আমেরিকার F-35B যুদ্ধবিমান বিকল! ভারতের হাতে এল স্টিলথ প্রযুক্তির বিশাল সুযোগ, তোলপাড় বিশ্ব

আমেরিকার F-35B যুদ্ধবিমান বিকল! ভারতের হাতে এল স্টিলথ প্রযুক্তির বিশাল সুযোগ, তোলপাড় বিশ্ব

বিশ্বের অন্যতম আধুনিক যুদ্ধবিমান ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির F-35B গত ১৪ জুন তিরুবনন্তপুরমে জরুরি অবতরণে বাধ্য হয়, যা এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনা বৈশ্বিক সামরিক প্রযুক্তির সমীকরণ পাল্টে দিতে পারে। প্রায় তিন সপ্তাহ পর অবশেষে ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ারিং দল এয়ার ইন্ডিয়ার এমআরও (Maintenance, Repair and Overhaul-MRO) হ্যাঙ্গারে মেরামত কাজ শুরু করেছে। এই কাজে বিমানের মার্কিন নির্মাতা সংস্থার ইঞ্জিনিয়াররাও তিরুবনন্তপুরমে পৌঁছেছেন। এটি আমেরিকান এবং ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞদের একটি নতুন দল, যাদের আগে বেশ কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেছেন।

ভারত শুরু থেকেই চেয়েছিল যে এই ফাইটার জেটকে রক্ষণাবেক্ষণ হ্যাঙ্গারে নিয়ে গিয়ে মেরামত করা হোক, কিন্তু ব্রিটিশ নেভি এতদিন তাতে রাজি ছিল না। অবশেষে তাদের ভারতের কথা মানতে বাধ্য হতে হলো। এই অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি ভারতের জন্য এক বিরল প্রযুক্তিগত সুযোগ নিয়ে এসেছে। ১১০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের এই বিমানটি কড়া নিরাপত্তায় রাখা হয়। এখন এই অত্যাধুনিক মার্কিন যুদ্ধবিমান ভারতীয় এমআরও টেকনিশিয়ান এবং গ্রাউন্ড টিমের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এতে ভারতীয় ইঞ্জিনিয়াররা স্টিলথ জেটটির গঠন, কুলিং সিস্টেম, কোটিং প্রযুক্তি এবং সেন্সর অ্যালাইনমেন্ট সম্পর্কে অনেক কিছু শিখতে পারবেন, যা অত্যাধুনিক মার্কিন স্টিলথ প্রযুক্তি সম্পর্কে নতুন তথ্য দেবে।

স্টিলথ ফাইটার জেটের বিরল ত্রুটি এবং ভারতের প্রযুক্তিগত সুযোগ
F-35B-এর হঠাৎ প্রযুক্তিগত ত্রুটি ব্রিটেন এবং আমেরিকার জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এটি ভারতের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। ভারত নিজস্ব পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কম্ব্যাট এয়ারক্রাফ্ট (AMCA) তৈরি করছে। প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO) বহু বছর ধরে স্টিলথ প্রযুক্তিতে কাজ করছে, কিন্তু প্রোটোটাইপের অভাবে তাদের কাজ কঠিন হয়ে পড়ছিল। ভারতে F-35B-এর উপস্থিতি ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারদের একটি বাস্তব স্টিলথ জেটের অভ্যন্তরীণ প্রযুক্তি, মেরামত পদ্ধতি এবং সার্ভিসিং প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে।

F-35B কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
F-35B কোনো সাধারণ যুদ্ধবিমান নয়। এটি লকহিড মার্টিনের মতো মার্কিন কো ম্পা নি তৈরি করেছে এবং ন্যাটোর (NATO) অনেক দেশ এটি ব্যবহার করে। এটি রাডার এড়াতে সক্ষম স্টিলথ প্রযুক্তি, সুপারসোনিক গতি এবং আধুনিক সেন্সর যুক্ত একটি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান। ব্রিটিশ রয়্যাল নেভি দ্বারা ব্যবহৃত এর উল্লম্ব টেকঅফ এবং ল্যান্ডিং (VTOL) ক্ষমতা এটিকে আরও বিশেষ করে তোলে। এর মেরামত ও সমস্যা সমাধান অত্যন্ত সতর্কতার সাথে করা হয়।

কেন আমেরিকা ও ব্রিটেনের ইঞ্জিনিয়ারদের ‘অস্ত্র ত্যাগ’ করতে হলো?
এর আগে কখনো এমন হয়নি যে কোনো F-35B যুদ্ধবিমান অন্য কোনো দেশে সপ্তাহের পর সপ্তাহ মেরামতের জন্য আটকে থাকে। সাধারণত, এমন বিমানের মেরামত কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে করা হয় বা তাদের নিরাপদ ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। ভারতে একটি বাণিজ্যিক এমআরও সুবিধায় মেরামত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া একটি বড় পরিবর্তন, যা দেখায় যে যুক্তরাজ্য এবং আমেরিকার আর কোনো বিকল্প ছিল না।

F-35B ঘটনা ভারতের জন্য এক কূটনৈতিক জয়
ভারত এই পরিস্থিতিকে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে সামলেছে, যা বিশ্ব মঞ্চে ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে নির্দেশ করে। ভারত এই বিমান নিয়ে কোনো রকম হট্টগোল করেনি। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ারদের নির্বিঘ্নে কাজ করতে দিয়েছে এবং সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা করেছে। যুক্তরাজ্য ভারতের ‘নিরন্তর সমর্থন ও সহযোগিতার’ জন্য ধন্যবাদও জানিয়েছে। এই সদিচ্ছা ভারত ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও বাড়াতে পারে।

যদিও ভারত এই ফাইটার জেটের সিস্টেমগুলোতে সম্পূর্ণ অ্যাক্সেস পাবে না এবং ব্রিটেন সংবেদনশীল তথ্য সুরক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবে, তবুও আশেপাশে কাজ করা ভারতীয় ইঞ্জিনিয়াররা জেটটির নির্মাণ, থার্মাল শিল্ডিং, রাডার-শোষণকারী উপাদান বা সেন্সর বিন্যাস সম্পর্কে কিছু তথ্য পেতে পারেন। DRDO-এর বিজ্ঞানী এবং HAL (Hindustan Aeronautics Limited)-এর মতো অ্যারোস্পেস কো ম্পা নিগুলির জন্য, এই ঘটনা তাদের গবেষণা বা সিমুলেশনের উপর ভিত্তি করে তৈরি ধারণাগুলিকে সঠিক প্রমাণ করতে সাহায্য করবে। সামান্য তথ্য পেলেও ভারতের স্টিলথ জেটের নকশা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে, বিশেষ করে মেটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং, ওজনের ভারসাম্য, ইঞ্জিন কুলিং এবং এয়ারফ্রেম রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *