পাকিস্তান নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পের নাম পাঠাল, হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণের বিনিময়ে মুনির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন

পাকিস্তান নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পের নাম পাঠাল, হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণের বিনিময়ে মুনির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন

পাকিস্তান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে (Donald Trump) ২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের (Nobel Peace Prize) জন্য মনোনীত করেছে। এই মনোনয়নের ভিত্তি হিসেবে ট্রাম্পের “নির্ণায়ক কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বকে” উল্লেখ করা হয়েছে, যা ২০২৫ সালে ভারত (India) এবং পাকিস্তানের (Pakistan) মধ্যে সামরিক উত্তেজনা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

পাকিস্তানের দাবি, ট্রাম্পের এই উদ্যোগ দুটি পরমাণু-সশস্ত্র দেশের মধ্যে একটি ব্যাপক যুদ্ধ এড়াতে সাহায্য করেছে। আসলে, এর আগে স্বয়ং পাকিস্তানি সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির (Asim Munir) হোয়াইট হাউসে (White House) আমন্ত্রণের বিনিময়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তার দেশ ২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পের নাম সুপারিশ করবে। এখন মনে হচ্ছে, তিনি তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন।

পাকিস্তান সরকার তাদের অফিসিয়াল এক্স (পূর্বতন টুইটার) অ্যাকাউন্টে একটি বিবৃতি জারি করে বলেছে, “পাকিস্তান সরকার সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান সংকটের সময় তাদের নির্ণায়ক কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্পের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

ঘটনা কী?
এই উত্তেজনা ২২শে এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের (Jammu and Kashmir) পাহলগামে (Pahalgam) ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলা থেকে শুরু হয়েছিল, যেখানে ২৬ জন নিহত হয়েছিলেন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদীদের দায়ী করে। জবাবে, ভারত ৭ই মে ‘অপারেশন সিন্ধু’ (Operation Sindhu) শুরু করে, যেখানে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (POK)-এর নয়টি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়। এরপর চার দিন ধরে দুই দেশের মধ্যে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং কামান দিয়ে ব্যাপক সামরিক সংঘাত হয়, যা ১০ই মে দুই দেশের সামরিক নেতাদের মধ্যে চুক্তির পর শেষ হয়।

পাকিস্তান বলছে যে, ট্রাম্প “পর্দার পিছনের কূটনীতির” (Behind-the-scenes Diplomacy) মাধ্যমে এই উত্তেজনা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের হস্তক্ষেপকে “আঞ্চলিক শান্তির জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত” বলে অভিহিত করে, পাকিস্তান ট্রাম্পের প্রশংসা করেছে এবং তাকে “প্রকৃত শান্তিদূত” বলেছে। এছাড়াও, ইসলামাবাদ (Islamabad) জম্মু ও কাশ্মীর বিরোধ সমাধানে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাবেরও প্রশংসা করেছে।

হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও মুনিরের সাক্ষাৎ
এই মনোনয়ন ট্রাম্প এবং পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের মধ্যে ১৮ই জুন হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত একটি বিরল বৈঠকের পরে এসেছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আনা কেলি (Anna Kelly) নিশ্চিত করেছেন যে, মুনিরের ট্রাম্পকে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার সুপারিশের পরেই এই বৈঠক হয়েছিল। অর্থাৎ, মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন যে, পাকিস্তান আগেই আশ্বাস দিয়েছিল যে তারা নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাম সুপারিশ করবে, যার পরেই মুনিরকে হোয়াইট হাউসে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ট্রাম্প এই বৈঠকের সময় দাবি করেন, “আমি ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করেছি। উভয়ই পারমাণবিক দেশ, এবং আমি এটি বন্ধ করেছি।”

ভারতের অস্বীকার
ভারত ট্রাম্পের দাবি এবং আমেরিকার যেকোনো মধ্যস্থতার ভূমিকা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছে। ভারতীয় বিদেশ সচিব বিক্রম মিসরি (Vikram Misri) স্পষ্ট করেছেন যে, ১০ই মে যে যুদ্ধবিরতি হয়েছিল, তা ভারত এবং পাকিস্তানের সামরিক চ্যানেলগুলির মধ্যে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, যেখানে কোনো তৃতীয় পক্ষের কোনো ভূমিকা ছিল না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও (Narendra Modi) ১৭ই জুন ট্রাম্পের সাথে ৩৫ মিনিটের ফোন আলাপে একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেন যে, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি দ্বিপাক্ষিক সামরিক সংলাপের (Bilateral Military Dialogue) ফল ছিল। মিসরি জোর দিয়ে বলেন, “ভারত কখনও তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা গ্রহণ করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না।”

ট্রাম্পের নোবেল পুরস্কারের দাবি
ট্রাম্প বেশ কয়েকবার নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার তার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন। নিউ জার্সির মরিসটাউনে (Morristown, New Jersey) সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য আমার নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল। আমার এটি চার বা পাঁচবার জেতা উচিত ছিল।” ট্রাম্প এও দাবি করেন যে, তিনি কঙ্গো (Congo) এবং রুয়ান্ডা (Rwanda), সার্বিয়া (Serbia) এবং কসোভোর (Kosovo) মতো অন্যান্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছেন। যদিও, তিনি অভিযোগ করেন যে এই পুরস্কার “শুধুমাত্র উদারপন্থীদের দেওয়া হয়।”

নোবেল পুরস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন
নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়নের প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। নোবেল কমিটির (Nobel Committee) নিয়ম অনুযায়ী, শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তি যেমন জাতীয় সংসদ সদস্য, সরকারের সদস্য, অথবা পূর্ববর্তী পুরস্কার বিজয়ীরাই মনোনয়ন করতে পারেন। একজন কর্মরত সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে, আসিম মুনির এই মানদণ্ড পূরণ করেন না, যার কারণে তার মনোনয়ন বৈধ নাও হতে পারে। তবে, পাকিস্তান সরকারের অফিসিয়াল বিবৃতিকে একটি বৈধ মনোনয়ন হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে। নোবেল কমিটি মনোনয়নের বিষয়টি নিশ্চিত করে না এবং এই রেকর্ডগুলি ৫০ বছর পর্যন্ত গোপন রাখা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *