সেমিকন্ডাক্টরের পর এবার বিরল খনিজ! ড্রাগনকে টক্কর দিতে ভারত আনছে নতুন নীতি

সেমিকন্ডাক্টর ক্ষেত্রে ভারত একটি দূরদর্শী নীতির মাধ্যমে বিপ্লব এনেছে এবং চীনকে যেভাবে চমকে দিয়েছে, ঠিক তেমনই যদি বিরল খনিজ পদার্থ (Rare Earth Materials) নিয়েও কিছু করা যায়, তাহলে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। এক দশক আগেও সেমিকন্ডাক্টরের জন্য ভারত চীনের দিকে তাকিয়ে থাকত, সেই ভারতই আজ এই ক্ষেত্রে এক বিশাল শক্তিতে পরিণত হয়েছে। গ্রেটার নয়ডা সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এখন সেমিকন্ডাক্টর তৈরি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ওষুধের কাঁচামাল API-এর জন্য চীনের উপর নির্ভরশীলতা কমাতেও ভারত দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ভারতীয় শিল্প কনফেডারেশনের (CII) চেয়ারম্যান রাজীব মেমানি মোবাইল থেকে শুরু করে সমস্ত ইলেকট্রনিক পণ্যে ব্যবহৃত বিরল খনিজগুলির জন্য ভারতের চীনের উপর নির্ভরতা নিয়ে সরকারকে সতর্ক করেছেন। তিনি আমেরিকার মতো ভারতকেও বিরল খনিজ পদার্থের নতুন বাজার খুঁজতে বা নিজেদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য নীতি আনার পরামর্শ দিয়েছেন। যদি সরকার এবং শিল্প দীর্ঘমেয়াদী উৎসাহমূলক নীতির আওতায় কাজ করে, তাহলে চীনের উপর নির্ভরশীলতা কমবে।
বিরল খনিজ নিয়ে চীনের একাধিপত্য
সিআইআই প্রেসিডেন্ট ভারতকে সেই সংবেদনশীল ক্ষেত্রগুলো বিশ্লেষণ করার পরামর্শ দিয়েছেন, যেগুলিতে ভারতের নির্ভরতা প্রতিবেশী দেশের উপর রয়েছে। ভারতকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, এই ধরনের বিরল খনিজ উপাদানগুলি নিজেদেরই খনন ও উৎপাদন করতে হবে, নাকি অন্য কোনো দেশে বিরল খনিজ খননের অধিকার অর্জন করে ঝুঁকি কমাতে হবে। এর জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে, তবে এখন শুরু করতে দেরি করা উচিত নয়।
আসলে, বিরল খনিজ (Rare Earth Minerals) খনন ও প্রক্রিয়াকরণে চীন বিশ্বে এক নম্বরে। বিশ্বের ৬০-৭০ শতাংশ বিরল খনিজ চীনেই খনন করা হয়। আফ্রিকা, পাকিস্তান থেকে শুরু করে আফগানিস্তান পর্যন্ত এমন বিরল খনিজ পদার্থের ভান্ডারের উপরও চীনের নজর রয়েছে। বিরল খনিজ পদার্থের রিফাইনিং-এর ৯০ শতাংশ ক্ষমতা চীনের দখলেই। আমেরিকা এবং ইউরোপীয় দেশগুলিও বিরল খনিজগুলির ক্ষেত্রে একই ধরনের উদ্বেগে ভুগছে। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তেই বিরল খনিজ পাওয়া যাক না কেন, সেগুলোকে চূড়ান্ত পণ্যে রূপান্তর করার জন্য এই বৃহৎ দেশগুলোও চীনের বাজারের উপর নির্ভরশীল হতে বাধ্য। চীন দীর্ঘ সময় ধরে বিরল খনিজ পদার্থের রিফাইনিং-এর জন্য ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। চীন পরিবেশগত মানদণ্ডে ছাড় দিয়েও শিল্পকে বড় সুবিধা দিয়েছে, ফলে বিশ্ব বাজারে চীনের আধিপত্য বজায় রয়েছে।
চীনের কৌশল ও ভারতের করণীয়
মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ-কম্পিউটার থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক যান, বায়ু টারবাইন এবং সামরিক সরঞ্জামগুলিতেও বিরল খনিজ ব্যবহার করা হয়। এমন বিরল উপাদানগুলির সাপ্লাই চেইন মার্কেটে চীনের দখল রয়েছে। চীন আগেও এমন বিরল খনিজগুলির অন্য দেশগুলিতে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করে দর কষাকষি করেছে, যার ফলে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে প্রভাব পড়েছিল। যদি চীন ভারতকে নিয়ে এমন কোনো প্রতিকূল পদক্ষেপ নেয়, তাহলে অটোমোটিভ এবং ইলেকট্রনিক্স-এর মতো ক্ষেত্রগুলোতে প্রভাব পড়তে পারে। কাঁচামাল, খরচ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করতে হবে।
বিরল খনিজ শিল্পের বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের আধিপত্য কমানোর চ্যালেঞ্জটি বেশ বড়। চীনের কাছে সস্তা কাঁচামাল এবং সস্তা শ্রম রয়েছে। তারা পরিবেশ এবং অন্যান্য মানদণ্ডেরও পরোয়া করে না, কিন্তু ভারতকে সমস্ত মানদণ্ড পূরণ করতে হবে। বিরল খনিজ, বিশেষ করে তেজস্ক্রিয় উপাদানগুলির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।
সেমিকন্ডাক্টর নীতিতে ভারতের সাফল্য
ভারত সেমিকন্ডাক্টর সেক্টরে চীন থেকে নিজেদের মুক্ত করার জন্য মোদী সরকারের সময় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। গ্রেটার নয়ডার ১১০০ একর এলাকায় ৩,৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সেমিকন্ডাক্টর হাবও তৈরি হচ্ছে। জেওয়ার বিমানবন্দরের কাছে এখানে প্রতি মাসে ৩.৫ কোটি চিপ তৈরি হবে। হিরানন্দানি গ্রুপ ২৮,৪৪০ কোটি টাকার সেমিকন্ডাক্টর প্রকল্পে বিনিয়োগের ঘোষণা করেছে। এই সাফল্যগুলি ভারতের আত্মনির্ভরশীলতার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ।