ভোটার তালিকা সংশোধনে মহুয়া মৈত্র সুপ্রিম কোর্টে! বিহারের নির্দেশে বাংলাতেও কি প্রভাব পড়বে?

ভোটার তালিকা সংশোধনে মহুয়া মৈত্র সুপ্রিম কোর্টে! বিহারের নির্দেশে বাংলাতেও কি প্রভাব পড়বে?

বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য নির্বাচন কমিশন যে নির্দেশ জারি করেছে, তাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তিনি এই নির্দেশ অবিলম্বে বাতিলের আবেদন জানিয়েছেন, এবং একইসঙ্গে অনুরোধ করেছেন যেন বাংলা বা অন্য কোনো রাজ্যের ক্ষেত্রেও এমন নির্দেশ না দেওয়া হয়। এই পদক্ষেপ নির্বাচন কমিশনের বিতর্কিত সিদ্ধান্তকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

মহুয়া মৈত্র একাই নন, নির্বাচন কমিশনের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস’ (ADR) শনিবারই একটি মামলা করেছে। এছাড়াও, বিহারে কংগ্রেস সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলোও এই নির্দেশিকার বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে এক গুরুত্বপূর্ণ আইনি লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

কী আছে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকায়?
গত ২৪শে জুন নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছিল যে, বিহারের ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ (Special Intensive Revision – SIR) করা হবে। এর অর্থ হলো, যাদের নাম ইতিমধ্যে ভোটার তালিকায় রয়েছে, তাদেরও নির্দিষ্ট নথি দেখাতে হবে। এক্ষেত্রে আধার কার্ড বা রেশন কার্ডের মতো নথি গণ্য হবে না, বরং জন্ম শংসাপত্র দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। চলতি বছরের অক্টোবর বা নভেম্বরেই বিহারে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, তার আগে কমিশনের এই ধরনের নির্দেশ দেশজুড়ে সমালোচনার ঢেউ তুলেছে।

কেন এই নির্দেশের বিরোধিতা?
বিরোধীদের অভিযোগ, এভাবে ভোটার তালিকা সংশোধন করা হলে বহু মানুষ তাদের ভোটাধিকার হারাবেন, যা গণতন্ত্রের পরিপন্থী। এই অভিযোগ তুলেই মহুয়া মৈত্র সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। তার আবেদনে লিখেছেন, “কমিশনের এই নির্দেশ ভারতীয় সংবিধানের ১৪, ১৯(১), ২১, ৩২৫, ৩২৬ ধারা, জনপ্রতিনিধি আইন এবং ভোটার নিবন্ধনের নিয়ম লঙ্ঘন করছে। এই নির্দেশ যদি বাতিল না করা হয়, সেক্ষেত্রে বহু মানুষ ভোটাধিকার হারাবেন। এটা গণতন্ত্রের আসাম্মান এবং দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধা।” তিনি অন্য কোনো রাজ্যে যাতে এইরকম নির্দেশ না দেওয়া হয়, সেই ব্যবস্থা করারও আর্জি জানিয়েছেন।

মহুয়া মৈত্র তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে আদালতের মামলার নথি পোস্ট করে লিখেছেন, “নির্বাচন কমিশনের SIR-এর নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে এইমাত্র সুপ্রিম কোর্টে একটা মামলা করলাম। বাংলা সহ অন্যান্য রাজ্যে যাতে এই পদক্ষেপ না করা হয়, তার জন্য স্থগিতাদেশও চেয়েছি।” মহুয়ার বক্তব্য, “যে সমস্ত ভোটারের নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে, বহু বার যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁদেরই আবার নতুন করে যোগ্যতা প্রমাণ করতে বলা হচ্ছে! নির্বাচন কমিশনের এই ধরনের পদক্ষেপ দেশে প্রথম। কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, ভোটারদের নাম ভোটার তালিকায় তখনই যোগ করা হবে, যখন তাঁরা নাগরিকত্বের নথি জমা দেবেন। তাঁদের বাবা-মায়ের নাগরিকত্বেরও প্রমাণ দিতে হবে। না দিতে পারলে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ে যাবে! এটা সংবিধানের ৩২৬ ধারার বিরোধী।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *