নেতার হাত মাথায় চাকরি অযোগ্যদেরও, ছাত্রনেতাদের পুনর্বাসন কেন্দ্র রামনগর কলেজ

কেউ টেনেটুনে কলেজের গণ্ডি টপকেছেন। কেউ আবার সেটাও পারেননি। তাতেই বা কী আসে যায়? স্রেফ ছাত্র ইউনিয়নের হোমড়াচোমড়া নেতা হলেই কেল্লাফতে! যোগ্যতা সেখানে কোনও মাপকাঠিই নয়। হাতে গরম দৃষ্টান্ত পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর কলেজ। অভিযোগ, যোগ্যতার ধারেকাছে না থেকেও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি, ব্লক সভাপতি, ইউনিট সভাপতি সহ মোট ছ’জন চাকরি পেয়েছেন কলেজের নানা অস্থায়ী পদে। তাঁদের মধ্যে চারজন ছাত্রনেতা এবং দু’জন যুব নেতা। কলেজের গভর্নিং বডি বেছে বেছে তাঁদের অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট, ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট পদে নিয়োগ করেছে। কোনওরকম বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই এই নিয়োগ হয়েছে বলেও অভিযোগ। কলেজের তহবিল থেকে প্রতি মাসে সবাইকে আট হাজার টাকা করে সাম্মানিক দেওয়া হয়। অর্থাৎ, মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ।
জানা গিয়েছে, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শতদল বেরা, ওই সংগঠনের রামনগর-২ ব্লক সভাপতি চন্দন পুলাই, কলেজের ইউনিট সভাপতি শেখ মইদুল প্রত্যেকে রামনগর কলেজের কর্মী। ২০১৮ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে তাঁদের নিয়োগ করা চলছে। এছাড়াও ছাত্রনেতা জইরুল ইসলাম, রামনগর-২ ব্লক যুব সহ-সভাপতি বিশ্বজিৎ রাউত, যুবনেতা রাজকুমার জানা একইভাবে ২০২১ সালে ওই কলেজে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে নিযুক্ত হন। রামনগর কলেজে গভর্নিং বডির সভাপতি রয়েছেন সুপ্রকাশ গিরি। এর আগে তাঁর বাবা বিধায়ক অখিল গিরি গভর্নিং বডির সভাপতি ছিলেন। অভিযোগ উঠেছে, কলেজে গভর্নিং বডির প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁদের সময়কালে শাসকদলের ছাত্র ও যুবনেতারা একচেটিয়া চাকরি পেয়েছেন সংশ্লিষ্ট কলেজেই। ছাত্রীকে গণধর্ষণে অভিযুক্তরাও রয়েছে তালিকায়।
২০২৪ সালের ২০ জুলাই। ওই কলেজের এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। মেসবাড়ির মধ্যে মদ খাইয়ে বেহুঁশ করে বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতা ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। মোট সাতজনের বিরুদ্ধে কাঁথি মহিলা থানায় এফআইআর করেছিলেন নির্যাতিতা ছাত্রী। পুলিশ তদন্ত করে চার্জশিট জমা দেওয়ার সময় টিএমসিপির জেলা সভাপতি তথা কলেজ কর্মী শতদল বেরার নাম বাদ দেয়। বাকি ছ’জনের নামে গণধর্ষণের ঘটনায় চার্জশিট জমা পড়ে। সেই ছ’জনের তালিকায় থাকা চন্দন পুলাই ও রাজকুমার জানা দু’জনে ২০১৮ সালের পর থেকে ওই কলেজে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে যোগ দেন। স্থানীয়দের মতে, কলেজের রাশ সুপ্রকাশদের হাতে থাকার সুবাদে শাসকদলের একটিমাত্র গোষ্ঠীর নেতাকেই কলেজে চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে।
রামনগর কলেজে ইউনিট প্রেসিডেন্ট তথা তৃণমূল ছাত্রনেতা শেখ মইদুল কলেজের গণ্ডি পেরনোর আগেই ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট পদে চাকরি পান। কলেজের ওয়েবসাইটে কর্মীদের শিক্ষাগত যোগ্যতায় তাঁর নামের পাশে এইচএস লেখা। একইভাবে যুবনেতা বিশ্বজিৎ রাউত এইচএস যোগ্যতায় রামনগর কলেজে অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে চাকরি পেয়েছেন। জইরুল ইসলাম ও শতদল বেরার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ পাশ। শেখ মইদুল বলেন, ‘ডিগ্রি কোর্স সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই আমি ২০১৮ সালে ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে চাকরি পাই।’ তৃণমূল যুব সংগঠনের ব্লক সহ-সভাপতি বিশ্বজিৎ রাউত বলেন, ‘আমি ২০২১ সালে কলেজে চাকরি পেয়েছি। ২০১১ সালে কলেজে ভর্তি হই। যদিও আমার গ্র্যাজুয়েশন সম্পূর্ণ হয়নি।’
এ নিয়ে রামনগর কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি বলেন, ‘কীভাবে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ হয়েছে, সবটা আমার মনে নেই। তাছাড়া, প্রত্যেকে আমার সময়ে নিয়োগ হয়েছেন, এমনটাও নয়। আমি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগেও কয়েকজন কাজে যোগ দিয়েছেন।’