ভারতের মাস্টারস্ট্রোক! রুশ অস্ত্র কিনছে মোদি সরকার, ট্রাম্প প্রশাসন কি নিষেধাজ্ঞা জারি করবে?

ভারতের মাস্টারস্ট্রোক! রুশ অস্ত্র কিনছে মোদি সরকার, ট্রাম্প প্রশাসন কি নিষেধাজ্ঞা জারি করবে?

রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব দিন দিন আরও শক্তিশালী হচ্ছে, যা পশ্চিমী দেশগুলির আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এবং হুমকি সত্ত্বেও অব্যাহত রয়েছে। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ব্যবহৃত অস্ত্র ও সরঞ্জামের একটি বড় অংশ রাশিয়ান উৎপাদিত, যা ভারতের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) শীর্ষ সম্মেলনে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং তার রাশিয়ান প্রতিপক্ষ আন্দ্রে বেলোউসভের সাথে দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে আলোচনা করেছেন। এই বৈঠকটি এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এবং তাদের সাথে ব্যবসা করা দেশগুলিকে শাস্তি দেওয়ার হুমকি জারি রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিতভাবে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর বিবৃতি জারি করছে, এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল এমনকি রাশিয়ান জ্বালানি ক্রয়কারী দেশগুলির উপর শুল্ক আরোপের হুমকিও দিয়েছে।

রাশিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মতে, বেলোউসভ রাজনাথ সিংকে বলেছেন, “ভারত আমাদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার, একটি ঐতিহ্যবাহী বন্ধু এবং সামরিক ও সামরিক-প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে সহযোগী।” রাজনাথ সিংও ‘এক্স’ (পূর্বে টুইটার) এ পোস্ট করেছেন যে তাদের মধ্যে “ভারত-রাশিয়া প্রতিরক্ষা সম্পর্ক উন্নয়নে একটি ব্যবহারিক আলোচনা” হয়েছে।

অপারেশন সিন্দুর: রাশিয়ান অস্ত্রের কার্যকারিতা

‘অপারেশন সিন্দুর’-এর সময় পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর আক্রমণে রাশিয়ান অস্ত্রের কার্যকারিতা আরও দৃঢ় হয়েছে। বিশ্বের দ্রুততম সুপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র, ব্রহ্মোস, পাকিস্তানের বিমানঘাঁটিগুলির রানওয়েতে ব্যাপক ক্ষতি করেছে এবং হ্যাঙ্গার ও রাডার সাইটগুলি ধ্বংস করেছে। ব্রহ্মোস ভারত ও রাশিয়ার একটি যৌথ উদ্যোগের ফসল। এছাড়াও, S-400 বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চার দিনের সংঘাতে ভারতীয় সামরিক স্থাপনগুলিকে পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা থেকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ১০ মে আদমপুর বিমানঘাঁটি পরিদর্শনের সময় S-400-এর পারফরম্যান্সের প্রশংসা করেছিলেন।

ভবিষ্যতের অস্ত্র চুক্তি: Su-57, ব্রহ্মোস-II এবং ভোরোনেজ রাডার

অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় সেনা মেজর মানিক এম জলি বলেছেন যে ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর পরপরই ভারতে একটি স্পষ্ট রুশপন্থী মনোভাব দেখা গেছে। জলি আরও বলেন যে, Su-57 যুদ্ধবিমান অধিগ্রহণের মাধ্যমে ভারতীয় বিমান বাহিনী (IAF) ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে। তিনি ব্রহ্মোস-II এর উন্নয়ন এবং 3M22 জিরকন হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র মিশনের মাধ্যমে ভারত উল্লেখযোগ্যভাবে লাভবান হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন। রামজেট থেকে স্ক্রামজেট প্রপালশনে আপগ্রেড করলে ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের গতি এবং ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক গিরিশ লিঙ্গান্না বলেছেন যে, শত্রুর ড্রোন মোকাবিলায় রাশিয়া কনটেইনার-এস বা ভোরোনেজ-এর মতো উন্নত রাডার সিস্টেম সরবরাহ করতে পারে, যা দূর থেকে লুকানো হুমকি এবং ড্রোন সনাক্ত করতে সক্ষম। এই অংশীদারিত্বের মধ্যে যৌথ উন্নয়ন ও উৎপাদন অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে, যা ভারতীয় বিমান বাহিনীর তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণ করবে।

ট্রাম্প প্রশাসন ভবিষ্যতে রাশিয়ার সাথে ভারতের প্রতিরক্ষা চুক্তির উপর সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে কিনা, তা এখনও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *