চীনের ফাঁদে আটকা পড়ল আমেরিকা! কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হল কো ম্পা নি, ভারতের জন্য কতটা বড় বিপদ?

নয়াদিল্লি: চীন এবং আমেরিকার মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ এখন ভয়ঙ্কর রূপ নিতে শুরু করেছে। এই যুদ্ধে চীন যে কৌশল ব্যবহার করেছে, তাতে আমেরিকা আটকা পড়ছে বলে মনে হচ্ছে। আসলে, ফোর্ড মোটর কো ম্পা নিকে গত তিন সপ্তাহে আমেরিকায় তাদের কিছু কারখানা বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

এর কারণ ছিল বিরল মৃত্তিকা খনিজ (রেয়ার আর্থ মিনারেলস) দিয়ে তৈরি চুম্বক অর্থাৎ ম্যাগনেটের অভাব। এই ম্যাগনেটগুলি গাড়ির বেশ কিছু জরুরি অংশে ব্যবহৃত হয়। আমেরিকা এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্যের যে উত্তেজনা চলছে, তাতে এই বিরল মৃত্তিকা খনিজ একটি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রভাব ভারতেও দেখা যেতে পারে।

কো ম্পা নির সিইও জিম ফার্লে বলেছেন, এই পরিস্থিতি থেকে বোঝা যায় যে গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য আমাদের নিজেদের দেশে সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরি করতে হবে। চীন রেয়ার আর্থ রপ্তানির জন্য একটি নতুন নিয়ম তৈরি করেছে, যার কারণে সরবরাহে বিলম্ব হচ্ছে। ফার্লে অ্যাসপেন আইডিয়াস ফেস্টিভ্যালে বলেন, ‘গত তিন সপ্তাহ ধরে আমরা আমাদের কারখানা বন্ধ রেখেছি, কারণ আমরা চীন থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন চুম্বক পাচ্ছি না।’

গাড়িতে এর ব্যবহার কোথায়?

ফার্লে জানান, এই চুম্বকগুলি গাড়ির সিট, উইন্ডশিল্ড ওয়াইপার, দরজা এবং অডিও সিস্টেমের জন্য খুবই জরুরি। ফার্লে এই উপকরণগুলি পেতে কো ম্পা নির সমস্যার বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলছেন। এমনকি আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বলেছিলেন যে চীনের সঙ্গে আলোচনায় রেয়ার আর্থ রপ্তানির লাইসেন্স দ্রুত মঞ্জুর করার বিষয়ে সহমত হয়েছে, কিন্তু তার পরেও সমস্যাটি রয়েই গেছে।

চীনের চাল

রেয়ার আর্থ আমেরিকা এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। এই মূল্যবান কাঁচামাল গাড়ি, আইফোন এবং অন্যান্য জিনিসপত্রে ব্যবহৃত হয়। চীন এর সবচেয়ে বড় উৎপাদক এবং তারা আলোচনার ক্ষেত্রে নিজেদের কথা মানানোর জন্য এটিকে ব্যবহার করে থাকে।

চীন নতুন নিয়ম তৈরি করেছে

চীন ভারতসহ সারা বিশ্বে রেয়ার আর্থ খনিজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। চীন ৪ এপ্রিল একটি নিয়ম তৈরি করেছিল। এই নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনো কো ম্পা নি মাঝারি এবং ভারী মৃত্তিকা ম্যাগনেট বাইরে পাঠাতে চায়, তাদের প্রথমে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্স নেওয়ার আগে ক্রেতা কো ম্পা নির কাছ থেকে একটি সার্টিফিকেটও নিতে হয়। এই সার্টিফিকেটে কিছু গ্যারান্টি দিতে হয়।

এই গ্যারান্টিগুলির মধ্যে এটাও অন্তর্ভুক্ত যে তারা এই চুম্বকগুলি ধ্বংসাত্মক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করবে না। তাদের এটাও জানাতে হবে যে এই চুম্বকগুলি এমন অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা হবে না যা গোটা বিশ্বের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। এই নিয়মটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা করের জবাবে এসেছিল।

ভারতের ওপর কী প্রভাব?

এই লাইসেন্সের জন্য ভারতের ২০টিরও বেশি কো ম্পা নি আবেদন করেছে, কিন্তু চীন এখনও লাইসেন্স দেয়নি। সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে ৫২টি কো ম্পা নি চীন থেকে চুম্বক কেনে। এই চুম্বকগুলি ভারতের গাড়ি নির্মাতা সংস্থাগুলিকে সরবরাহ করা হয়। যদি এই কো ম্পা নিগুলি দ্রুত লাইসেন্স না পায়, তাহলে তাদের আশঙ্কা যে জুলাইয়ের শুরুতেই তাদের মজুত শেষ হয়ে যাবে এবং উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *