রুশ তেল কিনলে ‘শাস্তি’ দেবে আমেরিকা, জয়শঙ্কর বললেন ‘সময় আসুক, দেখে নেব!’

রুশ তেল কিনলে ‘শাস্তি’ দেবে আমেরিকা, জয়শঙ্কর বললেন ‘সময় আসুক, দেখে নেব!’

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস. জয়শঙ্কর আমেরিকার সেই পরিকল্পনার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, যেখানে রাশিয়া থেকে তেল আমদানিকারক দেশগুলোর ওপর ৫০০% শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেছেন, এই বিষয়টি যখন সামনে আসবে, তখন ভারত উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে। জয়শঙ্কর এই পরিস্থিতিকে “সেতু পার হওয়ার” সাথে তুলনা করেছেন, যার অর্থ হলো ভারত তখনই কোনো সুনির্দিষ্ট অবস্থান নেবে যখন পরিস্থিতি পুরোপুরি স্পষ্ট হবে।

জয়শঙ্কর বর্তমানে চার দিনের আমেরিকা সফরে রয়েছেন। এই সফরে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, যে মার্কিন সাংসদ রাশিয়া থেকে বাণিজ্য করা দেশগুলোর ওপর ৫০০% শুল্ক আরোপের বিল পেশ করেছেন, তার কাছে ভারত নিজের শক্তি নিরাপত্তার উদ্বেগ তুলে ধরেছে। ওয়াশিংটন-এ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জয়শঙ্কর বলেন, “এমন ঘটনাপ্রবাহ, যা ভারতের স্বার্থে হতে পারে বা ভারতের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, আমরা সেগুলোর ওপর নিবিড় নজর রাখছি।”

ট্রাম্পের সমর্থন এবং বিলের জটিলতা
তিনি জানান যে, ভারত সরকার এবং ভারতীয় দূতাবাস মার্কিন রিপাবলিকান সিনেটর লিন্দসে গ্রাহামের সাথে যোগাযোগে রয়েছে। গ্রাহামই সেই সিনেটর, যিনি এই কঠোর বিলটি পেশ করেছেন। বিল পেশ করার সময় তিনি বিশেষভাবে ভারত ও চীনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করেছিলেন যে, এই দেশগুলো পুতিনের ৭০% তেল কিনছে। জয়শঙ্কর বলেন, “আমার মনে হয়, আমরা গ্রাহামের সঙ্গে আমাদের শক্তি নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ এবং স্বার্থ স্পষ্ট ভাবে ভাগ করে নিয়েছি। এখন দেখতে হবে এই বিল কতদূর এগোয়। সময় যখন আসবে, তখন আমরা সেই সেতু পার হব।”

এই বিলটিকে আরও জটিল করে তুলেছে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন। ট্রাম্প এই বিলটিকে সমর্থন জানিয়েছেন, যা রাশিয়া থেকে এখনও বাণিজ্য করা দেশগুলোর ওপর ৫০০% আমদানি শুল্ক আরোপের দাবি করে—এর মধ্যে ভারত ও চীনও অন্তর্ভুক্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি আমেরিকার সেই কৌশলের অংশ, যার মাধ্যমে তারা ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনার জন্য রাশিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে। যদি এই বিল পাস হয়ে যায়, তবে আমেরিকা থেকে ভারতের রপ্তানি মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হতে পারে। ৫০০% শুল্ক ভারতীয় বাণিজ্যের জন্য একটি বড় ধাক্কা প্রমাণ হবে।

বাণিজ্য চুক্তির দৌড় এবং ভারতের রুশ তেল আমদানি
এরই মধ্যে, ভারত এবং আমেরিকা একটি বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার দিকে দ্রুত গতিতে কাজ করছে। এই চুক্তির উদ্দেশ্য হলো ট্রাম্প কর্তৃক এপ্রিল মাসে ঘোষিত ২৬% পাল্টা শুল্ক এড়িয়ে চলা। যদি এই চুক্তি সফল হয়, তবে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা আমেরিকায় বড় ধরনের স্বস্তি পেতে পারেন।

ভারতের রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা ক্রমাগত বাড়ছে। ২০২৫ সালের মে মাসে এই আমদানি ১.৯৬ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতিদিনে পৌঁছেছে, যা গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এখন পরিস্থিতি এমন যে, ভারত পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর চেয়ে রাশিয়া থেকে বেশি তেল কেনা শুরু করেছে।

এই প্রবণতা ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু হয়েছে, যখন রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালায় এবং পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার উপর অনেক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর পর রাশিয়া ভারত ও চীনের মতো দেশগুলোকে रियायती দরে তেল বিক্রি করতে শুরু করে, যা ভারতীয় রিফাইনারিরা লুফে নেয়। ভারত বর্তমানে তার শক্তি চাহিদার ৪০-৪৫% অপরিশোধিত তেল থেকে পূরণ করে, যেখানে রাশিয়ার অংশীদারিত্ব দ্রুত গতিতে বেড়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *