ভারতের শত্রুদের ‘পাকিস্তান পরিকল্পনা’, তুর্কি রকেট থেকে ড্রোন! বাংলাদেশের ভারত-বিরোধী ‘কিল চেইন ডকট্রিন’ সম্পূর্ণ

ভারতের শত্রুদের ‘পাকিস্তান পরিকল্পনা’, তুর্কি রকেট থেকে ড্রোন! বাংলাদেশের ভারত-বিরোধী ‘কিল চেইন ডকট্রিন’ সম্পূর্ণ

ভারতের শত্রুরা এখন পাকিস্তানকে অনুসরণ করে বাংলাদেশকে সামরিক সহায়তা দেওয়া শুরু করেছে। গত দেড় দশক ধরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যে সামরিক আধুনিকীকরণ পরিকল্পনা ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ নিয়ে কাজ করছিল, তা এখন একটি চূড়ান্ত মোড় নিয়েছে। এই পরিকল্পনার অধীনে, বাংলাদেশ সম্পূর্ণভাবে তুর্কি নির্মিত টিআরজি-৩০০ কাপলান গাইডেড মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম (MLRS) এবং বায়রাকতার টিবি২ ড্রোন (Bayraktar TB2 Drone) সক্রিয় পরিষেবায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই সামরিক সরঞ্জামগুলির অন্তর্ভুক্তি ভারতের জন্য নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে এবং আঞ্চলিক সামরিক ভারসাম্যে পরিবর্তন আনছে।

২০১৯ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তুরস্কের রকেটসান (Roketsan) দ্বারা তৈরি টিআরজি-৩০০/২৩০ সারফেস-টু-সারফেস ট্যাকটিক্যাল ব্যালিস্টিক মিসাইল সিস্টেমের জন্য তাদের প্রথম ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করে। ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে টিআরজি-৩০০ সিস্টেমের প্রথম ব্যাটারি বাংলাদেশে পৌঁছাতে শুরু করে। এরপর থেকে তুরস্ক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ চালিয়ে যাচ্ছে, যার মধ্যে আনুমানিক ১৮ বা তার বেশি লঞ্চার, রিলোড ট্রাক, মোবাইল কমান্ড পোস্ট এবং সহায়ক লজিস্টিক যানবাহন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই সিস্টেমটি ১৯০ কেজি ওজনের একটি উচ্চ-বিস্ফোরক ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম, যা ইস্পাত বল সাবমনিশন (steel ball submunitions) এর মাধ্যমে শত্রুর অঞ্চলে মারাত্মক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাতে পারে।

বাংলাদেশের ‘কিল চেইন’ ডকট্রিন এবং TB2 ড্রোন
এই সামরিক আধুনিকীকরণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বাংলাদেশের ‘কিল চেইন’ ডকট্রিন, যা ভারতের জন্য বিশেষভাবে চিন্তার কারণ। সি৪আইএসআর (C4ISR) অর্থাৎ কমান্ড, কন্ট্রোল, কমিউনিকেশনস, কম্পিউটারস, ইন্টেলিজেন্স, সার্ভেলেন্স এবং রিকনস্যান্স সাপোর্ট সিস্টেমের আইএনএস/জিএনএসএস ডুয়াল গাইডেন্স সিস্টেম এটিকে ১০ মিটারের মধ্যে নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম করে তোলে। শুধু তাই নয়, এটি জিপিএস জ্যামিং এবং ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ারের বিরুদ্ধেও শক্তিশালীভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যা এটিকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি অনন্য এবং ভবিষ্যতমুখী অস্ত্রে পরিণত করেছে। মনে করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশ এই সিস্টেমগুলোকে একত্রিত করে একটি ‘কিল চেইন’ নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। ‘কিল চেইন’ নেটওয়ার্কটি সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সময় সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছিল, যখন চীনসহ অনেক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ দাবি করেছিলেন যে চীনের সাহায্যে পাকিস্তান বিমান বাহিনী ভারতীয় যুদ্ধবিমানের বিরুদ্ধে একটি ‘কিল চেইন’ নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে।

কাপলান রকেট সিস্টেমের পাশাপাশি, বাংলাদেশ তুরস্ক থেকে ১২টি বায়রাকতার টিবি২ এমএএলই (মিডিয়াম অল্টিটিউড লং এন্ডুরেন্স) ড্রোনও কিনেছে। এর মধ্যে ছয়টি ২০২৩ সাল থেকে কার্যকর হয়েছে এবং বাকি ছয়টির সরবরাহ ২০২৫ সালে সম্পন্ন হচ্ছে। এই ড্রোনগুলো সেনাবাহিনীর আইএসআর রেজিমেন্টে মোতায়েন করা হয়েছে এবং প্রয়োজনে ভূমি লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করা, রিয়েল-টাইম ডেটা পাঠানো এবং রকেট বা মিসাইল নির্দেশনার কাজ করে।

ভারতের সতর্কতা এবং আঞ্চলিক প্রভাব
২০২৪ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সতর্ক করেছিল যে, যদি তাদের বায়রাকতার টিবি-২ ড্রোন মেঘালয়, ত্রিপুরা বা মিজোরামের সংবেদনশীল সীমান্ত এলাকার কাছাকাছিও আসে, তাহলে সেগুলোকে গুলি করে নামানো হবে। একই সঙ্গে, একজন জ্যেষ্ঠ ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তা বলেছিলেন যে “স্থায়ী এসওপি (SOP) এর অধীনে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ড্রোনকে উড়তে দেওয়া হয় না।” একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের একটি টিবি২ ড্রোন মেঘালয়-ত্রিপুরা অঞ্চলে ভারতীয় আকাশসীমার খুব কাছাকাছি উড়েছিল, যা একটি নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করেছিল। এই ড্রোনটি ঢাকার তেজগাঁও বিমানঘাঁটি থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল এবং এটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬৭তম আইএসআর ব্যাটালিয়ন দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিল। এই ঘটনাটি দেখায় যে এই নতুন অস্ত্রশস্ত্রের উপস্থিতি কেবল প্রযুক্তিগত নয়, এটি আঞ্চলিক কৌশলগত ভারসাম্যকেও প্রভাবিত করছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *