সাম্প্রতিক বছরগুলিতে প্রযুক্তির উন্নতির ফলে ব্রেন টিউমার সহ যেকোনো ধরনের নিউরোলজিক্যাল রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসার সক্ষমতা বহুগুণে বেড়েছে।

বিশ্বব্যাপী তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ১,০০,০০০ মানুষের মধ্যে ৪.২৫ জন ম্যালিগন্যান্ট ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হন এবং ভারতে প্রতি বছর প্রায় ৫০,০০০ ব্রেন টিউমারের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়।

ব্রেন টিউমার কী?

ব্রেন টিউমার হলো মস্তিষ্কের মধ্যে একটি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। এটি মস্তিষ্ক বা মস্তিষ্ককে আচ্ছাদিত করে থাকা টিস্যু থেকে উৎপন্ন হতে পারে। ব্রেন টিউমারকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: ম্যালিগন্যান্ট (ক্যানসারযুক্ত) এবং বিনাইন (ক্যানসারবিহীন)। এদের প্রত্যেকের চিকিৎসার জন্য আলাদা পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।

দ্রুত সতর্কতামূলক লক্ষণগুলি শনাক্ত করুন

ব্রেন টিউমারের সবচেয়ে সাধারণ এবং প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে একটি হলো ক্রমাগত মাথাব্যথা—বিশেষ করে যদি মাথাব্যথা আগের ধরন থেকে আলাদা হয় বা সাধারণ ওষুধে না কমে। যদিও প্রতিটি মাথাব্যথা ভয়ের কারণ নয়, তবে দীর্ঘস্থায়ী বা অস্বাভাবিক মাথাব্যথা যদি নিউরোলজিক্যাল উপসর্গের সঙ্গে আসে, তবে দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

একজন ব্যক্তির উপসর্গগুলি টিউমারের অবস্থানের উপরও নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, মস্তিষ্কের স্পিচ সেন্টারকে প্রভাবিত করে এমন টিউমার কথা বলার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। একইভাবে, যদি টিউমারটি ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স বা নার্ভগুলিকে প্রভাবিত করে, তবে দৃষ্টিশক্তির সমস্যা দেখা দিতে পারে; যদি এটি শ্রবণশক্তি অঞ্চলকে প্রভাবিত করে, তবে শ্রবণশক্তি হ্রাস হতে পারে। অন্যান্য সম্ভাব্য লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে খিঁচুনি (মস্তিষ্কের ইরিটেশন-এর কারণে), জ্ঞানীয় ক্ষমতার অবনতি এবং শরীরের একপাশে দুর্বলতা বা অসাড়তা। সংক্ষেপে, ব্রেন টিউমারের অবস্থানই নির্ধারণ করে এটি কী ধরনের কার্যক্ষমতার ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

ব্রেন টিউমার কি বংশগত?

যদিও বেশিরভাগ ব্রেন টিউমার হলো স্পোরাডিক—অর্থাৎ, এগুলি কোনো স্পষ্ট উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত কারণ ছাড়াই ঘটে—একটি ক্ষুদ্র শতাংশের ক্ষেত্রে জেনেটিক বা পারিবারিক প্রবণতা দেখা যায়। বর্তমান প্রচলিত তত্ত্ব অনুযায়ী, এমনকি স্পোরাডিক ক্ষেত্রেও, ব্রেন টিউমার জেনেটিক মিউটেশন বা ডিএনএ-তে ত্রুটির ফলে হতে পারে। এই মিউটেশনগুলি এখনও অজানা পরিবেশগত বা অভ্যন্তরীণ কারণ দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। তবে, এই পরিবর্তনগুলি সাধারণত এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে স্থানান্তরিত হয় না।

দ্রুত শনাক্তকরণের গুরুত্ব

দ্রুত শনাক্তকরণ চিকিৎসার ফলাফল উন্নত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যত দ্রুত ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে, সফল চিকিৎসার সম্ভাবনা তত বেশি। আজকের উন্নত ইমেজিং কৌশল, বিশেষ করে উচ্চ-রেজোলিউশনের এমআরআই স্ক্যান, ডাক্তারদেরকে আগের চেয়ে অনেক দ্রুত টিউমার শনাক্ত করতে সাহায্য করে।

অনেক ব্রেন টিউমারের জন্য অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ এখনও প্রধান চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয়। আশার কথা, আধুনিক নিউরোসার্জিক্যাল কৌশলগুলি আরও অনেক বেশি নির্ভুল ও নিরাপদ হয়েছে, যার কারণ হলো অপারেটিং মাইক্রোস্কোপ, ইমেজ-গাইডেড নেভিগেশন সিস্টেম, আলট্রাসনিক অ্যাসপিরেটর প্রযুক্তি এবং ইন্ট্রাঅপারেটিভ নার্ভ মনিটরিং-এর মতো প্রযুক্তির ব্যবহার। এই সরঞ্জামগুলি সার্জনদেরকে সুস্থ মস্তিষ্কের টিস্যুর ক্ষতি কমানো এবং জটিলতার ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে।

ব্রেন টিউমার নিরাময়যোগ্য

আরোগ্যের সম্ভাবনা বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে—সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো টিউমারের ধরন, অবস্থান এবং পর্যায়। বিনাইন টিউমার, যা সম্পূর্ণরূপে অপসারণ করা যায়, তা প্রায়শই ফিরে আসে না। কিছু ম্যালিগন্যান্ট টিউমার, যদি দ্রুত শনাক্ত করা হয় এবং এক জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে, তবে সফলভাবে চিকিৎসা করা যেতে পারে। তবে, আগ্রাসী এবং উচ্চ-গ্রেডের টিউমারগুলির পুনরায় ফিরে আসার প্রবণতা বেশি, যদিও রেডিয়েশন থেরাপি এবং কেমোথেরাপির মতো আধুনিক চিকিৎসা তাদের অগ্রগতি নিয়ন্ত্রণ করতে এবং জীবনের মান উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।

দ্রুত শনাক্তকরণ, অস্ত্রোপচারের নির্ভুলতা এবং সহায়ক থেরাপির অগ্রগতি ব্রেন টিউমার রোগীদের জন্য ভবিষ্যতের চিত্রকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করেছে।