মহাবিশ্বের প্রথম ঝলক! বিশ্বের বৃহত্তম ডিজিটাল ক্যামেরায় ধরা পড়ল বিস্ময়কর ছবি

মহাবিশ্বের প্রথম ঝলক! বিশ্বের বৃহত্তম ডিজিটাল ক্যামেরায় ধরা পড়ল বিস্ময়কর ছবি

২৩শে জুন ২০২৫ তারিখে বিশ্বের বৃহত্তম ডিজিটাল ক্যামেরা মহাবিশ্বের প্রথম ছবিগুলো প্রকাশ করেছে, যেখানে রঙিন নীহারিকা, তারা এবং গ্যালাক্সিগুলো অন্তর্ভুক্ত। এই ক্যামেরাটি ভেরা সি. রুবিন অবজারভেটরিতে (Vera C. Rubin Observatory) স্থাপিত, যা চিলির একটি পাহাড়ে অবস্থিত। এটি আমেরিকান ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন (National Science Foundation) এবং ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ এনার্জি-র (US Department of Energy) তহবিল দ্বারা নির্মিত এবং আগামী ১০ বছর ধরে দক্ষিণ আকাশের অধ্যয়ন করবে। এর প্রথম ছবিগুলোতে ট্রাইফিড (Trifid) এবং ল্যাগুন নীহারিকা (Lagoon Nebula) সহ ভার্গো ক্লাস্টারের (Virgo Cluster) গ্যালাক্সিগুলো দেখা গেছে। এই অবজারভেটরির লক্ষ্য হলো ২০ বিলিয়ন গ্যালাক্সির ছবি তোলা এবং নতুন গ্রহাণু ও অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তুর আবিষ্কার করা। ভেরা সি. রুবিন অবজারভেটরি চিলির সেরো পাচোন (Cerro Pachón) পাহাড়ে নির্মিত হয়েছে, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,৬৮২ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এই স্থানটি রাতের আকাশ দেখার জন্য আদর্শ, কারণ এখানে বায়ুমণ্ডলীয় হস্তক্ষেপ কম হয়। অবজারভেটরির প্রধান অংশ হলো এর লিগ্যাসি সার্ভে অফ স্পেস অ্যান্ড টাইম (Legacy Survey of Space and Time – LSST) ক্যামেরা, যা এখন পর্যন্ত বিশ্বের বৃহত্তম ডিজিটাল ক্যামেরা। এই ক্যামেরাটি তৈরি করতে ২০ বছর লেগেছে এবং এর খরচ প্রায় ৪০০০ কোটি টাকা।

এই অবজারভেটরি ভেরা রুবিনের (Vera Rubin) নামে নামকরণ করা হয়েছে, যিনি ১৯৭০-এর দশকে ডার্ক ম্যাটারের (Dark Matter) প্রথম প্রমাণ দিয়েছিলেন। ডার্ক ম্যাটার একটি রহস্যময় পদার্থ, যা মহাবিশ্বের প্রায় ২৭% অংশ তৈরি করে, কিন্তু এটি অদৃশ্য। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন যে, এই ক্যামেরা ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জির (Dark Energy – মহাবিশ্বের ৬৮% অংশ) রহস্য উন্মোচনে সাহায্য করবে। LSST ক্যামেরার প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্যগুলো এটিকে বিশেষ করে তোলে। এটি এত শক্তিশালী যে এটি চাঁদের ওপর একটি গল্ফ বলও দেখতে পারে। এর রেজোলিউশন ৩.২ গিগাপিক্সেল (৩২০০ মেগাপিক্সেল), যা সাধারণ স্মার্টফোন ক্যামেরার (১২-৪৮ মেগাপিক্সেল) চেয়ে হাজার হাজার গুণ ভালো। এটি প্রতিটি ছবিতে ১৫ মেগাবাইট ডেটা ক্যাপচার করে, যা প্রতি রাতে ২০ টেরাবাইট ডেটা তৈরি করে। ক্যামেরায় ৫.১ ফুট প্রশস্ত প্রাইমারি মিরর এবং ৩.৪ ফুট সেকেন্ডারি মিরর আছে। এতে ১৮৯টি চার্জ-কাপলড ডিভাইস (CCD) সেন্সর আছে, যা উচ্চ রেজোলিউশন এবং সংবেদনশীলতা প্রদান করে। নাসার (NASA) মতে, এই ক্যামেরা ৭টি রঙে (ব্যান্ডস) ছবি তুলতে পারে, যা মহাজাগতিক বস্তুর রঙ এবং কাঠামো নির্দেশ করে। এর দৃশ্য ক্ষেত্র (Field of View) এতটাই প্রশস্ত যে এটি একবারে ৯.৬ বর্গ ডিগ্রি আকাশকে কভার করে, যা ৪০টি পূর্ণ চাঁদের সমান। এটি প্রতি তিন রাতে পুরো দক্ষিণ আকাশ স্ক্যান করতে পারে এবং AI ও মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে ডেটা বিশ্লেষণ করে। ১০ বছরে এটি ১৫ পেটাবাইট ডেটা সংগ্রহ করবে, যা লক্ষ লক্ষ ঘণ্টার ভিডিওর সমতুল্য।

এক ঝলক ডেস্ক
  • এক ঝলক ডেস্ক

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *