ভারত-পাকিস্তানকে ট্রাম্পের হুমকি: ‘লড়াই না ছাড়লে ব্যবসা করব না’, ভারতের ওপর কী প্রভাব পড়বে?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত ও পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ভারতের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) নিয়ে তিনি বলেছেন, “আমরা ভারতকে বলতে যাচ্ছি যে আমেরিকার সাথে ব্যবসা করার জন্য তাদের কী করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন যে, ভারতের সাথে আমেরিকা এমন একটি চুক্তি করবে যেখানে উভয় দেশই ব্যবসা করার সুযোগ পাবে। ভারতের সাথে বাণিজ্য চুক্তি করার ক্ষেত্রে যে বাধাগুলি আসছে বা আসবে, সেগুলি দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে, “কিন্তু জানি না এটা হবে কিনা।” তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে, “যদি ভারত ও পাকিস্তান লড়াই করে, একে অপরের ওপর পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা বলে, তাহলে আমেরিকা তাদের সাথে ব্যবসা করবে না।” ট্রাম্পের দাবি, “ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধ আমেরিকা শেষ করিয়েছে। যদি তারা লড়াই না ছাড়ে, তাহলে আমেরিকা তাদের সাথে ব্যবসা করবে না।”
ভারত-আমেরিকার মধ্যে কী আমদানি-রপ্তানি হয়?
আমদানি: ভারত আমেরিকা থেকে তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্য কেনে, যা ভারতের জ্বালানি চাহিদা পূরণ করে। আমেরিকা থেকে আমদানি করা পণ্যের মধ্যে অপরিশোধিত তেল, পেট্রোলিয়াম পণ্য এবং তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) অন্তর্ভুক্ত।
রপ্তানি: ২০২৪ সালে ভারত আমেরিকাকে ৭৩৪৬টি পণ্য বিক্রি করেছে। সেই বছর ভারত ও আমেরিকার মধ্যে ৭৭.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি হয়েছিল। আমেরিকা ভারত থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, ইলেকট্রনিক পণ্য, রত্ন-গহনা, ড্রাগস ও ফার্মাসিউটিক্যালস, পেট্রোলিয়াম পণ্য, আরএমজি (RMG) তুলা রপ্তানি করেছে।
আমেরিকা ব্যবসা বন্ধ করলে কী প্রভাব পড়বে?
যদি আমেরিকা ভারতের সাথে ব্যবসা বন্ধ করে, তাহলে ভারতের ওপর এর বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে:
অর্থনৈতিক ক্ষতি ও বেকারত্ব: ভারত আমেরিকাকে সফটওয়্যার পরিষেবা, ফার্মাসিউটিক্যালস, রত্ন, গহনা এবং টেক্সটাইল রপ্তানি করতে পারবে না। রপ্তানি বন্ধ হলে এই সেক্টরগুলি অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। ভারতের আইটি, টেক্সটাইল এবং ফার্মা সেক্টরে লক্ষ লক্ষ চাকরি চলে যাবে, যা দেশে বেকারত্ব বাড়াবে।
মূল্যবৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রার সংকট: ভারত বিমান চলাচল, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানির উৎস পাবে না। ভারতের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে এদের বিকল্প খুঁজে বের করা কঠিন হবে, যা খরচ বাড়াবে। আমেরিকার সাথে বাণিজ্য না হলে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রা আয়েও ঘাটতি দেখা দেবে, ফলে ভারতীয় টাকা দুর্বল হবে। এতে আমদানি ব্যয়বহুল হবে এবং দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।
বিনিয়োগে প্রভাব: আমেরিকা ভারতে বিনিয়োগ করবে না। এর ফলে ভারতের স্টার্টআপ এবং পরিকাঠামো প্রকল্পগুলি প্রভাবিত হবে।
কৌশলগত প্রভাব: আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি না হলে উভয় দেশের কৌশলগত জোট প্রভাবিত হবে, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে (বিশেষ করে চিনের বিরুদ্ধে) প্রভাবিত করবে।
অন্য কথায়, আমেরিকার সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন হলে ভারতের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান এবং বৈশ্বিক অবস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।