শুভাংশু শুক্লার ৭টি গুরুত্বপূর্ণ মহাকাশ পরীক্ষা

শুভাংশু শুক্লার ৭টি গুরুত্বপূর্ণ মহাকাশ পরীক্ষা

১. পেশীর ওপর মাইক্রোগ্র্যাভিটির প্রভাব নিয়ে গবেষণা:

মহাকাশে শূন্য অভিকর্ষ (মাইক্রোগ্র্যাভিটি) মানুষের শরীরের উপর, বিশেষ করে পেশীর উপর গভীর প্রভাব ফেলে। মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস প্রায় সাড়ে নয় মাস মহাকাশে থাকার পর যখন ফিরে আসেন, তখন তার পা ও পিঠের পেশী বেশ দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। ভারতের ইনস্টিটিউট অফ স্টেম সেল সায়েন্স অ্যান্ড রিজেনারেটিভ মেডিসিন (Institute of Stem Cell Science and Regenerative Medicine) এই মাইক্রোগ্র্যাভিটি সংক্রান্ত পরীক্ষার মাধ্যমে পেশী সম্পর্কিত রোগগুলোর আরও অধ্যয়ন করবে এবং এমন চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি করতে পারবে যা ভবিষ্যতে মহাকাশচারী ও বয়স্কদের জন্য খুবই কার্যকর হবে। শুভাংশু শুক্লা এই বিষয়ে অধ্যয়ন করবেন যে মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে পেশীর কার্যকারিতা কীভাবে পরিবর্তিত হয় এবং সেগুলোকে শক্তিশালী রাখতে কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

২. ফসলের বীজের সাথে সম্পর্কিত গবেষণা:

এই পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো মাইক্রোগ্র্যাভিটি পরিবেশে বিভিন্ন ফসলের বীজের অঙ্কুরোদগম এবং প্রাথমিক বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করা। মহাকাশে খাদ্য উৎপাদন ভবিষ্যতের চন্দ্র ও মঙ্গল মিশনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। এই গবেষণা আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে যে কোন বীজ মহাকাশের কঠোর পরিস্থিতিতে ভালো ফল করতে পারে এবং কীভাবে আমরা মহাকাশে স্বাবলম্বী খাদ্য ব্যবস্থা তৈরি করতে পারি।

৩. ক্ষুদ্র জীব টার্ডিগ্রেডস (Tardigrades) নিয়ে গবেষণা:

টার্ডিগ্রেডস, যাদেরকে “জল ভালুক”ও বলা হয়, তাদের অবিশ্বাস্য সহনশীলতার জন্য পরিচিত। আট পায়ের এই টার্ডিগ্রেডসকে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন এবং সহনশীল জীব হিসাবে ধরা হয়। এরা পৃথিবীতে ৬০ কোটি বছর ধরে, অর্থাৎ ডাইনোসরদের থেকেও প্রায় ৪০ কোটি বছর আগে থেকে বাস করছে। এরা বছরের পর বছর না খেয়েও বাঁচতে পারে। ভয়ানক গরম এমনকি বিকিরণ এবং শূন্যস্থানেও বেঁচে থাকতে পারে। শুভাংশু শুক্লা এই জীবগুলোর উপর মাইক্রোগ্র্যাভিটির প্রভাব অধ্যয়ন করবেন, যা আমাদের জীবনের চরম অভিযোজন ক্ষমতা সম্পর্কে আরও জানতে সাহায্য করবে।

৪. অণুশৈবালের (Microalgae) ওপর মাইক্রোগ্র্যাভিটির প্রভাব নিয়ে গবেষণা:

অণুশৈবাল এককোষী শৈবাল। এরা মিষ্টি জল এবং সামুদ্রিক উভয় পরিবেশেই পাওয়া যায়। এই মিশনের অধীনে তিন ধরনের অণুশৈবাল মহাকাশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে এদের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করে দেখা হবে যে ভবিষ্যতের দীর্ঘ মিশনে মহাকাশচারীদের পুষ্টিতে এদের ভূমিকা থাকতে পারে কিনা। গাছের মতো সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে এরা শুধু অক্সিজেনই তৈরি করে না, খাদ্য এবং জৈব-জ্বালানির উৎস হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। এই পরীক্ষায় মহাকাশে এই শৈবালগুলোর বৃদ্ধি এবং বিপাক অধ্যয়ন করা হবে, যা ভবিষ্যতের জীবন সমর্থন ব্যবস্থা এবং মহাকাশে সম্পদ উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

৫. মুগ ও মেথি বীজের ওপর গবেষণা:

মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে বীজের অঙ্কুরোদগমের প্রক্রিয়া অধ্যয়ন করা হবে। এর ভিত্তিতে দেখা হবে যে ভবিষ্যতে এদের কীভাবে মহাকাশে চাহিদা মেটানোর জন্য ফলানো যেতে পারে। এই বীজ থেকে উৎপন্ন গাছগুলোকে পৃথিবীতে পরবর্তীতে বিভিন্ন চক্রে আবার ফলানো হবে। অর্থাৎ, তাদের থেকে উৎপন্ন বীজগুলোকে অঙ্কুরিত করে নতুন গাছ তৈরি করা হবে। দেখা হবে যে এই বীজগুলোর জেনেটিক্স এবং মাইক্রোবিয়াল লোডে কী প্রভাব পড়ে। এছাড়াও, মুগ ও মেথি বীজের পুষ্টি ক্ষমতায় আসা পরিবর্তনেরও অধ্যয়ন করা হবে।

৬. ব্যাকটেরিয়ার দুটি প্রজাতি নিয়ে গবেষণা:

এই পরীক্ষা মহাকাশে অণুজীবের আচরণ অধ্যয়ন করবে। ব্যাকটেরিয়া মহাকাশযান এবং মহাকাশচারী উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই গবেষণা আমাদের জানতে সাহায্য করবে যে মাইক্রোগ্র্যাভিটি ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলে।

৭. কম্পিউটার স্ক্রিনের চোখের ওপর প্রভাব:

আধুনিক জীবনে কম্পিউটার স্ক্রিনের ব্যবহার সাধারণ, কিন্তু মহাকাশে দীর্ঘ সময় স্ক্রিন দেখার ফলে চোখের উপর কী প্রভাব পড়ে? এই পরীক্ষা মহাকাশচারীদের চোখের উপর কম্পিউটার স্ক্রিন ব্যবহারের প্রভাব অধ্যয়ন করবে, যাতে ভবিষ্যতে মহাকাশ মিশনগুলোর জন্য উন্নত নির্দেশিকা এবং সরঞ্জাম তৈরি করা যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *