লো ব্লাড প্রেশার কি প্রাণঘাতী? জেনে নিন এর ঝুঁকি ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস!

লো ব্লাড প্রেশার (হাইপোটেনশন)-কে অনেকেই গুরুত্ব দেন না, কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো দেখাচ্ছে যে এই পরিস্থিতি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। জার্নাল অফ হাইপারটেনশন (২০২৫)-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, দীর্ঘস্থায়ী লো বিপি মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব ঘটাতে পারে, যার ফলে মাথা ঘোরা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং মস্তিষ্কের ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে বয়স্ক এবং গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে এই অবস্থা আরও মারাত্মক হতে পারে। অতিরিক্ত রক্তপাত বা ডিহাইড্রেশন হলে রক্তচাপ এতটাই কমে যেতে পারে যে তা মৃত্যুর কারণও হতে পারে। দিল্লির ম্যাক্স সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের কার্ডিওলজিস্ট ডঃ রজত শর্মার মতে, যদি লো বিপি-এর সাথে বারবার মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হওয়ার মতো সমস্যা হয়, তাহলে তা হার্ট বা স্নায়ুতন্ত্রের জন্য গুরুতর বিপদ ডেকে আনতে পারে।
কেন হয় লো বিপি এবং কেমন হওয়া উচিত আপনার ডায়েট?
লো বিপি-এর একাধিক কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে ডিহাইড্রেশন, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসের ওষুধের অতিরিক্ত মাত্রা বা পোস্টুরাল হাইপোটেনশন (দাঁড়ালে রক্তচাপের হঠাৎ কমে যাওয়া)। ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিসিন (২০২৪)-এর তথ্য অনুযায়ী, পুরুষের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে লো বিপি-এর সমস্যা প্রায় ২০ শতাংশ বেশি দেখা যায়, বিশেষত মেনোপজের পর। এর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, ঝাপসা দেখা এবং গুরুতর ক্ষেত্রে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
লো বিপি নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। জার্নাল অফ নিউট্রিশন (২০২৫) অনুসারে, লবণ (সোডিয়াম) এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর খাদ্যাভ্যাস রক্তচাপের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
লো বিপি রোগীদের জন্য ডায়েট টিপস:
বেশি লবণ খান: সোডিয়াম শরীরে জল ধরে রেখে রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। নোনতা বিস্কুট, আচার বা স্যুপের মতো নোনতা স্ন্যাকস উপকারী হতে পারে। দিনে ৩-৫ গ্রাম অতিরিক্ত লবণ নিরাপদ হতে পারে, তবে হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার: কলা, কমলালেবু, পালং শাক এবং বাদামের মতো পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। কাজু এবং ডালের মতো ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবারও উপকারী।
প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট: ডিম, মুরগির মাংস এবং মাছের মতো প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। বাদাম, আখরোট এবং ঘি-এর মতো স্বাস্থ্যকর ফ্যাট শক্তি এবং রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখে।
জলপান: জলের অভাব লো বিপি-এর একটি প্রধান কারণ। প্রতিদিন ২-৩ লিটার জল পান করা উচিত। নারকেলের জল এবং ঘোল-এর মতো ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয়ও রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে, কারণ ডিহাইড্রেশনের কারণে লো বিপি-এর সমস্যা প্রায় ২৫% পর্যন্ত বাড়তে পারে।
এই খাবারগুলো ভুল করেও খাবেন না:
নুন-ছাড়া খাবার: লো বিপি-এর সমস্যায় ভুগছেন এমন রোগীদের নুন-ছাড়া খাবার খাওয়া উচিত নয়, কারণ এতে তাদের রক্তচাপ আরও কমে যেতে পারে।
অতিরিক্ত অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন: এগুলোর অতিরিক্ত সেবন রক্তচাপের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রসেসড ফুড: প্যাকেটজাত স্ন্যাকস এবং জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলোর কারণে বিপি কমে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।