জাপান হাত গুটিয়ে নিল, ভারত প্রবেশ করলো… শ্রীলঙ্কায় ৪৫২ কোটির এই চুক্তি কেন চিনের অস্বস্তির কারণ হবে?

জাপান হাত গুটিয়ে নিল, ভারত প্রবেশ করলো… শ্রীলঙ্কায় ৪৫২ কোটির এই চুক্তি কেন চিনের অস্বস্তির কারণ হবে?

নয়াদিল্লি: ভারত তার সামুদ্রিক শক্তি বাড়াচ্ছে। সরকারি মালিকানাধীন মাজগাঁও ডক শিপবিল্ডার্স লিমিটেড (MDL) শ্রীলঙ্কার কলম্বো ডকইয়ার্ড পিএলসি (Colombo Dockyard PLC) কিনতে যাচ্ছে। এই চুক্তি প্রায় ৫.২৯ কোটি ডলার (প্রায় ৪৫২ কোটি টাকা) মূল্যের।

ভারত এটি করছে যাতে ভারত মহাসাগরে চিনের প্রভাব কমানো যায়। MDL এই প্রথম কোনো বিদেশি কো ম্পা নি কিনছে। এতে কিছু নতুন শেয়ার জারি করা হবে এবং জাপানের ওনোমিচি ডকইয়ার্ড কো ম্পা নি (Onomichi Dockyard Co Ltd) থেকে শেয়ার কেনা হবে। এই কো ম্পা নির কাছে আগে শ্রীলঙ্কার কো ম্পা নিতে ৫১% অংশীদারিত্ব ছিল। জাজল কো ম্পা নি সরে আসার এবং শ্রীলঙ্কার ডকইয়ার্ডের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ার পর ভারত সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারত এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখছে।

কলম্বো ডকইয়ার্ডের গুরুত্ব
কলম্বো ডকইয়ার্ড পিএলসি শ্রীলঙ্কার বৃহত্তম জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতকারী সংস্থা। এর শিপবিল্ডিং ইয়ার্ড বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত সামুদ্রিক পথের কাছাকাছি অবস্থিত। শিপবিল্ডিং ইয়ার্ড (যা শিপইয়ার্ড বা ডকইয়ার্ড নামেও পরিচিত) এমন একটি সুবিধা বা স্থান যেখানে জাহাজ নির্মাণ, মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। কলম্বো ডকইয়ার্ডের ক্ষমতা এবং অবস্থানের কারণে এই ইয়ার্ড সবসময়ই আঞ্চলিক সামুদ্রিক প্রতিযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কর্মকর্তারা বলছেন যে MDL-এর নিয়ন্ত্রণে শুধুমাত্র ডকইয়ার্ডের অবস্থাই উন্নত হবে না, বরং দক্ষিণ এশিয়ায় শিপবিল্ডিং এবং মেরামতের কাজও উন্নত হবে।

বৈশ্বিক শিপইয়ার্ড হিসেবে উত্থানের ভিত্তি
এই পদক্ষেপের ফলে MDL তার মেরামত এবং নতুন জাহাজের অর্ডার শ্রীলঙ্কার সুবিধাতে পাঠাতে পারবে। এতে নিয়মিত আয় বজায় থাকবে। উভয় ইয়ার্ডের মধ্যে সমন্বয়ও বাড়বে। ইকোনমিক টাইমস-এর একটি রিপোর্টে MDL-এর সিএমডি ক্যাপ্টেন জগমোহনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, “এই পদক্ষেপ MDL-কে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে এবং আমাদের জন্য একটি বৈশ্বিক শিপইয়ার্ড হিসেবে উত্থানের ভিত্তি স্থাপন করবে।” এর অর্থ হল MDL দক্ষিণ এশিয়ায় একটি বড় কো ম্পা নিতে পরিণত হবে। এটি বিশ্বজুড়ে জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতেও এগিয়ে যাবে।

জানা গেছে যে শ্রীলঙ্কা সরকার ইয়ার্ডকে বাঁচাতে জাপানের কাছে সাহায্য চেয়েছিল। কিন্তু, যখন তা সম্ভব হয়নি, তখন ভারতের কাছে কৌশলগত বিনিয়োগকারী আনার অনুরোধ করা হয়। MDL সবচেয়ে শক্তিশালী দাবিদার হিসেবে আবির্ভূত হয় কারণ তার কাছে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং ভালো আর্থিক ভিত্তি ছিল।

সম্পূর্ণরূপে MDL-এর সহায়ক কো ম্পা নি হয়ে উঠবে
সরকারি অনুমোদন পাওয়ার পর কলম্বো ডকইয়ার্ড পিএলসি সম্পূর্ণরূপে MDL-এর সহায়ক কো ম্পা নিতে পরিণত হবে। এর মাধ্যমে ভারত কেবল একটি শিপইয়ার্ডই পাবে না, বরং এমন একটি অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি পাবে যেখানে সামুদ্রিক নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিযোগিতা বাড়ছে। অর্থাৎ, ভারত এমন একটি জায়গা পেয়ে যাবে যেখান থেকে সে সামুদ্রিক কার্যকলাপের উপর নজর রাখতে পারবে এবং নিজের শক্তি প্রদর্শন করতে পারবে।

এই চুক্তি ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে ভারতের সামুদ্রিক শক্তি বাড়বে। সে ভারত মহাসাগরে চিনের প্রভাব কমাতে পারবে। MDL-এর জন্যও এটি একটি বড় সুযোগ। এর মাধ্যমে সে বৈশ্বিক শিপইয়ার্ড হতে পারবে এবং বেশি আয় করতে পারবে। শ্রীলঙ্কার জন্যও এটি উপকারী। এর ফলে তার ডকইয়ার্ডের অবস্থা উন্নত হবে এবং মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

চিন কেন এই চুক্তিতে অস্বস্তি বোধ করবে?
এই চুক্তি চিনের অস্বস্তির কারণ হবে কারণ:

ভারত মহাসাগরে ভারতের কৌশলগত প্রভাব বৃদ্ধি: এটি ভারত মহাসাগরে ভারতের কৌশলগত প্রভাব বাড়াবে।

শ্রীলঙ্কার উপর চিনের একতরফা প্রভাব হ্রাস: শ্রীলঙ্কার উপর চিনের একতরফা প্রভাব কমিয়ে দেবে।

আঞ্চলিক সামুদ্রিক খেলোয়াড় হিসেবে ভারতের অবস্থান: ভারতকে এই অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে, যা সরাসরি চিনের আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে চ্যালেঞ্জ করে।

‘মুক্তার মালা’ কৌশলের মোকাবিলা: চিন ভারত মহাসাগর অঞ্চলে তার উপস্থিতি শক্তিশালী করার জন্য ‘মুক্তার মালা’ (String of Pearls) নামক কৌশল নিয়ে কাজ করছে। এর অধীনে সে গওয়াদার (পাকিস্তান), হাম্বানটোটা (শ্রীলঙ্কা), জিবুতি (আফ্রিকা) এর মতো স্থানে বন্দর এবং সামরিক সুবিধা তৈরি করছে। ভারতের এই পদক্ষেপ চিনের এই কৌশলের সরাসরি মোকাবিলা।

শ্রীলঙ্কার ঋণ নির্ভরতা হ্রাস: শ্রীলঙ্কার উপর চিনের বিশাল ঋণ রয়েছে। এর কারণে চিন আগেই হাম্বানটোটা বন্দরকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিয়েছে। ভারতের এই বিনিয়োগ শ্রীলঙ্কাকে চিনের উপর তার নির্ভরতা কমানোর সুযোগ দেবে। চিন এটা পছন্দ করবে না যে শ্রীলঙ্কা তার অর্থনৈতিক প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসুক।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *