নতুন জাতীয় সভাপতি নিয়ে বিজেপি হাইকমান্ড ও সংঘের মধ্যে জটিলতা, এই রাজ্যগুলোতে পরিবর্তন হবে প্রদেশ নেতৃত্ব

ভারতীয় জনতা পার্টিতে (বিজেপি) দীর্ঘকাল ধরে নতুন জাতীয় সভাপতি নির্বাচন নিয়ে হাইকমান্ড এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) মধ্যে জটিলতা চলছে। বিজেপির বর্তমান সভাপতি জেপি নাড্ডার কার্যকাল ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শেষ হয়েছিল, কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের কারণে জুন পর্যন্ত তার কার্যকাল বাড়ানো হয়েছিল।
হাইকমান্ডের পরিকল্পনা এবং সংঘের মতামত
দলীয় সূত্রের খবর অনুযায়ী, যাদের হাতে দলের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার কথা ছিল, তাদের জুন ২০২৪-এর মধ্যে হাইকমান্ড কার্যকরী সভাপতি করে একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছিল যে, দলীয় সাংগঠনিক নির্বাচনের পর তাদের হাতেই সভাপতির দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে। ঠিক যেমন ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সভাপতি থাকা অবস্থাতেই জেপি নাড্ডাকে কার্যকরী সভাপতি করে স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে তিনিই হবেন দলের পরবর্তী সভাপতি। ২০ জানুয়ারি, ২০২০ তারিখে দলের সাংগঠনিক নির্বাচন শেষ হওয়ার পর জেপি নাড্ডাকে দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সংঘের সূত্র অনুযায়ী, সংঘ সভাপতি নির্বাচনের বিষয়ে তাদের মতামত অনেক আগেই দলের হাইকমান্ডের কাছে পেশ করেছে। সংঘ তাদের পক্ষ থেকে নতুন সভাপতির জন্য মানদণ্ড জানিয়ে দিয়েছে। সংঘ চায় যে নতুন সভাপতি সংগঠনকে শক্তিশালী করুন। সভাপতি নির্বাচনের মাধ্যমে কোনো রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
সরকারে পরিবর্তনের সম্ভাবনা এবং সংঘের বৈঠক
আসলে, নতুন সভাপতি নির্বাচনের পাশাপাশি সরকারেও পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ৪ জুলাই থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত সংঘের অখিল ভারতীয় প্রান্ত প্রচারক বৈঠক দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে। এতে সরসংঘচালক মোহন ভাগবত, সরকার্যবাহ দত্তাত্রেয় হোসাবেলে সহ সমস্ত ৬ সহ-সরকার্যবাহ এবং সংঘের পদাধিকারীরা উপস্থিত থাকবেন। এই বৈঠকে নতুন দলের সভাপতির নামে অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। সূত্র অনুযায়ী, এই বৈঠকের সময় বিজেপি হাইকমান্ড এবং সংঘের নেতাদের মধ্যে দলের সভাপতি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
নতুন সভাপতি নির্বাচনের পর বিজেপির সংগঠনে বড় পরিবর্তন সম্ভব
বিজেপি এমন একজন নেতাকে সভাপতি করতে চায় যিনি সংগঠনকে শক্তিশালী করতে এবং সামলাতে সক্ষম হবেন। সভাপতি নির্বাচনে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার পরিবর্তে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে সক্ষম একজন নেতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। দলের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা পার্লামেন্টারি বোর্ড-এ প্রভাবশালী নেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে। সূত্র অনুযায়ী, বিজেপি হাইকমান্ড এবং সংঘের নেতৃত্বের মধ্যে দলের নতুন সভাপতি নির্বাচন নিয়ে এখনও ঐকমত্য তৈরি হয়নি।
নতুন সভাপতি হওয়ার পর প্রায় ৫০ শতাংশ জাতীয় সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে এবং নতুন সভাপতির দলে তরুণ নেতাদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জায়গা দেওয়া হবে। তথ্য অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত ১৪টি রাজ্যের সভাপতির নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নতুন সভাপতির নামে ঐকমত্য না হওয়া এবং গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক এবং পশ্চিমবঙ্গ-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোর প্রদেশ সভাপতি নির্ধারিত না হওয়ায় নির্বাচন আটকে আছে।
১৯টি রাজ্যে সভাপতি নির্বাচন আবশ্যক
শুক্রবার বিজেপি রাজ্যের বিজেপি সভাপতি নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কর্মকর্তাদের ঘোষণা করেছে। মহারাষ্ট্রে কিরণ রিজিজু, উত্তরাখণ্ডে হর্ষ মালহোত্রা, পশ্চিমবঙ্গে রবি শঙ্কর প্রসাদ নির্বাচন কর্মকর্তা হবেন। দলের সংবিধান অনুযায়ী, জাতীয় সভাপতি নির্বাচনের জন্য ১৯টি রাজ্যে নির্বাচন আবশ্যক। ১৯টি রাজ্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর জাতীয় নির্বাচন কর্মকর্তা কে. লক্ষ্মণ একটি প্রেস কনফারেন্সে নতুন জাতীয় সভাপতি নির্বাচনের জন্য কর্মসূচির ঘোষণা করবেন।
বিজেপি সূত্রের খবর অনুযায়ী, জাতীয় সভাপতি নির্বাচনের জন্য ১৯টি রাজ্যে সাংগঠনিক নির্বাচন শেষ হওয়ার পর প্রদেশগুলিতে সভাপতি নির্বাচন হওয়া জরুরি। এখনও পর্যন্ত ১৪টি রাজ্যে সাংগঠনিক নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। জাতীয় সভাপতি নির্বাচনের আগে দল চায় যে উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোতে সাংগঠনিক নির্বাচন শেষ হোক। সেখানে প্রদেশ সভাপতি নির্বাচন সম্পন্ন করা হোক, যাতে দেশে এই বার্তা যায় যে দল সব বড় রাজ্যের প্রদেশ সভাপতি নির্বাচন দলের ঐকমত্যে সম্পন্ন করেছে।
উত্তরপ্রদেশে আলোচিত নাম
দলীয় সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই প্রদেশগুলোতে সভাপতি নির্বাচন এত সহজ নয় এবং এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো সেই রাজ্যগুলোর সামাজিক প্রকৌশল এবং জাতিগত রাজনীতি। সূত্র অনুযায়ী, উত্তরপ্রদেশে প্রদেশ সভাপতির জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সাথে সম্ভাব্য নাম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, অনেক দলিত এবং ওবিসি মুখ নিয়েও সংগঠন থেকে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অমিত শাহ এবং প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে।
প্রদেশ সভাপতির জন্য যেসব ওবিসি মুখ নিয়ে আলোচনা হয়েছে তাদের মধ্যে পশুসম্পদ মন্ত্রী ধর্মপাল সিং এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিএল বর্মা অন্যতম; এরা দুজনেই লোধ সম্প্রদায় থেকে এসেছেন। ওবিসি মুখদের মধ্যে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সাধ্বী জ্যোতি নিরঞ্জন এবং রাজ্যসভার সাংসদ বাবুবাম নিষাদের নাম নিয়েও আলোচনা চলছে। এছাড়াও, যোগী আদিত্যনাথের পছন্দের হিসেবে দুটি নাম সামনে এসেছে যার মধ্যে জলশক্তি মন্ত্রী এবং প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি স্বতন্ত্র দেব সিং (ওবিসি এবং কুর্মি সমাজ থেকে) এবং দ্বিতীয় জন ব্রাহ্মণ মুখ হিসেবে দীনেশ শর্মা।