ট্রাম্পের ‘ট্যারিফ তালিকা’ প্রস্তুত: ভারতসহ অনেক দেশ কি শুল্ক ছাড় পাবে? ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বড় সিদ্ধান্ত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও বৈশ্বিক বাণিজ্যে তার কঠোর নীতি নিয়ে আলোচনায় এসেছেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, শুক্রবার, ৪ জুলাই থেকে আমেরিকা সেই সব বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলোকে চিঠি পাঠানো শুরু করবে, যাদের উপর বর্ধিত শুল্ক (আমদানি শুল্ক) আরোপ করা হতে চলেছে।
ট্রাম্প বলেছেন যে, এই দেশগুলোকে স্পষ্টভাবে জানানো হবে যে তাদের আমেরিকাকে কতটা শুল্ক দিতে হবে। ট্রাম্প মিডিয়ার সাথে কথা বলার সময় বলেন, “আমি একটি চিঠি পাঠানোর এবং তাদের জানানোর পক্ষপাতী যে, তারা কতটা শুল্ক দিতে চলেছে।”
তার এই বিবৃতি এমন সময় এসেছে যখন এপ্রিল মাসে আমেরিকা দ্বারা ঘোষিত “রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ” অর্থাৎ পারস্পরিক শুল্ক ৯ জুলাই থেকে কার্যকর হতে চলেছে। এর দ্বারা তাইওয়ান থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যন্ত অনেক প্রধান অর্থনীতি প্রভাবিত হবে।
শুল্ক কার্যকরের সময়সীমা ৯ জুলাই পর্যন্ত
২০২৫ সালের এপ্রিলে ট্রাম্প প্রশাসন একটি ব্যাপক ঘোষণা করে প্রায় সমস্ত বাণিজ্যিক অংশীদার দেশ থেকে আসা পণ্যগুলির উপর ১০% পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছিল। একই সাথে এটিও স্পষ্ট করা হয়েছিল যে, কিছু দেশ এবং পণ্য গোষ্ঠীর উপর এই হার আরও বেশি হতে পারে। প্রাথমিকভাবে এই শুল্কগুলি দ্রুত কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আমেরিকা চুক্তির জন্য ৯০ দিনের ছাড় দিয়ে এর সময়সীমা ৯ জুলাই পর্যন্ত বাড়িয়েছিল। এই সময়ে আমেরিকা নির্বাচিত দেশগুলির সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরু করে, যাতে চুক্তির মাধ্যমে সংঘাত এড়ানো যায়।
ভারতের সাথে শুল্ক চুক্তির আশা
এখন পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসন ব্রিটেন এবং ভিয়েতনামের সাথে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করেছে, যখন চীনের সাথে উভয় দেশ সাময়িকভাবে একে অপরের উপর আরোপিত শুল্ক কমানোর বিষয়ে সম্মত হয়েছে। এরই মধ্যে ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে একটি অন্তর্বর্তী বাণিজ্য চুক্তি (Interim Trade Deal) আলোচনা তার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।
খবর অনুযায়ী, এই চুক্তিটি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চূড়ান্ত হতে পারে, অর্থাৎ ৯ জুলাইয়ের সময়সীমার আগেই উভয় দেশের মধ্যে ঐকমত্য হওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। ট্রাম্প বলেন, “আমার মনে হয় ভারতের সাথে আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে চলেছি। এটি একটি ভিন্ন ধরনের চুক্তি হবে, যেখানে আমরা প্রতিযোগিতা করতে পারব। এখন ভারত কাউকে তাদের বাজারে ঢুকতে দেয় না, কিন্তু আমার মনে হয় এখন ভারত তা করবে। যদি এমনটা হয়, তাহলে এটি খুব কম শুল্কের একটি চুক্তি হবে।”
ভারতীয় কৃষি ও দুগ্ধ খাতে আটকে আছে আলোচনা
তবে এই চুক্তি সহজ ছিল না। মার্কিন প্রতিনিধিদের প্রধান দাবি ছিল ভারতের কৃষি এবং দুগ্ধ খাতে আরও বেশি প্রবেশাধিকার, কিন্তু ভারত এই বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ওয়াশিংটনে বিশেষ সচিব রাজেশ আগরওয়ালের নেতৃত্বে ভারতীয় বাণিজ্য প্রতিনিধিদলকে তাদের সফর বাড়াতে হয়েছে, কারণ জেনেটিক্যালি মডিফাইড ভুট্টা, সয়াবিন, চাল এবং গম-এর মতো কৃষি পণ্যের উপর শুল্ক কমানোর মার্কিন দাবি ভারত প্রত্যাখ্যান করেছে।
এছাড়াও, ভারতীয় দুগ্ধ খাত, যা ৮০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে কর্মসংস্থান দেয়, বিদেশি কো ম্পা নিগুলোর জন্য উন্মুক্ত করতে ভারত অস্বীকার করেছে। সরকারের বিশ্বাস যে, এমন পদক্ষেপ দেশে কৃষক বিক্ষোভ এবং সামাজিক অসন্তোষের জন্ম দিতে পারে।
শ্রম-নির্ভর শিল্পের জন্য শর্ত
বিনিময়ে, ভারত আমেরিকা থেকে টেক্সটাইল, রত্ন ও গহনা, চামড়ার পণ্য, প্লাস্টিক এবং রসায়নের মতো শ্রম-নির্ভর ক্ষেত্রগুলিতে আরও বেশি বাজার প্রবেশের দাবি করেছে। ভারতের লক্ষ্য এই ক্ষেত্রগুলিতে রপ্তানি বাড়িয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, উভয় দেশের মধ্যে বর্তমানে মূল্য ভারসাম্য এবং শুল্ক হ্রাসের উপর গভীর আলোচনা চলছে, তবে আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে।
ট্রাম্প এর আগেও ভারতকে “ট্যারিফ অ্যাবিউজার” অর্থাৎ শুল্কের অপব্যবহারকারী দেশ বলেছেন। তিনি ভারতের উপর ২৬% আমদানি শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন, কিন্তু পরে ৯০ দিনের জন্য এটি স্থগিত করা হয়েছিল যাতে আলোচনার সুযোগ থাকে। এখন যখন এই সময়সীমা শেষ হতে চলেছে, তখন ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বারবার দেশগুলোকে সতর্ক করা হচ্ছে যে, তারা হয় চুক্তি করুক অথবা ভারী শুল্কের জন্য প্রস্তুত থাকুক।
৫০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যের লক্ষ্য
ভারত-আমেরিকার মধ্যে প্রস্তাবিত বাণিজ্য চুক্তির একটি প্রধান লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে ৫০০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রতিক আমেরিকা সফরের সময়ও এই লক্ষ্যে ঐকমত্য হয়েছিল। আমেরিকার আক্রমণাত্মক শুল্ক মনোভাব এবং ভারতের কৌশলগত অবস্থানের মধ্যে এই বাণিজ্য চুক্তি শুধু উভয় দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থকেই প্রভাবিত করবে না, বরং বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রেক্ষাপটেও এর গভীর প্রভাব দেখা যাবে।