তেলের দামে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় লাফ, ভারতসহ বিশ্বের জন্য ৫টি বড় বিপদ!

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনা বিশ্ব জ্বালানি বাজারকে নাড়িয়ে দিয়েছে। গত কয়েক দিনে অপরিশোধিত তেলের দাম এক দিনেই গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বৃদ্ধি রেকর্ড করেছে।
দুই দেশের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা তীব্র হয়েছে এবং পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ভারতসহ অনেক তেল আমদানিকারক দেশের জন্য গুরুতর সংকট তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতের বৈশ্বিক সরবরাহের উপর কী প্রভাব পড়েছে এবং ভারত কীভাবে প্রভাবিত হতে পারে, তা ৫টি প্রধান পয়েন্টে নিচে আলোচনা করা হলো:
১. তেল সরবরাহে হুমকির মুখে
যদি ইরান ইসরায়েল এবং আমেরিকার চাপের মুখে পড়ে, তাহলে তারা তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য তেল উৎপাদনকারী দেশগুলির তেলক্ষেত্রগুলিও ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লার মধ্যে রয়েছে। এর ফলে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং দামে অপ্রত্যাশিত বৃদ্ধি আসতে পারে, যার প্রভাব ভারতের উপরেও পড়বে।
২. ইরান থেকে তেল রপ্তানি হ্রাস
ইরান বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেল সরবরাহের প্রায় ২% অবদান রাখে। খার্গ দ্বীপের মাধ্যমে ইরানের ৯০% তেল রপ্তানি হয়, কিন্তু সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট চিত্র থেকে তেল রপ্তানিতে गिरावट দেখা গেছে। অন্যদিকে, হরমুজ প্রণালী—যেখান থেকে ২০% বিশ্বব্যাপী তেল চলাচল করে—বর্তমানে চালু থাকলেও এর উপর বিপদ ঘনিয়ে আসছে।
৩. সৌদি আরব হতে পারে বিকল্প
তেল সংকটের পরিস্থিতিতে বিশ্বের আশা সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপর নির্ভর করবে। উভয় দেশ মিলে অতিরিক্ত ৩০-৪০ লাখ ব্যারেল উৎপাদন করতে পারে। সৌদি আরব ইতিমধ্যেই প্রতিদিন ১২.৭ মিলিয়ন ব্যারেল উৎপাদন করছে এবং এর কাছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল মজুদ রয়েছে।
৪. ভারতকে বড় ধাক্কা সহ্য করতে হতে পারে
ভারত তার তেলের চাহিদার ৮৫-৮৮% আমদানি করে, মূলত ইরাক, সৌদি আরব, রাশিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। যদি হরমুজ পথ বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে শুধু আমদানির বিলই বাড়বে না, বরং চলতি হিসাবের ঘাটতি (CAD) এবং মুদ্রাস্ফীতিও বৃদ্ধি পেতে পারে। ICRA-এর মতে, অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০ ডলার বৃদ্ধি পেলে ভারতের আমদানি বিল ১৩-১৪ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর ফলে ব্যক্তিগত বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার উপরও প্রভাব পড়তে পারে।
৫. হরমুজের উপর বিপদ, সাপ্লাই চেইনের উপর প্রভাব
যদি পরিস্থিতি যুদ্ধে পরিবর্তিত হয়, তাহলে ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে, যা বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ তেল এবং ২০% প্রাকৃতিক গ্যাসের রুট। এর ফলে অপরিশোধিত তেলের দাম ২০% পর্যন্ত লাফিয়ে উঠতে পারে। ভারতের মোট তেল আমদানির প্রায় ৪৫-৫০% এই পথ দিয়েই আসে।