আড়াই কোটি নারী কেন বিবাহ থেকে পালাচ্ছেন? জানুন আরব দেশগুলোর না শোনা সত্য

আজকের দিনে, যখন বিশ্ব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, মুসলিম দেশগুলোতেও সামাজিক কাঠামোতে এক বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে, বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রথা নিয়ে মহিলাদের চিন্তাভাবনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসছে।
আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলোতে লক্ষ লক্ষ নারী এখন বিয়েকে তাদের জীবনের আবশ্যিক অংশ মনে করছেন না। তারা তাদের জীবনকে নিজেদের শর্তে বাঁচতে চান, যেখানে স্বাধীনতা, আত্মনির্ভরশীলতা এবং আত্মসম্মান সবচেয়ে উপরে। আসুন, এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিকে আরও কাছ থেকে বুঝি।
পরিসংখ্যান কী বলছে?
কুয়েতের প্রখ্যাত সংবাদপত্র আলরাই-এর এক সাম্প্রতিক রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলোতে প্রায় আড়াই কোটি নারী অবিবাহিত। এদের মধ্যে অনেকের বয়স ২৪ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে, এবং কিছুজনের বয়স তো বিয়ের ঐতিহ্যবাহী সীমাও ছাড়িয়ে গেছে। এটি শুধু একটি সংখ্যা নয়, বরং এক নতুন সামাজিক বাস্তবতা, যা ইঙ্গিত করে যে নারীরা এখন বিয়েকে তাদের প্রধান অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখছেন না। মিশরে এই সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, যেখানে প্রায় ৯০ লক্ষ নারী এখনও অবিবাহিত। আলজেরিয়ায় ৪০ লক্ষ, ইরাকে ৩০ লক্ষ, ইয়েমেনে ২ লক্ষ, এবং সৌদি আরব, তিউনিসিয়া ও সুদানে প্রায় ১.৫ লক্ষ নারী বিয়ের বন্ধন থেকে দূরে আছেন। সিরিয়ায় ৭০ হাজার এবং লেবাননে ৪৫ হাজার নারীও একই পথে হাঁটছেন।
বিবাহবিমুখতার কারণসমূহ
নারীদের বিবাহ থেকে দূরে থাকার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে প্রধান হলো পুরুষদের আধিপত্য। অনেক মুসলিম দেশে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামো এমন যে, নারীরা মনে করেন বিয়ের পর তাদের পরিচয় ও স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়তে পারে। পুরুষদের হিংসাত্মক আচরণ, রাগ বা রক্ষণশীল চিন্তাভাবনার ভয়ও নারীদের বিবাহ থেকে দূরে রাখে। তারা এমন জীবন চান না যা ভয় ও চাপের ছায়ায় কাটে।
এছাড়াও, বিয়ের সাথে জড়িত আর্থিক বোঝা যেমন পণ, মূল্যবান উপহার এবং জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের ঐতিহ্যও একটি বড় বাধা। অনেক পরিবারের পক্ষে এই খরচ বহন করা কঠিন হয়, যার ফলে বিয়ে পিছিয়ে যায়।
শিক্ষা ও আত্মনির্ভরশীলতার প্রভাব
আজকের মুসলিম নারীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি শিক্ষিত ও আত্মনির্ভরশীল হচ্ছেন। তারা তাদের পড়াশোনা শেষ করা, কর্মজীবন গড়া এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হওয়াকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। বিয়ে এখন তাদের কাছে কোনো বাধ্যবাধকতা নয়, বরং এমন একটি সিদ্ধান্ত যা তারা নিজেদের ইচ্ছা ও সময় অনুযায়ী নিতে চান। এই পরিবর্তনের প্রভাব বিয়ের গড় বয়সের উপরও পড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, জর্ডানে যেখানে আগে নারীদের বিয়ের গড় বয়স ৩০ বছর ছিল, তা এখন বেড়ে ৩২ বছর হয়েছে। এই পরিবর্তন কেবল নারীদের চিন্তাভাবনায় আসা পরিবর্তনকেই তুলে ধরে না, বরং এটিও দেখায় যে তারা তাদের জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে চান।