ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে এবার ঈশ্বরের আশীর্বাদ! সোনা ও তেলের ভাঁড়ার, ‘সোনালি ভারত’ কি ফিরছে?

ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে এবার ঈশ্বরের আশীর্বাদ! সোনা ও তেলের ভাঁড়ার, ‘সোনালি ভারত’ কি ফিরছে?

সম্প্রতি ভারতে দুটি বিশেষ ঘটনা ঘটেছে, যা দেশের গণমাধ্যমে ততটা প্রচার পায়নি যতটা হওয়া উচিত ছিল। প্রথমত, ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে অপরিশোধিত তেলের বিশাল ভাণ্ডারের সন্ধান মিলেছে। দাবি করা হচ্ছে যে, এই তেলের ভাণ্ডার এত বিশাল যে ভারত শুধু নিজের চাহিদা মেটাবে না, বরং অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করার মতো অবস্থানেও চলে আসবে।

তেল ও ডিজেলের বিশ্বনেতা হওয়ার পথে ভারত?
যদি ভারত পর্যাপ্ত পরিমাণে অপরিশোধিত তেল উৎপাদন করতে পারে, তাহলে তা প্রক্রিয়াকরণ করে ডিজেল ও পেট্রোল হিসেবে বিশ্বের চাহিদা পূরণের ক্ষমতাও অর্জন করতে পারবে। ভারতে বিশ্বের বৃহত্তম শোধনাগারটি গুজরাটের জামনগরে ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। অতএব, অপরিশোধিত তেলের পাশাপাশি ভারত ডিজেল ও পেট্রোলেরও বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হয়ে উঠতে পারে। যেমনটি দাবি করা হচ্ছে, যদি এই দাবি সত্যি হয়, তবে আগামী দিনে ভারতের বিশ্বে আবারও “সোনার পাখি” হয়ে ওঠা প্রায় নিশ্চিত। ভারত আজ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল আমদানিকারক দেশ (চীন ও আমেরিকার পর), এবং বৈদেশিক বাণিজ্যে অপরিশোধিত তেল আমদানিতেই সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। যদি ভারতে অপরিশোধিত তেল উৎপাদন শুরু হয়, তবে এর আমদানিতে ব্যয় হওয়া বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা যাবে এবং পেট্রোল ও ডিজেল রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে। এর ফলে, ভারতে বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার অভাবনীয়ভাবে বৃদ্ধি পাবে এবং ভারত বিশ্বে বৈদেশিক মুদ্রার বৃহত্তম সঞ্চয়কারী দেশে পরিণত হতে পারে।

বর্তমানে ভারত তার মোট অপরিশোধিত তেলের চাহিদার ৮৫ শতাংশের বেশি প্রায় ৪২টি দেশ থেকে প্রতি বছর আমদানি করে। ভারত তার মোট অপরিশোধিত তেল ক্রয়ের ৪৬ শতাংশ পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলো থেকে আমদানি করে। বর্তমানে ভারত প্রতি বছর অপরিশোধিত তেল এবং গ্যাস আমদানিতে ১০,০০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি ব্যয় করছে।

আন্দামান-নিকোবরে অপরিশোধিত তেল ও বিরল খনিজ পদার্থের ভাণ্ডার
ভারত সরকারের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী শ্রী হরদীপ সিং পুরী জানিয়েছেন যে, আন্দামান ও নিকোবর সমুদ্র অঞ্চলে অপরিশোধিত তেল ও গ্যাসের একটি বিশাল ভাণ্ডার পাওয়া গেছে। একটি অনুমান অনুসারে, এই ভাণ্ডার ১২ বিলিয়ন ব্যারেল (২ লক্ষ কোটি লিটার) হতে পারে, যা সম্প্রতি গায়ানাতে আবিষ্কৃত অপরিশোধিত তেলের ভাণ্ডারের মতোই বড়। গায়ানাতে ১১.৬ বিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল ও গ্যাসের ভাণ্ডার পাওয়া গেছে। এই ভাণ্ডারের পর গায়ানা অপরিশোধিত তেল উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষস্থানে পৌঁছাতে পারে, যদিও বর্তমানে গায়ানার অবস্থান ১৭তম।

১৯৪৭ সালে রাজনৈতিক স্বাধীনতা লাভের পর প্রায় ৭০ বছর ধরে ভারতের সমুদ্রসীমার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর কোনো গুরুতর প্রচেষ্টা করা হয়নি। সম্প্রতি ভারত সরকার কর্তৃক এইB। ক্ষেত্রে নেওয়া প্রচেষ্টা সফল হতে দেখা যাচ্ছে। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সমুদ্র অঞ্চলে যে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল ও গ্যাসের ভাণ্ডার পাওয়া গেছে, তার অনুসন্ধান কাজ শেষ হয়েছে এবং এখন ড্রিলিং কাজ শুরু হচ্ছে। ড্রিলিং কাজ শেষ হওয়ার পর অপরিশোধিত তেল ও গ্যাসের ভাণ্ডারের সঠিক অনুমান সম্পূর্ণ করা হবে। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে পরিকাঠামোর উন্নয়নও খুব দ্রুত গতিতে করা হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা অঞ্চলের সমুদ্র এলাকা থেকেও প্রচুর পরিমাণে অপরিশোধিত তেল উত্তোলন করা হচ্ছে এবং ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ইন্দোনেশিয়া থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত। এর কারণে অনুমান করা হচ্ছে যে, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সমুদ্র অঞ্চলেও অপরিশোধিত তেল ও গ্যাসের বিশাল ভাণ্ডার থাকতে পারে। আনন্দের বিষয় হলো, এই অঞ্চলে অপরিশোধিত তেল ও গ্যাসের পাশাপাশি অন্যান্য বিরল ভৌত খনিজ পদার্থের (রেয়ার আর্থ মিনারেল/মেটাল) বিপুল পরিমাণ পাওয়ার সম্ভাবনাও প্রকাশ করা হচ্ছে। বিপুল পরিমাণে অপরিশোধিত তেল পাওয়ার কারণে ভারত তার পরিশোধন ক্ষমতা বাড়ানোর কথা ভাবছে। যেহেতু চীন কিছু বিরল ভৌত খনিজ পদার্থের ভারতে রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে, তাই ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে এই পদার্থগুলো পাওয়া ভারতের জন্য একটি বিশাল সুখবর। পূর্বেও ভারতে অপরিশোধিত তেল ও গ্যাসের ভাণ্ডারের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল, যেমন বোম্বে হাই, কাকিনাড়া, বল্লিয়া এবং সমস্তিপুর ইত্যাদি। এই সমস্ত স্থানে অপরিশোধিত তেল উত্তোলনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাজ শুরু হয়ে গেছে। এই কাজে মূলধনী ব্যয় অনেক বেশি হয়। জাপান, রাশিয়া এবং আমেরিকা থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা পাওয়ার জন্য এই দেশগুলির বড় কো ম্পা নিগুলির সাথে চুক্তি করার চেষ্টাও ভারত সরকার করছে। ভারতের সমুদ্র এলাকা ৫ লক্ষ কিলোমিটার। একইভাবে, পশ্চিমবঙ্গ উপকূলেও অনুসন্ধান চলছে এবং এই অঞ্চলেও অপরিশোধিত তেল ও গ্যাসের ভাণ্ডার পাওয়ার সম্ভাবনা প্রকাশ করা হচ্ছে। আন্দামান ও নিকোবর অঞ্চলে অপরিশোধিত তেল উৎপাদন শুরু হওয়ার পর আগামী প্রায় ৭০ বছর পর্যন্ত ভারতের অপরিশোধিত তেলের আমদানির প্রয়োজনই পড়বে না।

কর্ণাটকের কোলারে আবারও সোনার খনি চালুর সম্ভাবনা!
দ্বিতীয় শুভ সংবাদটি হলো, ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের কোলার অঞ্চলে অবস্থিত তার সোনার খনিগুলিতে ভারত আবারও খনন প্রক্রিয়া শুরু করার কথা ভাবছে। কোলার গোল্ড ফিল্ড (KGF) ২০০১ সালে খননের দৃষ্টিকোণ থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, এখন ২৫ বছর পর সোনার এই খনিগুলিতে খনন প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করার প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। এই বিষয়ে কর্ণাটক সরকারও তার অনুমোদন দিয়েছে। আজ সারা বিশ্বে সোনার দাম আকাশ ছুঁয়েছে এবং বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের সোনার ভাণ্ডার বৃদ্ধি করছে, কারণ মার্কিন ডলারের উপর এই দেশগুলির বিশ্বাস কিছুটা কমে যাচ্ছে। খুব সম্ভবত, আগামী সময়ে মার্কিন ডলারের পর আবারও সোনার মুদ্রাই আন্তর্জাতিক স্তরে বাণিজ্য বিনিময়ের মাধ্যম হয়ে উঠবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *