কেন ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারেনি? জেনে নিন কখন তার পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা হয়েছে

ইসরায়েল একটি পরমাণু শক্তিধর দেশ, অন্যদিকে ইরান দীর্ঘদিন ধরে পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা করছে। ইসরায়েল মনে করে যে, যদি ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করে ফেলে, তবে ইহুদিদের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। ১৩ই জুন যখন ইসরায়েল ইরানে হামলা চালায়, তখন তাদের লক্ষ্যবস্তু ছিল মূলত পারমাণবিক স্থাপনাগুলো।
তবে ভাবার বিষয় হলো, ইরান ১৯৫০ সাল থেকে পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টা করছে, এমনকি তারা পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রযুক্তিও পেয়ে গেছে। তাহলে প্রশ্ন হলো, কেন ইরান এখন পর্যন্ত পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারেনি?
পারমাণবিক বোমা তৈরিতে ইরানের বাধা এবং হামলার ইতিহাস
ইরানের পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে না পারার সবচেয়ে বড় কারণ হলো ইসরায়েল এবং পশ্চিমা দেশগুলো, যারা চায় না যে বিশ্বে ১০ম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে নতুন কোনো বিপদ তৈরি হোক। উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত বিশ্বের মাত্র ৯টি দেশের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।
গোপন প্রচেষ্টা ও বিদেশি সাহায্য: ইরান দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। এতে তারা পাকিস্তান এবং উত্তর কোরিয়ার সাহায্যও পেয়েছিল। এমনকি পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানী আব্দুল কাদির খান অবৈধভাবে পারমাণবিক প্রযুক্তি ইরানে বিক্রি করেছিলেন।
প্রজেক্ট আমাদ ও তার উন্মোচন: পারমাণবিক প্রযুক্তি হাতে আসার পর ইরান প্রজেক্ট আমাদ চালু করে, যার উদ্দেশ্য ছিল ২০০৪ সালের মধ্যে পাঁচটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা। তবে, ২০০২ সালে বিদ্রোহী গোষ্ঠী ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ রেজিস্টেন্স এই প্রকল্পের কথা ফাঁস করে দেয় এবং ২০০৩ সালে ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে এটি স্বীকার করে। এরপর এই প্রকল্পটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পারমাণবিক চুক্তি ও তার লঙ্ঘন: ইরান ২০১৩ সালে আবারও পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টা করে। পশ্চিমা দেশগুলো এই খবর জানতে পারে। এরপর ২০১৫ সালে আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি ইরানকে একটি পারমাণবিক চুক্তি (Nuclear Deal) করতে বাধ্য করে। এর ফলে আবারও ইরানের স্বপ্ন অধরা থেকে যায়। তবে, ইরান একটি গোপন কর্মসূচির মাধ্যমে পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়।
মোসাদের ফাঁস করা নথি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা: ২০১৮ সালে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ বিশ্বের সামনে ইরানের কিছু ফাইল প্রকাশ করে, যেখানে স্পষ্ট ছিল যে ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করছে। এই তথ্য ফাঁস হওয়ার পর আমেরিকা ইরানের সাথে হওয়া পারমাণবিক চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়।
বিজ্ঞানী হত্যা: ২০২০ সালে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ একটি গোপন অভিযানের মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির প্রধান বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে হত্যা করে, যার পর ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আবারও থেমে যায়। যদিও ইসরায়েল ২০২১ সালে ফাখরিজাদেহকে হত্যার কথা স্বীকার করে।