‘পরমাণু বোমা’ নিয়ে চূড়ান্ত পথে ইরান? বিপজ্জনক পদক্ষেপ নিতে পারেন, বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা!

ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অভিযোগ এনেছিল, আর তারপরই শুরু হয়েছিল ১২ দিনের যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আমেরিকাও ঝাঁপিয়ে পড়ে ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা—ফোর্তো, ইসফাহান এবং নাতান্জে—বাঙ্কার বাস্টার বোমা দিয়ে হামলা চালায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন যে, এই হামলাগুলো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। যদিও ইরান পারমাণবিক স্থাপনার ক্ষতির কথা অস্বীকার করেছিল।

বিশেষজ্ঞরা কেন সতর্ক করছেন?
তবে এখন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে, এই হামলাগুলো ইরানকে আরও বিপজ্জনক পথে ঠেলে দিতে পারে। ইরান এখন গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে হাঁটতে পারে, কারণ ইরান জাতিসংঘের পারমাণবিক নজরদারি সংস্থা আইএইএ (IAEA)-এর সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং পরমাণু অপ্রসারণ চুক্তি (NPT) থেকে বেরিয়ে আসার দিকে কাজ করছে। এর ফলে ইরানের পারমাণবিক কার্যকলাপ বিশ্বের নজর থেকে আড়ালে চলে যাবে এবং পর্যবেক্ষণ প্রায় আসাম্ভব হয়ে পড়বে।

পারমাণবিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, মার্কিন হামলা ইরানকে এমন এক মোড়ে এনে দাঁড় করিয়েছে, যেখানে তারা গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা আরও জোরদার করতে পারে। পরমাণু বিস্তার বিশেষজ্ঞ হাওয়ার্ড স্টফার এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, উত্তর কোরিয়া শেষবার এনপিটি (NPT) থেকে বেরিয়ে এসে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করেছিল। এখন ইরানও একই পথ বেছে নিতে পারে। ইরানের রাষ্ট্রপতি মাসুদ পেজেশকিয়ান আইএইএ (IAEA)-এর সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করার বিল পাস করেছেন এবং এনপিটি (NPT) থেকে বেরিয়ে আসার কথা বিবেচনা করছেন।

অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞ জন এরাথও একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন যে ইরান চুক্তির নিয়ম ভঙ্গ করে অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে চলে যেতে পারে, যা ইসরায়েল এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে বিপদ বাড়িয়ে তুলছে।

আমেরিকা ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি (JCPOA) ভঙ্গ করেছিল
২০১৫ সালে ইরান আমেরিকা সহ বেশ কয়েকটি বড় দেশের সঙ্গে একটি পারমাণবিক চুক্তি (JCPOA) স্বাক্ষর করেছিল। এই চুক্তিতে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যার বিনিময়ে তাদের উপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলি তুলে নেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু ২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তিটিকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে আমেরিকাকে চুক্তি থেকে বের করে নেন এবং ইরানের উপর আবারও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এরপর বেশ কয়েকবার নতুন চুক্তির চেষ্টা করা হলেও কোনো ফল আসেনি। এখন ইরান বলছে যে তারা তাদের নিজস্ব স্বার্থ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিন হামলা ইরানকে আরও কঠোর করে তুলেছে। যদি ইরান আইএইএ (IAEA)-এর সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করে এবং এনপিটি (NPT) থেকে বেরিয়ে আসে, তবে তার পারমাণবিক কর্মসূচির উপর নজর রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *