উদ্বেগজনক তথ্য! করোনা পরবর্তী সময়ে নিঃশব্দ মহামারী রূপে একাকীত্ব, প্রতি ঘণ্টায় ১০০ জনের মৃত্যু, WHO-এর সতর্কতা

সারা বিশ্ব যখন করোনার মতো মারণ রোগের সঙ্গে লড়াই করে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি প্রত্যক্ষ করেছে, তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে যে কেবল করোনা নয়, আরও অনেক রোগই গুরুতর পরিস্থিতি তৈরি করছে। এমনই একটি সমস্যা হল একাকীত্ব, যা এখন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কাছে এক বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের প্রতি ষষ্ঠ ব্যক্তি একাকীত্বের শিকার, এবং এই পরিস্থিতি একটি নীরব মহামারীর রূপ ধারণ করছে।
একাকীত্ব শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। শুধু তাই নয়, প্রতি ঘন্টায় প্রায় একশো মানুষের মৃত্যু হচ্ছে এর কারণে। WHO একাকীত্বকে একটি গুরুতর বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে ঘোষণা করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে একাকীত্বের সমস্যা নতুন না হলেও, এটি এখন স্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। করোনার সময় অর্থনৈতিক ও সামাজিক কার্যকলাপের হ্রাস এবং বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক পরিস্থিতির কারণে এই ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে গেছে।
২০২৩ সালে, WHO একাকীত্বের ক্রমবর্ধমান সমস্যার উপর একটি আন্তর্জাতিক কমিশনও গঠন করেছিল। গবেষণায় দেখা গেছে যে, বয়স্কদের মধ্যে একাকীত্ব ডিমেনশিয়ার মতো গুরুতর সমস্যা বিকাশের ঝুঁকি ৫০% বাড়িয়ে দেয়, যেখানে করোনারি আর্টারি রোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি ৩০% বৃদ্ধি পায়। এর প্রভাব তরুণদের জীবনেও পড়ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৫% থেকে ১৫% কিশোর-কিশোরী একাকীত্ব অনুভব করে। আফ্রিকায় এই সংখ্যা ১২.৭% এবং ইউরোপে এটি ৫.৩%।
আজকের যুগে, প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা আগের চেয়ে সহজ হয়েছে। মোবাইল, ভিডিও কল, অনলাইন মেসেজ এবং ভার্চুয়াল মিটিং এখন সাধারণ ব্যাপার, কিন্তু এই সমস্ত সুবিধা থাকা সত্ত্বেও, একাকীত্বের ক্রমবর্ধমান অনুভূতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। একাকীত্ব কেবল একটি মানসিক কষ্ট নয়, এটি প্রতি বছর আট লাখ সত্তর হাজারেরও বেশি মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে, অর্থাৎ প্রতি ঘন্টায় একশোরও বেশি মানুষ এর কারণে মারা যাচ্ছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সোশ্যাল কানেকশন কমিশনের রিপোর্টে এই সংকটের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। রিপোর্টের সহ-সভাপতি ড. বিবেক মূর্তি-র তথ্য অনুযায়ী, এই একাকীত্ব কেবল মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যকেই প্রভাবিত করছে না, বরং শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং অর্থনীতির উপরও গভীর প্রভাব ফেলছে। অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার, স্ক্রিন টাইম এবং নেতিবাচক অনলাইন আচরণ, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে, মানসিক চাপ আরও বাড়াচ্ছে। সামাজিক অংশগ্রহণ জীবনকে আরও দীর্ঘ, সুস্থ এবং আনন্দময় করে তোলে, যেখানে একাকীত্ব স্ট্রোক, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্মৃতিভ্রংশ এবং অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়।