কী এই ‘আধাঁর পানা’ প্রথা? কেন এই বিশেষ প্রসাদ জগন্নাথ দেবের ভোগে দেওয়া হলেও ভক্তরা পান না!

হিন্দুদের পবিত্র উৎসব জগন্নাথ রথযাত্রা ওড়িশার পুরী রাজ্যে মহা ধুমধামে পালিত হয়। এই উৎসব কলিযুগের দেবতা মহাপ্রভু জগন্নাথের সঙ্গে জড়িত। এই রথযাত্রাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় যাত্রা বলে মনে করা হয়, যেখানে লক্ষ লক্ষ ভক্ত একসঙ্গে প্রভুর দর্শনের জন্য আসেন। ২৭ জুন রথযাত্রা ছিল, যার পর ৫ জুলাই বাহুড়া যাত্রা পালিত হয়েছে। ৬ জুলাই ছিল সুনাবেশ রীতিনীতি। এবার এই পবিত্র উৎসবের সমাপ্তি হতে চলেছে। ৭ জুলাই পুরীতে আধার পানা রীতি পালন করা হবে। এই রীতি মানুষ ও ঈশ্বরের মধ্যে নয়, বরং প্রভুর অদৃশ্য ভক্তদের জন্য পালিত হয়। চলুন, এই রীতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
এই রীতির পিছনে একটি বিশেষ বিশ্বাস লুকিয়ে আছে। মনে করা হয় যে, রথযাত্রার সময় মহাবিশ্বের সমস্ত জীবিত এবং মৃতদের অংশগ্রহণের সুযোগ মেলে। মানুষের মধ্যে প্রতিটি ধর্ম, শ্রেণি এবং প্রদেশের মানুষ আসে। কিন্তু আপনি কি জানেন যে রথযাত্রায় মহাপ্রভুর দর্শনের জন্য দেবতা, অসুর, ভূত-প্রেত, আত্মা থেকে শুরু করে পশুপাখিরাও আসে? দেবতাদের মহাপ্রভুর ভোগের সঙ্গে ভোগ নিবেদন করা হয়, কিন্তু এই অদৃশ্য ভক্তদের জন্য প্রভু হিসেবে আধার পানার শরবত নিবেদন করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, এরা সবাই রথের নিরাপত্তা প্রদান করে।
‘আধার পানা’ আসলে কী?
আধার পানা হলো এক ধরনের বিশেষ শরবত, যা তৈরি করতে দুধ, ছেনা, মিষ্টি, গুড়, ফল এবং কিছু মসলা যেমন গোলমরিচ, এলাচ ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এই সব উপকরণ মিশিয়ে তিনটি রথের উপর বড় বড় মাটির পাত্রে রাখা হয়। ‘আধার’ মানে ঠোঁট। পাত্রগুলোর আকার প্রভুর মূর্তিগুলোর ঠোঁট পর্যন্ত হওয়া উচিত, যাতে ভোগ নিবেদন করলে তারা তা গ্রহণ করতে পারেন। কিছুক্ষণ পর, একে একে তিনটি রথ থেকে পাত্রগুলো উল্টে ভেঙে ফেলা হয়। এই কাজটি রথে উপস্থিত দৈত্যপতি এবং সেবায়েতরা করেন। আসলে, পাত্রগুলো এই কারণে ভাঙা হয় যাতে তাদের অন্য জগতের ভক্তরা তা পান করতে পারে।
এর গুরুত্ব কী?
কাহিনী অনুসারে, এই ভোগ কোনো জীবিত মানুষ সেবন করেন না। এটি শুধুমাত্র তাদের জন্য, যারা মানুষ নন—যেমন ভূত-প্রেত, রাক্ষস গণ, আত্মা, পূর্বপুরুষ এবং পশুপাখি। রথযাত্রায় এটি ভগবান কর্তৃক তাদের এই ভক্তদের জন্য এক প্রকার আশীর্বাদ, যাতে তারা মুক্তি লাভ করতে পারে।
আজই পালিত হবে এই বিশেষ রীতি
পুরীতে আজ আধার পানা রীতি পালিত হবে। এই শরবতটি সন্ধ্যা ৫টা থেকে তৈরি করা হবে। কিছুক্ষণ পর পাত্রগুলো ভেঙে এই রীতির সমাপ্তি হবে। ৮ জুলাই নীলাদ্রি বিজে উৎসব পালিত হবে। এই দিন মা লক্ষ্মীকে রসগোল্লার ভোগ নিবেদন করা হয়। ওড়িশায় ৮ জুলাই ‘রসগোল্লা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়।