ইরানের ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম কোথায় গেল? মার্কিন হামলার পর প্রশ্ন উঠছে, কারো কাছেই নেই কোনো উত্তর

সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে বিশ্বজুড়ে মূলধারার গণমাধ্যমে একটি প্রশ্ন বারবার জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। একদিকে আমেরিকা ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করার দাবি করছে। অন্যদিকে, ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, মাঝরাতে আমেরিকা যে হামলা চালিয়েছে, তা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে এবং যখন এই হামলা চালানো হয়েছিল, তখন ইরানের ফোর্দো সাইটে কোনো পারমাণবিক উপাদান ছিল না। এখন প্রশ্ন হলো, এই পারমাণবিক স্থাপনায় থাকা প্রায় ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম কোথায় গেল? চলুন একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে আপনাকে বিষয়টি বোঝাই।

ইরানের ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম কোথায় গেল?
এই প্রশ্নের উত্তর আমেরিকা বা ইসরায়েলের কারো কাছেই নেই। উভয় দেশই একই মুখস্থ উত্তর দিচ্ছে যে, ইরানের পারমাণবিক সাইটগুলোতে ৭৮,০০০ কেজি বোমা বর্ষণ করা হয়েছে, যার ফলে ইরানের তিনটি পারমাণবিক সাইট ধ্বংস হয়ে গেছে।

আমেরিকার বাগাড়ম্বরপূর্ণ রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প যে দাবি করেছেন, একই দাবি মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রক পেন্টাগনও করেছে। এই দাবিগুলো থেকে ভিন্ন একটি দাবি ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনও করেছে এবং জানিয়েছে যে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কোনো ক্ষতি হয়নি। ইরান রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন তাদের দাবির সমর্থনে একটি যুক্তিও দিয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে যে, ফোর্দো পারমাণবিক সাইটগুলোতে নিক্ষেপ করা GBU-57 বোমা মাত্র ২০ ফুট গভীর বাঙ্কার ভাঙতে পারে। অথচ ফোর্দো পারমাণবিক সাইটটি ৩০ ফুটেরও বেশি পুরু এবং গভীর।

ইউরেনিয়াম কি আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল?
ইরান বলছে যে, আমেরিকার হামলায় পারমাণবিক কেন্দ্রের অবশ্যই ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু পারমাণবিক কর্মসূচির নয়। হামলার আগেই ফোর্দো পারমাণবিক প্ল্যান্ট থেকে বেশিরভাগ উচ্চ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরিয়ে গোপন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন যে দাবি করেছে, ঠিক তেমনই দাবি পুতিনের সহযোগী দিমিত্রি মেদভেদেভও করেছেন। তিনি তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট এক্স-এ লিখেছেন, “ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি থামেনি। এখন স্পষ্টভাবে বলা যায় যে, ভবিষ্যতে পারমাণবিক অস্ত্রের উৎপাদন অব্যাহত থাকবে। ফোর্দোতে ৮৩.৭% পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে, যা পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় ৯০%-এর কাছাকাছি।”

দাবি করা হচ্ছে যে, আমেরিকা বি-২ স্টেলথ বোম্বার দিয়ে ইরানের ফোর্দো এনরিচমেন্ট প্ল্যান্টে বাঙ্কার বাস্টার বোমা নিক্ষেপ করেছে। নাতাঞ্জ অ্যাটমিক ফেসিলিটি সেন্টারে GBU-57 বোমা এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইসফাহান পারমাণবিক প্রযুক্তি সেন্টারে টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা করা হয়েছে।

রেডিয়েশন বাড়েনি
হামলার পরপরই আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) বিবৃতি জারি করে। যেখানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, ইরানের পারমাণবিক সাইটগুলোর কাছাকাছি অফ-সাইট রেডিয়েশনের মাত্রায় কোনো বৃদ্ধি হয়নি। এর পর বিশ্বজুড়ে বুদ্ধিজীবীরা হামলার সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন। কেউ কেউ তো এ পর্যন্ত বলেছেন যে, ইরানের পারমাণবিক সাইটগুলোতে কিছুই ছিল না, তা আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

বলা হয় যে, ইরানের ইসফাহান পারমাণবিক প্রযুক্তি কেন্দ্রে ইউরেনিয়াম রূপান্তর করা হতো অর্থাৎ কাঁচামাল থেকে ইউরেনিয়াম নিষ্কাশন করা হতো। অন্যদিকে, নাতাঞ্জ পারমাণবিক সাইটে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ হতো। এছাড়াও, ফোর্দোতে পারমাণবিক জ্বালানি বিশুদ্ধ করা হতো।

ইরানে ৫টি পারমাণবিক সাইট
জানা যায় যে, ইরানের প্রধানত ৬টি পারমাণবিক সাইট রয়েছে। যার মধ্যে ৫টিতে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে। ইরানের একটি পারমাণবিক সাইটে রাশিয়ার প্রায় ২০০ জন লোকও কাজ করেন। দাবি করা হচ্ছে যে, এখানে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী কাজ হয়। রাশিয়া ইতিমধ্যেই সতর্ক করে দিয়েছে যে, যদি এই জায়গায় হামলা হয়, তাহলে গুরুতর পরিণতি ভোগ করতে হবে। তাই আমেরিকা এবং ইসরায়েল এখান থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *