আমেরিকা, চীন, জার্মানি, জাপান—কেউ নেই ধারেকাছে, ভারতের গতি দেখে হতবাক সবাই

আমেরিকা, চীন, জার্মানি, জাপান—কেউ নেই ধারেকাছে, ভারতের গতি দেখে হতবাক সবাই

আমেরিকা, চীন, জার্মানি বা জাপান—কেউই ভারতের উন্নয়নের গতির ধারেকাছে নেই। কঠিন সময়েও ভারত তার অর্থনৈতিক গতি বজায় রেখেছে। এই বৃদ্ধি গোটা বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, আগামী বছরগুলোতেও ভারতের উন্নয়নের গতি ভালো থাকবে। বিশ্বের বাকি অর্থনীতিগুলো কিছুটা ধীর হয়ে গেলেও ভারতের গতি অটুট থাকবে।

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে ভারতের প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে ৬.৩% হতে পারে। আগে জানুয়ারিতে এটি ৬.৭% হবে বলে অনুমান করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও ভারত বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি হিসেবেই থাকবে। ২০১৫ সালে ভারত চীনকে পেছনে ফেলে দ্রুততম ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিতে পরিণত হয়। সে সময় তেলের দাম কম ছিল, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ছিল স্থিতিশীল এবং সরকার অনেক বড় সংস্কার করেছিল।

কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও গতি বজায় রেখেছে

২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ভারতের জিডিপি ৭.৫% থেকে ৮% এর মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, চীনের প্রবৃদ্ধি কমে ৬.৫% থেকে ৬.৭% হয়েছিল, কারণ তারা বিনিয়োগের পরিবর্তে মানুষের খরচের ওপর বেশি জোর দিচ্ছিল। এই সময়ে সরকার ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-এর মতো অনেক প্রকল্প চালু করে, এফডিআই-এর নিয়ম সহজ করে এবং আর্থিক ক্ষেত্রে সংস্কার করে। ২০১৭ সালে জিএসটি কার্যকর করা হয়, যা সারা দেশে একই ধরনের কর ব্যবস্থা তৈরি করে।

তবে, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে ভারতকে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। ২০১৮ সালের শেষ দিকে এবং ২০১৯ সালে ব্যাংক ও এনবিএফসি-তে সমস্যা দেখা দেয়। মানুষ কম কেনাকাটা করে এবং বেসরকারি কো ম্পা নিগুলোও কম বিনিয়োগ করে। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে জিডিপির প্রবৃদ্ধি আগের বছরের ৬.১% থেকে কমে ৫% হয়ে যায়। এর কারণ ছিল বিশ্ব অর্থনীতির দুর্বল অবস্থা, নির্মাণ কাজের ধীর গতি, মানুষের কম কেনাকাটা এবং ব্যাংকগুলোর সমস্যা।

২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি আসে। এর ফলে অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে জিডিপি ৭.৩% পর্যন্ত কমে যায়, যা স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স ছিল। কিন্তু, ভারত ২০২১-২২ অর্থবর্ষে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় এবং ৮.৭% প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। এর কারণ ছিল মানুষের ব্যাপক কেনাকাটা, সরকারের খরচ বৃদ্ধি এবং পরিষেবা ও রপ্তানিতে উন্নতি। ২০২২ সাল থেকে ভারত টানা ৬-৭% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যখন বিশ্বের অনেক বড় দেশের সঙ্গে চীনের অর্থনীতিও ধীর হয়ে গেছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং জাতিসংঘও বলেছে যে ২০২১ সাল থেকে ভারত দ্রুততম ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষ পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

আগামী বছরগুলোতেও দ্রুততম গতিতে বাড়বে ভারত

জাতিসংঘের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত আগামী বছরগুলোতেও দ্রুততম ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি হিসেবে থাকবে। এটি চীন, আমেরিকা, ইউরোপ এবং জার্মানির মতো দেশগুলোকেও পেছনে ফেলবে। এটি শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, এটি ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থার মজবুত অবস্থানকে দেখায়।

বিশ্ব অর্থনীতি ধীর হচ্ছে, কিন্তু ভারত স্থিতিশীল। অনুমান করা হচ্ছে, ২০২৫ সালে বিশ্ব অর্থনীতি মাত্র ২.৩% হারে বাড়বে, যা আগের অনুমানের চেয়ে কম। এর কারণ হলো, অনেক দেশের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে উত্তেজনা রয়েছে। আমেরিকা ও চীনের মধ্যে সম্পর্কও ভালো নয়, যার কারণে বাণিজ্যে সমস্যা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০২৫ সালে বিশ্বের বাণিজ্য ২% এর কম বাড়বে, যেখানে আগে এটি ৪-৫% হারে বাড়ত।

বিশ্বের অনেক বড় ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়েছে। এর ফলে মানুষের খরচ এবং কো ম্পা নিগুলোর বিনিয়োগ কমে গেছে। ইউক্রেনে যুদ্ধ চলছে, আমেরিকা ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা রয়েছে এবং জ্বালানি সরবরাহেও সমস্যা হচ্ছে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে। জার্মানি এবং জাপানের মতো দেশগুলোতে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। উৎপাদন কমে যাচ্ছে এবং নতুন জিনিসও কম তৈরি হচ্ছে। এর ফলে তাদের অর্থনীতি ধীর হয়ে গেছে।

আমেরিকা, চীন, ইউরোপ—সবাই ধীর হয়ে গেছে

বিশ্বব্যাংক অনুযায়ী, ২০২৫ সালে আমেরিকার অর্থনীতি ১.৪% হারে বাড়বে, যা জানুয়ারিতে অনুমান করা ২.৩% এর চেয়ে কম। এর কারণ হলো সুদের হার বাড়ার প্রভাব এখন দেখা যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ কম জিনিস কিনছে। নির্বাচনের কারণে সরকারও কম বিনিয়োগ করছে।

২০২৫ সালে চীনের অর্থনীতি ৪.৫% হারে বাড়বে, যা আগের মতো দ্রুত নয়। যদিও, সরকারের কাছে এখনও অনেক উপায় আছে, যার মাধ্যমে তারা অর্থনীতিকে উন্নত করতে পারে। কিন্তু, চীনে রিয়েল এস্টেটে সমস্যা হচ্ছে। কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমছে। অন্য দেশের সঙ্গে তার সম্পর্কও খারাপ হচ্ছে, যার কারণে মানুষ চীনে বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছে।

ইউরোপের অর্থনীতি মাত্র ১% হারে বাড়ার সম্ভাবনা আছে। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার পর জ্বালানির অভাব হয়েছে। জিনিসের দাম বেড়ে গেছে, যার ফলে উৎপাদন কম হচ্ছে। জার্মানি বেশিরভাগ জিনিস চীনে বিক্রি করে, কিন্তু চীনের অর্থনীতি ধীর হওয়ার কারণে জার্মানিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জার্মানি এখনও পর্যন্ত পরিবেশ রক্ষায় বেশি বিনিয়োগ করেনি। এর ফলে আগামী সময়ে আরও ক্ষতি হতে পারে।

ভারত কেন আলাদা?

অনুমান করা হচ্ছে যে, ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে ভারতের অর্থনীতি ৬.৩% হারে বাড়বে। এটি বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি হয়ে থাকবে। এর কারণ হলো, ভারতের অর্থনীতি অন্য দেশের থেকে আলাদা। ভারত অন্য দেশে জিনিস বিক্রির ওপর বেশি নির্ভরশীল নয়, বরং এখানকার মানুষ নিজেরাই প্রচুর কেনাকাটা করে। ভারতে মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, শহর বাড়ছে এবং মানুষের আয়ও বাড়ছে। এর ফলে মানুষ প্রচুর কেনাকাটা করে এবং অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।

ভারতে তরুণদের সংখ্যা বেশি। এখানকার মানুষের গড় বয়স ২৯ বছর। এর ফলে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে উৎপাদনও বাড়ছে। অন্যদিকে, ইউরোপ, চীন এবং জাপানে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি। এর ফলে তাদের অর্থনীতি ধীর হচ্ছে। সরকার রাস্তা, রেল, জ্বালানি এবং ডিজিটাল অবকাঠামোর মতো জিনিসগুলোতে প্রচুর অর্থ খরচ করছে। এর ফলে অর্থনীতি খুব লাভবান হচ্ছে। এই বিনিয়োগের কারণে বেসরকারি কো ম্পা নিগুলোও এগিয়ে আসছে এবং জিনিস তৈরি ও এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে বিনিয়োগ করছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *