উৎক্ষেপণ থেকে ফেরা পর্যন্ত, ১৪ দিনের মহাকাশ যাত্রায় শুভাংশু শুক্লা কী করবেন? জেনে নিন

ভারতের গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা সহ চারজন নভোচারীকে নিয়ে অ্যাক্সিওম-৪ (Axiom-4) মিশন আজ দুপুর ১২:০১ টায়(IST) নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার (Kennedy Space Center) থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এই মিশনটি চারজন নভোচারীকে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (International Space Station – ISS)-এর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই মিশনে ভারতের শুভাংশু শুক্লা, এন ম্যাকক্লেইন (Ann McClain), নিকোল আয়ার্স (Nicole Ayers) এবং পেগি হুইটসন (Peggy Whitson) অন্তর্ভুক্ত আছেন। এই চারজন নভোচারী লো-আর্থ অরবিটে (low-Earth orbit) যাবেন এবং ISS-এর হারমোনি মডিউলের (Harmony module) স্পেস ফেসিং পোর্টে (space-facing port) ডক করবেন। ডকিং বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৪:৩০টায় (IST) হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর অর্থ হলো, উৎক্ষেপণ থেকে ডকিং পর্যন্ত যাত্রা প্রায় ২৮.৫ থেকে ২৯ ঘণ্টা সময় নেবে। এরপর ক্রুরা প্রায় দুই সপ্তাহ ISS-এ থেকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং শিক্ষা-সম্পর্কিত কার্যক্রমে অংশ নেবেন।
এই মিশনের সূচনা ফ্লোরিডায় অবস্থিত নাসার লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯এ (Launch Complex 39A) থেকে হয়েছে। এটি সেই স্থান, যেখান থেকে নীল আর্মস্ট্রং (Neil Armstrong) চাঁদ মিশনের জন্য উড়ে গিয়েছিলেন। অ্যাক্সিওম-৪ এর সকল যাত্রী বিশেষ স্পেস স্যুট (space suit) পরিধান করে লঞ্চ প্যাডে (launch pad) পৌঁছান এবং ড্রাগন ক্যাপসুল সি২১৩-তে (Dragon capsule C213) আরোহণ করেন। উৎক্ষেপণের আগে তারা স্পেসএক্স (SpaceX) এবং নাসা (NASA) টিমের সাথে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। অ্যাক্সিওম-৪ মিশন উৎক্ষেপণের প্রায় ৩৫ মিনিট আগে লঞ্চ ডিরেক্টর রকেটে জ্বালানি ভরার অনুমতি দেন। এর আগে, সকল ক্রু সদস্যের জন্য ইমার্জেন্সি এস্কেপ সিস্টেম (emergency escape system) সক্রিয় করা হয়েছিল, যা যেকোনো জরুরি অবস্থায় তাদের নিরাপদে বের করে আনতে পারে। এরপর ফ্যালকন-৯ (Falcon-9) রকেটে সুপারকুলড লিকুইড অক্সিজেন (supercooled liquid oxygen) এবং আরপি-১ কেরোসিন (RP-1 kerosene) জ্বালানি ভরা হয়। উৎক্ষেপণের প্রায় ৫ মিনিট আগে ড্রাগন ক্যাপসুল ইন্টারনাল পাওয়ার মোডে (internal power mode) স্থানান্তরিত হয়। ফ্যালকন-৯ রকেট নির্ধারিত সময়ে উড়ে যায়। অ্যাক্সিওম-৪ মিশনের উৎক্ষেপণের সময় ফ্যালকন-৯ রকেটের ইঞ্জিন চালু হয় এবং মহাকাশযানটিকে আকাশের দিকে নিয়ে যায়। উৎক্ষেপণের ৫৭তম সেকেন্ডে ‘ম্যাক্স কিউ’ (Max Q) নামক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তটি আসে, যখন মহাকাশযানের উপর সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে। মহাকাশযানটি মহাকাশের দিকে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে ক্রুরা দ্রুত মহাকর্ষীয় শক্তির প্রভাব অনুভব করতে শুরু করেন। এই মহাকাশযানটি ২৭,০০০ কিমি প্রতি ঘণ্টা গতিতে উড়ছে এবং প্রতি ৯০ মিনিটে পৃথিবীর একটি চক্কর সম্পূর্ণ করছে। অ্যাক্সিওম-৪ টিম এখন ISS-এ তাদের দুই সপ্তাহের বৈজ্ঞানিক মিশন শুরু করবে, যার মধ্যে ডায়াবেটিস-সম্পর্কিত গবেষণা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ভারতসহ বিশ্বজুড়ে মানুষ তাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে এবং এই মিশনের সাফল্য কামনা করছে।
১৪ দিনের মহাকাশ যাত্রায় শুভাংশু শুক্লা এবং তার দল কী করবেন?
এই ১৪ দিনের মহাকাশ যাত্রায় শুভাংশু শুক্লা এবং তার দল ভারতীয় সুপারফুড (superfood) যেমন মুগ ডাল ও মেথি, আলগি (স্পিরুলিনা) এবং অণুজীব (microorganisms) নিয়ে গবেষণা করবেন। এই সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ভারতের বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন। এর পাশাপাশি, শুক্লা মানবদেহের ওপর মহাকাশের প্রভাব নিয়েও গবেষণা করবেন। তিনি তার সঙ্গে ‘জয়’ (Joy) নামের একটি সাদা হাঁসের মতো খেলনাও নিয়ে গেছেন, যা সেখানে শূন্য মহাকর্ষের পরিবেশ দেখাতে সাহায্য করবে। তিনি এই মিশনের সময় ছাত্রছাত্রী এবং সাধারণ মানুষের সাথে যোগাযোগের জন্য আলোচনাতেও অংশ নেবেন।