ভারতের ৭টি কমান্ডো বাহিনী: যাদের নাম শুনলেই শত্রুর বুক কেঁপে ওঠে

ভারতের কমান্ডো বাহিনীগুলো সাধারণ সৈন্যদের থেকে আলাদা; তাদের বিশেষ মিশনের জন্য তৈরি করা হয়। এদের প্রশিক্ষণ অত্যন্ত কঠিন হয়। ভারতে বিভিন্ন ধরনের কমান্ডো বাহিনী রয়েছে যা বিশ্বজুড়ে তাদের সক্ষমতার জন্য বিখ্যাত।
আসুন, ভারতের কমান্ডো বাহিনীর বিশেষত্বগুলো জেনে নিই।
ভারতের কমান্ডো বাহিনী
১. প্যারা কমান্ডো (Para Commandos)
এদের সেনাবাহিনীর সবচেয়ে প্রশিক্ষিত কমান্ডো হিসেবে ধরা হয়। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় গঠিত এই প্যারা কমান্ডো বাহিনী ১৯৭১ এবং ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধে পাকিস্তানকে পরাস্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত কর্তৃক পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের সন্ত্রাসী ক্যাম্পগুলোতে চালানো সার্জিক্যাল স্ট্রাইক এই প্যারা কমান্ডোরাই করেছিল। ৩০০০ ফুটেরও বেশি উচ্চতা থেকে লাফ দিতে পারদর্শী এই বাহিনী দেশ-বিদেশে অনেক সফল অভিযান পরিচালনা করেছে।
২. মার্কোস (MARCOS)
ইন্ডিয়ান নেভির এই বিশেষ বাহিনী মার্কিন সিল কমান্ডোদের (US SEAL Commandos) পর বিশ্বের একমাত্র বাহিনী যা সম্পূর্ণ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জলের নিচে অভিযান চালাতে পারে। ১৯৮৭ সালে এটি গঠিত হয়। ভারতে মোট ১২০০ জন মার্কোস কমান্ডো রয়েছে।
৩. গরুড় কমান্ডো (Garud Commandos)
এই কমান্ডোরা ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিশেষ বাহিনীর অংশ। ২০০০ কমান্ডোর সক্ষমতা সম্পন্ন এই বাহিনীর প্রতিটি কমান্ডো অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত থাকে। তারা আকাশপথে অভিযান চালাতে পারদর্শী। বিমান আক্রমণ, বিশেষ যুদ্ধ এবং উদ্ধার অভিযানের জন্য তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
৪. ঘাতক (Ghatak)
বলা হয় যে, ঘাতক বাহিনীর একজন জওয়ান এত শক্তিশালী হয় যে, একজন জওয়ান শত্রুপক্ষের ২০ জন সৈন্যকে পরাস্ত করার জন্য যথেষ্ট। যুদ্ধের সময় ব্যাটালিয়নের সামনে থাকা ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই বিশেষ কো ম্পা নি শত্রুপক্ষের কামান ধ্বংস করতে পারদর্শী। তাদের ক্লোজ ব্যাটল এবং ম্যান-টু-ম্যান অ্যাসল্টের কঠোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
৫. ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (National Security Guard – NSG)
ব্ল্যাক ক্যাট কমান্ডো বা এনএসজি নামে পরিচিত এই কমান্ডোদের দেশের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ পরিস্থিতি সামলানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। ১৯৮৪ সালের অপারেশন ব্লু স্টারের পর এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সন্ত্রাসী হামলা এবং অন্যান্য জরুরি পরিস্থিতিতেও দেশের এই সবচেয়ে বিখ্যাত কমান্ডো বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়।
৬. স্পেশাল প্রোটেকশন ফোর্স (Special Protection Force – SPG)
প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর হত্যার পর দেশে এমন একটি কমান্ডো বাহিনীর প্রয়োজন অনুভূত হয় যা বড় নেতাদের নিরাপত্তা প্রদানে দক্ষ হবে। এর ফলস্বরূপ স্পেশাল প্রোটেকশন ফোর্স বা এসপিজি গঠিত হয়। এর প্রধান কাজ হলো প্রধানমন্ত্রী এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও তাদের পরিবারকে নিরাপত্তা প্রদান করা।
৭. কোবরা (COBRA)
২০০৮ সালে গঠিত এই প্যারামিলিটারি কমান্ডো বাহিনীকে প্রধানত গেরিলা যুদ্ধের জন্য তৈরি করা হয়েছে। ভারতের নকশাল-আক্রান্ত অঞ্চলে এই কমান্ডোরা পরিষেবা দিয়ে আসছেন। এরা বিশ্বের অন্যতম সেরা প্যারামিলিটারি ফোর্সগুলির মধ্যে একটি।
সাধারণত এই সমস্ত কমান্ডোদের অভিযান গোপন থাকে, কিন্তু ২০০৮ সালের মুম্বাই সন্ত্রাসী হামলার সময় টেলিভিশন মিডিয়ার ভুলের কারণে হলেও, বিশ্ব নিজেদের চোখে দেখেছিল যে ভারতীয় কমান্ডোরা কতটা দক্ষতার সাথে তাদের অভিযান পরিচালনা করে। তাজ হোটেলকে সন্ত্রাসীদের কবল থেকে নেভির মেরিন কমান্ডো মার্কোস উদ্ধার করেছিল।