সংবিধান থেকে কি ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এবং ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দগুলি বাদ দেওয়া যাবে? জেনে নিন নিয়ম ও বিতর্ক

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS)-এর নেতা দত্তাত্রেয় হোসাবেলে সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এবং ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দ দুটি বাদ দেওয়ার কথা বলার পর থেকেই এই নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। তার যুক্তি হলো, এই শব্দ দুটি ভারতীয় সংবিধান তৈরির সময় ছিল না, পরে যুক্ত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান এবং উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখরও এই বিষয়ে হোসাবলের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। তারা বলেছেন যে, সাধারণত কোনো দেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় পরিবর্তন করা হয় না, কিন্তু জরুরি অবস্থার সময় এটি করা হয়েছিল, যা মোটেও ঠিক ছিল না। আসুন জেনে নিই এই দুটি শব্দ সংবিধান থেকে বাদ দেওয়া সম্ভব কিনা এবং এর জন্য কী নিয়ম আছে।
প্রস্তাবনায় সংশোধন: একমাত্র জরুরি অবস্থাতেই পরিবর্তন
এখানে যে দুটি শব্দ ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এবং ‘সমাজতান্ত্রিক’ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, এই পরিবর্তনগুলি সংবিধানের প্রস্তাবনায় (Preamble) করা হয়েছে। যেকোনো সংবিধানের প্রস্তাবনা তার আত্মা বা মূল কাঠামো। ভারত ছাড়া অন্য কোনো সংবিধানের প্রস্তাবনায় আজ পর্যন্ত কোনো পরিবর্তন হয়নি। প্রস্তাবনা হলো সেই ভিত্তি, যার উপর সংবিধান গড়ে ওঠে। অন্য কথায়, প্রস্তাবনা হলো সংবিধানের বীজ।
তবে, ১৯৭৬ সালে ৪২তম সংবিধান সংশোধনী আইন (42nd Constitutional Amendment Act) দ্বারা এটি পরিবর্তন করা হয়েছিল এবং এতে ‘সমাজতান্ত্রিক’, ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এবং ‘অখণ্ডতা’ (Integrity) শব্দগুলি যোগ করা হয়েছিল। এই সংশোধনটি জরুরি অবস্থা (Emergency) চলাকালীন করা হয়েছিল।
‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এবং ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দগুলি কি বাদ দেওয়া যাবে?
সংবিধানের প্রস্তাবনায় পরিবর্তনের কথা বলতে গেলে, এতেও সংশোধন করা যেতে পারে, তবে কিছু সীমাবদ্ধতা সহ। সুপ্রিম কোর্ট মনে করে যে প্রস্তাবনা সংবিধানের অংশ এবং এটি অনুচ্ছেদ ৩৬৮ এর অধীনে সংশোধন করা যেতে পারে, কিন্তু সংবিধানের মূল কাঠামো (Basic Structure) পরিবর্তন করা যাবে না।
যেহেতু ১৯৭৬ সালে ৪২তম সংশোধনী আইন দ্বারা প্রস্তাবনায় পরিবর্তন করা হয়েছিল, তাই প্রস্তাবনায় সংশোধন করা সম্ভব, তবে এর মূল কাঠামো পরিবর্তন করা উচিত নয়। এমন পরিস্থিতিতে, ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এবং ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দগুলি সংশোধনীর মাধ্যমে বাদ দেওয়া যেতে পারে, যদি এটি সংবিধানের মূল কাঠামোকে প্রভাবিত না করে।
সংবিধানে সংশোধন কখন এবং কীভাবে হয়?
সংবিধানে সংশোধন তখন হয়, যখন দেশে সামাজিক, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আসে। অথবা যখন বিদ্যমান বিধানগুলিকে স্পষ্ট বা শক্তিশালী করার প্রয়োজন হয়। সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়াকে নমনীয় এবং সহজ করা হয়েছে, যাতে সময় ও চাহিদার ভিত্তিতে কিছু পরিবর্তন করা যায়, তবে এটিও নিশ্চিত করা হয় যে মৌলিক কাঠামো অপরিবর্তিত থাকে।
সংশোধনের প্রক্রিয়াটি নিম্নরূপ:
১. বিল পেশ করা: সংশোধনের জন্য প্রথমে একটি বিল সংসদের যেকোনো কক্ষে (লোকসভা বা রাজ্যসভা) পেশ করতে হয়।
২. সংসদ কর্তৃক পাস: এরপর উভয় কক্ষ দ্বারা এটিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস করতে হবে।
৩. রাজ্যগুলির অনুমোদন (যদি প্রয়োজন হয়): যদি বিলটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো সম্পর্কিত হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটিকে কমপক্ষে অর্ধেক রাজ্যের বিধানসভা দ্বারাও অনুমোদিত হতে হয়।
৪. রাষ্ট্রপতির সম্মতি: এরপর রাষ্ট্রপতির সম্মতি পাওয়ার পর সংশোধন আইন হয়ে যায়।