ভারত এবার সমুদ্রের রাজা হতে চলেছে! ১.৩০ লাখ কোটি টাকার মেগা পরিকল্পনা সরকারের

ভারত এবার সমুদ্রের রাজা হতে চলেছে! ১.৩০ লাখ কোটি টাকার মেগা পরিকল্পনা সরকারের

ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আমদানিকারক দেশ, এবং এখন দেশটি একটি প্রধান রফতানিকারক হওয়ার পথে যাত্রা শুরু করেছে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সমুদ্রের উপর আধিপত্য বিস্তার করা অত্যন্ত জরুরি। আর এর জন্য প্রয়োজন বিপুল সংখ্যক জাহাজের, যার প্রস্তুতি ভারতের সরকার শুরু করে দিয়েছে। ভারত এখন অভ্যন্তরীণ জাহাজ নির্মাণকে উৎসাহিত করার জন্য একটি নতুন পরিকল্পনার উপর কাজ করছে। এর কারণ হলো, বিদ্যমান পরিকল্পনা তার লক্ষ্য পূরণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে, যার ফলে সামুদ্রিক বাণিজ্যের মূল খেলোয়াড় হওয়ার পথে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

এই লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের মধ্যে একটি আলোচনা হয়েছে, যেখানে ২০০টি নতুন জাহাজের চাহিদা সামনে এসেছে। এই জাহাজগুলির আনুমানিক মূল্য ১.৩০ লাখ কোটি টাকা বলে জানানো হয়েছে। এই চাহিদা মূলত পেট্রোলিয়াম, ইস্পাত এবং সার মন্ত্রকগুলির পক্ষ থেকে বেশি দেখা গেছে। বন্দর, শিপিং এবং জলপথ মন্ত্রক ইটি-এর রিপোর্টে জানিয়েছে যে, শিপিং মন্ত্রক ভারতীয় পতাকাবাহী জাহাজগুলিতে কম আমদানি নিয়ে কাজ করছে এবং এর ফলে ১.৩ লাখ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ৮.৬ মিলিয়ন গ্রস টন (GT) ক্ষমতার প্রায় ২০০টি জাহাজের চাহিদা তৈরি হয়েছে। এই জাহাজগুলি পাবলিক সেক্টর কো ম্পা নিগুলির (PSU) যৌথ মালিকানাধীন হবে এবং আগামী কয়েক বছরে ভারতীয় শিপইয়ার্ডে তৈরি করা হবে।

বর্তমান পরিকল্পনার ব্যর্থতা ও নতুন পদক্ষেপ
ভারতীয় পতাকাবাহী বাণিজ্যিক জাহাজগুলির লাইনআপ শক্তিশালী করার জন্য কেন্দ্রের নতুন প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে কারণ এমন জাহাজগুলিকে উৎসাহিত করার বর্তমান ১,৬২৪ কোটি টাকার পরিকল্পনা তার লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হতে পারে। মেরিটাইম ট্রেড বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, আমদানিতে ভারতীয় পতাকাবাহী জাহাজ দ্বারা বহন করা পণ্যের অংশীদারিত্ব এখনও প্রায় ৮ শতাংশে রয়ে গেছে, যা ২০২১ সালে পরিকল্পনা শুরু হওয়ার পর থেকে কোনো পরিবর্তন হয়নি।

গণমাধ্যমের রিপোর্টে একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, এখন এই পরিকল্পনা পর্যালোচনা করা হবে, কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৩০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে এবং ভারতীয় পতাকাবাহী জাহাজগুলির অংশীদারিত্ব একক সংখ্যায় রয়ে গেছে। এই পরিকল্পনার ঘোষণা আর্থিক বছর ২২-এর বাজেটে করা হয়েছিল এবং জুলাই ২০২১ সালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এটিকে অনুমোদন করেছিল। কেন্দ্র এবং তার শাখাগুলি দ্বারা জারি করা গ্লোবাল টেন্ডারগুলিতে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় শিপিং কো ম্পা নিগুলিকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি প্রদান করে, আর্থিক বছর ২৬ পর্যন্ত তহবিল বিতরণ করার কথা ছিল। অপরিশোধিত তেল, তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (LPG), কয়লা এবং সারের মতো সরকারি পণ্যের আমদানির জন্য ছাড় দেওয়া হয়েছিল। দেশের রপ্তানি-আমদানি (EXIM) বাণিজ্যে ভারতীয় জাহাজের অংশীদারিত্ব ১৯৮৭-৮৮ সালের ৪০.৭ শতাংশ থেকে কমে আর্থিক বছর ২০১৯-এ প্রায় ৭.৮ শতাংশ হয়ে গেছে।

চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আনুষ্ঠানিক অনুমান অনুযায়ী, এর ফলে বিদেশি শিপিং লাইনগুলিকে প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়েছিল। ভারতীয় বন্দরগুলি ২০২৩-২৪ সালে প্রায় ১৫৪০.৩৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন (MMT) পণ্য পরিচালনা করেছে, যা এক বছর আগের তুলনায় ৭.৫ শতাংশ বেশি।

চ্যালেঞ্জসমূহ:

ভারতীয় পতাকাবাহী জাহাজগুলি মূলত ভারতীয় নাবিকদের নিয়োগ করে এবং অভ্যন্তরীণ কর ও কর্পোরেট আইন মেনে চলে, যা অপারেশনাল খরচ ২০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে অপারেশনাল খরচের প্রধান কারণ হলো উচ্চ সুদের হার, স্বল্প মেয়াদের ঋণ এবং ভারতীয় জাহাজে কর্মরত ভারতীয় নাবিকদের বেতনের উপর কর।

জাহাজ আমদানিকারক ভারতীয় কো ম্পা নিগুলোর উপর একটি ইন্টিগ্রেটেড জিএসটি, জিএসটি ট্যাক্স ক্রেডিট ডিট ব্লকড, দুটি ভারতীয় বন্দরের মধ্যে পরিষেবা প্রদানকারী ভারতীয় জাহাজগুলির উপর বৈষম্যমূলক জিএসটি রয়েছে; এগুলি সবই বিদেশি জাহাজের উপর প্রযোজ্য নয়।

দেশীয় শিল্প এই শুল্ক ও কর কমানোর জন্য লবিং করছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *