‘কাশ্মীর নিয়ে কিছু বলবেন না’, পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়া ৫৭টি দেশকে ভারতের কড়া বার্তা

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (OIC) এর দুই দিনের বৈঠক আবারও পাকিস্তানের পক্ষপাতদুষ্ট কূটনীতির মঞ্চ হয়ে উঠেছে। ৫৭টি মুসলিম দেশের সংগঠন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের পরিষদ (CFM) তাদের যৌথ বিবৃতিতে একদিকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু জল চুক্তি (IWT) চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে, অন্যদিকে ভারতের সামরিক অভিযান এবং কাশ্মীর নীতি নিয়ে একতরফা মন্তব্যও করেছে।
ওআইসি তাদের যৌথ বিবৃতিতে স্পষ্ট করেছে যে, তারা পাকিস্তানের অবস্থানকে সম্পূর্ণ সমর্থন করে এবং ভারতের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সংযম আশা করে।
OIC বলেছে যে, ভারত-পাকিস্তান সিন্ধু চুক্তি ‘ভাঙ্গা’ উচিত নয়
বৈঠকের পর জারি করা আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ওআইসি স্পষ্টভাবে বলেছে যে, ১৯৬০ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত সিন্ধু জল চুক্তি উভয় পক্ষ দ্বারা কঠোরভাবে মেনে চলা উচিত। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই ঐতিহাসিক চুক্তি কোনো অবস্থাতেই ভাঙ্গা উচিত নয়। উভয় পক্ষের এটি বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখা উচিত।” এই মন্তব্য এমন সময়ে এসেছে যখন ২২শে এপ্রিল পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত সিন্ধু চুক্তি নিয়ে তাদের অবস্থান কঠোর করেছে এবং পাকিস্তানের জল বন্ধ করে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। পাকিস্তান এর তীব্র আপত্তি জানিয়েছে এবং যুদ্ধের হুমকি দিয়েছে। উভয় দেশ এই ইস্যুতে তিন মাস ধরে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।
OIC ভারতের বিরুদ্ধে সামরিক বৃদ্ধির অভিযোগ এনেছে
ওআইসি-এর সিএফএম এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান সামরিক কর্মকাণ্ড নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। পাকিস্তানে ভারত কর্তৃক চালানো অনেক সামরিক হামলা আঞ্চলিক অস্থিরতা বাড়াতে পারে।” ওআইসি উভয় পক্ষকে উস্কানিমূলক পদক্ষেপ এড়াতে এবং সর্বোচ্চ সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে। এটি স্পষ্টভাবে ভারতের জন্য একটি ইঙ্গিত, কারণ পাকিস্তান ওআইসি-এর স্থায়ী সদস্য এবং দীর্ঘকাল ধরে এটি ভারতের বিরুদ্ধে একটি কূটনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।
কাশ্মীর নিয়েও পাকিস্তানের সুরে সুর মিলিয়েছে
এই ওআইসি বৈঠকে ভারতের জন্য আরেকটি উদ্বেগের বিষয় ছিল যে, সংগঠনটি কাশ্মীর ইস্যুতেও পাকিস্তানের অবস্থান পুরোপুরি পুনরাবৃত্তি করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনা, ওআইসি-এর অবস্থান এবং কাশ্মীরি জনগণের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতি রেখে কাশ্মীরি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে সমর্থন করি।” এই বিবৃতি ভারতের সেই নীতির বিরুদ্ধে যা কাশ্মীরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে এবং কোনো তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতাকে প্রত্যাখ্যান করে।
তুরস্কে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে, পাক সেনা প্রধানও উপস্থিত ছিলেন
ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার এই বৈঠকটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল কারণ পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার (Ishaq Dar) এর সাথে পাক সেনা প্রধান জেনারেল আসিফ মুনিবও (Asim Munir) তুরস্কে এসেছিলেন।
মুনিব সেখানে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইপ এরদোয়ানের (Recep Tayyip Erdoğan) সাথে দেখা করেন, যাকে বৈঠকের আনুষ্ঠানিক এজেন্ডা থেকে ভিন্ন একটি কৌশলগত পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে যে, এই বৈঠকের প্রভাব ওআইসি-এর চূড়ান্ত বিবৃতির ভাষার উপর পড়েছে, যেখানে ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছে।
ভারতের জন্য ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ
ওআইসি-এর এই সর্বশেষ অবস্থান ভারতের জন্য কূটনৈতিকভাবে অস্বস্তিকর। একদিকে ভারত আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেকে বৈশ্বিক নেতা এবং উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে উপস্থাপন করছে, অন্যদিকে ওআইসি-এর মতো সংগঠনগুলোতে পাকিস্তানের ক্রমাগত পক্ষপাতদুষ্ট তদবিরের কারণে তাকে বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সিন্ধু জল চুক্তির মতো পুরোনো এবং স্থিতিশীল চুক্তিগুলোকেও এখন ভূ-রাজনৈতিক সংঘাতের কেন্দ্রে আনা হচ্ছে, যার ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় অস্থিরতা আরও গভীর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।