সহকর্মীদের আলিঙ্গন, পানীয়ের স্বাদ গ্রহণ…’ ISS-এর দরজা খোলার পর কী ঘটল? দেখুন ঐতিহাসিক মুহূর্তের ভিডিও

সহকর্মীদের আলিঙ্গন, পানীয়ের স্বাদ গ্রহণ…’ ISS-এর দরজা খোলার পর কী ঘটল? দেখুন ঐতিহাসিক মুহূর্তের ভিডিও

ভারতীয় নভোচারী শুভ্রাংশু শুক্লাসহ (Shubhanshu Shukla) চারজন নভোচারী আজ (বৃহস্পতিবার) প্রায় ২৮ ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রা শেষে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (ISS) পৌঁছেছেন। তাদের মহাকাশযান ‘ড্রাগন’ স্পেস স্টেশনে ডকিং করার প্রায় ১ ঘণ্টা পর চারজন নভোচারী স্টেশনের ভেতরে প্রবেশ করেন। সেখানে উপস্থিত অন্য নভোচারীরা উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান তাদের।

আইএসএস-এ উষ্ণ অভ্যর্থনা এবং পানীয় উপভোগ
স্পেস স্টেশনের দরজা খোলার পর শুভ্রাংশুসহ অন্যান্য চারজন নভোচারীকে স্বাগত জানানো হয়। স্টেশনে আগে থেকেই উপস্থিত নভোচারীরা তাদের আলিঙ্গন করেন এবং শুভেচ্ছা জানান। এরপর চারজন পানীয় উপভোগ করেন। এরপর তারা সহকর্মী নভোচারীদের সঙ্গে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন। এই মুহূর্তগুলোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এবং এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

আইএসএস-এ পৌঁছানো দ্বিতীয় ভারতীয় শুভ্রাংশু
শুভ্রাংশু আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পা রাখা দ্বিতীয় ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ইতিহাস গড়েছেন। এর আগে ১৯৮৪ সালে রাকেশ শর্মা সোভিয়েত ইউনিয়নের স্যালুট-৭ স্পেস স্টেশনে আট দিন ছিলেন। শুভ্রাংশুর এই যাত্রা আমেরিকার বেসরকারি মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্স (SpaceX) দ্বারা পরিচালিত একটি চার্টার্ড মিশনের অধীনে সম্পন্ন হয়েছে।

শুভ্রাংশু শুক্লা ১৪ দিন মহাকাশে থাকবেন। এই সময়ে তিনি সাতটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা চালাবেন। এই পরীক্ষাগুলো ভারতের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এগিয়ে নেওয়া হয়েছে।

মহাকাশে শুভ্রাংশুর সাতটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা
১. মায়োজেনেসিসের গবেষণা: মহাকাশে মাইক্রোগ্র্যাভিটির কারণে পেশীর উপর কী প্রভাব পড়ে, তা অধ্যয়ন করা হবে। মহাকাশে দীর্ঘ সময় কাটানো নভোচারীদের পেশী ক্ষয় হতে থাকে এবং দুর্বল হয়ে পড়ে, যেমনটা সুনীতা উইলিয়ামসের ক্ষেত্রেও হয়েছিল। ভারতের ইনস্টিটিউট অফ স্টেম সেল সায়েন্স অ্যান্ড রিজেনারেটিভ মেডিসিন (Institute of Stem Cell Science and Regenerative Medicine) এই মাইক্রোগ্র্যাভিটি পরীক্ষার মাধ্যমে পেশী-সম্পর্কিত রোগগুলির আরও অধ্যয়ন করবে এবং এমন চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে, যা ভবিষ্যতের নভোচারীদের জন্য অত্যন্ত কার্যকর হবে।

২. ফসলের বীজের উপর গবেষণা: মাইক্রোগ্র্যাভিটি বীজের জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের উপর কী প্রভাব ফেলে, তা পরীক্ষা করা হবে।

৩. টার্ডিগ্রেডস নিয়ে পরীক্ষা: আধ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট জীব টার্ডিগ্রেডস (Tardigrades) নিয়ে গবেষণা করা হবে। শুভ্রাংশু অধ্যয়ন করবেন যে মহাকাশে এই ছোট জীবের শরীরের উপর কী প্রভাব পড়ে। টার্ডিগ্রেডসকে বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর এবং সহনশীল জীব হিসাবে ধরা হয়, যা পৃথিবীতে ৬০ কোটি বছর ধরে টিকে আছে।

৪. মাইক্রোঅ্যালগির উপর গবেষণা: মাইক্রোঅ্যালগি বা সূক্ষ্ম শৈবালের উপর গবেষণা করা হবে। মাইক্রোগ্র্যাভিটি মাইক্রোঅ্যালগির উপর কী প্রভাব ফেলে, তা পরীক্ষা করা হবে। এগুলি মিঠা জল এবং সামুদ্রিক উভয় পরিবেশে পাওয়া যায়। এটি খুঁজে বের করা হবে যে ভবিষ্যতের দীর্ঘ মিশনে নভোচারীদের পুষ্টিতে এদের ভূমিকা থাকতে পারে কিনা।

৫. মুগ এবং মেথি বীজের অঙ্কুরোদগম: শুভ্রাংশু শুক্লা মুগ এবং মেথি বীজের উপরও গবেষণা করবেন। মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে বীজের অঙ্কুরোদগমের প্রক্রিয়া অধ্যয়ন করা হবে। এই গবেষণার উদ্দেশ্য হলো, ভবিষ্যতে যদি মহাকাশে বীজ অঙ্কুরিত করার প্রয়োজন হয়, তাহলে তা সম্ভব কিনা।

৬. ব্যাকটেরিয়ার দুটি প্রজাতির উপর গবেষণা: স্পেস স্টেশনে ব্যাকটেরিয়ার দুটি প্রজাতির উপর গবেষণা করা হবে।

৭. কম্পিউটার স্ক্রিনের প্রভাব: মহাকাশে মাইক্রোগ্র্যাভিটির পরিস্থিতিতে কম্পিউটার স্ক্রিন চোখের উপর কেমন প্রভাব ফেলে, শুভ্রাংশু তার উপর গবেষণা করবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *