ন্যাটোর সদস্যপদ নিয়ে ইউক্রেনের জেদ, কেন ক্ষিপ্ত রাশিয়া?

ন্যাটোর সদস্যপদ নিয়ে ইউক্রেনের জেদ, কেন ক্ষিপ্ত রাশিয়া?

যখন পশ্চিম এশিয়ায় ইরান, ইসরায়েল এবং আমেরিকার মধ্যে ভূকম্পন শান্ত হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, তখনও বিশ্বের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে তিন বছর ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘাত। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং বৈশ্বিক চাপ সত্ত্বেও রাশিয়া পিছু হটেনি, আর ইউক্রেনও অস্ত্র ত্যাগের ইঙ্গিত দেয়নি। এর ফলস্বরূপ দেখা যাচ্ছে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ, হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি এবং পারমাণবিক হামলার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি, যা পুরো বিশ্বকে নাড়িয়ে দিতে পারে।

এই দীর্ঘ সংঘাতের গভীরতম কারণ হলো ইউক্রেনের নর্থ অ্যাটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (NATO)-এ যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা। ইউক্রেন বহুবার ন্যাটোর সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করেছে, অথচ রাশিয়া এটিকে তার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি বলে মনে করে। এই টানাপোড়েনই ধীরে ধীরে যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। যদি ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হয়, তাহলে আমেরিকান এবং ন্যাটো সেনাদের সরাসরি রাশিয়ার সীমান্তে প্রবেশাধিকার হয়ে যাবে, যা রাশিয়ার জন্য অসহনীয়। রাশিয়া মনে করে, এর ফলে শুধু তাদের সীমান্তই অরক্ষিত হবে না, বরং আমেরিকা রাশিয়ার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি এবং সামরিক চাপ বাড়ানোর সরাসরি পথ পেয়ে যাবে।

কেন ন্যাটোর সদস্যপদ রাশিয়ার জন্য এত বড় উদ্বেগের কারণ?
১৯৫০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্রমবর্ধমান হুমকির জবাবে ন্যাটো গঠিত হয়েছিল। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল, যদি রাশিয়া কোনো ন্যাটো সদস্য দেশে আক্রমণ করে, তাহলে সব ন্যাটো দেশ সম্মিলিতভাবে সামরিকভাবে এর জবাব দেবে। আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং কানাডা এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিল। বর্তমানে ন্যাটোর ৩২টি সদস্য রাষ্ট্র রয়েছে। ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে, বিশেষ করে খেরসন, লুহানস্ক, ডোনেৎস্ক এবং জেপোরোজিয়া-এর মতো সংবেদনশীল অঞ্চলগুলিতে ন্যাটোর সামরিক উপস্থিতি রাশিয়ার জন্য অসহনীয় হতে পারে। রাশিয়ার মতে, এর ফলে শুধু তাদের সীমান্তই অরক্ষিত হবে না, বরং আমেরিকা রাশিয়ার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি এবং সামরিক চাপ বাড়ানোর সরাসরি পথ পেয়ে যাবে। রাশিয়ার স্পষ্ট বিরোধিতা সত্ত্বেও ইউক্রেন বারবার ন্যাটোর সদস্যতার জন্য আবেদন করে চলেছে। ইউক্রেনের এই প্রচেষ্টা আমেরিকা এবং ইউরোপীয় দেশগুলির সহযোগিতায় আরও শক্তিশালী হচ্ছে। এই জেদ এবং নিরাপত্তা উদ্বেগের সংঘাতই আজকের এই ভয়াবহ যুদ্ধের জন্ম দিয়েছে। এই সংঘাতের ফলে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি ক্রমাগত বাড়ছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে অনেকবার পরোক্ষভাবে পারমাণবিক বিকল্পের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, যা বৈশ্বিক উত্তেজনা এবং ভয়কে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদ রাশিয়ার জন্য কেবল একটি কূটনৈতিক উদ্বেগ নয়, বরং একটি গভীর নিরাপত্তা সংকট।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *