলিশের সন্দেহ যে, সেই ব্যাগেই হত্যা সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ থাকতে পারে, যা এখনও পাওয়া যায়নি।