“২১ শতকের সফটওয়্যার ২০ শতকের টাইপরাইটার দিয়ে চলে না”, ব্রিকস সম্মেলনে মোদীর কড়া বার্তা

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্রিকস (BRICS) সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি রবিবার বলেছেন যে, ‘গ্লোবাল সাউথ’ প্রায়শই “দ্বৈত মানদণ্ডের” শিকার হয়েছে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রধান অবদান রাখা দেশগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী মঞ্চে জায়গা পায় না। বৈশ্বিক শাসনে সংস্কার নিয়ে আয়োজিত এক অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী মোদী বিশেষ করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা এবং প্রধান আর্থিক সংস্থাগুলোতে সংস্কারের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, এগুলোতে বিশ্বের বর্তমান বাস্তবতা প্রতিফলিত হওয়া উচিত।
প্রধানমন্ত্রী মোদী জোর দিয়ে বলেছেন, “এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) যুগে, যেখানে প্রযুক্তি প্রতি সপ্তাহে বিকশিত হয়, সেখানে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ৮০ বছর ধরে সংস্কার ছাড়াই টিকে থাকা অগ্রহণযোগ্য। আপনি ২০ শতকের টাইপরাইটারে ২১ শতকের সফটওয়্যার চালাতে পারবেন না।” তিনি আরও বলেন যে, ‘গ্লোবাল সাউথ’ ছাড়া এই প্রতিষ্ঠানগুলো এমন মোবাইল ফোনের মতো, যার ভিতরে ‘সিম কার্ড’ আছে কিন্তু নেটওয়ার্ক নেই। ব্রিকসের শীর্ষ নেতারা বিশ্বের সামনে আসা চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন।
ব্রাজিলের সমুদ্রতীরবর্তী শহরে অনুষ্ঠিত দুই দিনের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম দিনে ব্রিকসের শীর্ষ নেতারা বিশ্বের সামনে উপস্থিত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং তার রুশ প্রতিপক্ষ ভ্লাদিমির পুতিন এই শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেননি। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এবং মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদুল-ফাতাহ আল-সিসিও সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না। ব্রিকস একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে কারণ এটি বিশ্বের ১১টি প্রধান উদীয়মান অর্থনীতিকে একত্রিত করে, যা বৈশ্বিক জনসংখ্যার প্রায় ৪৯.৫ শতাংশ, বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় ৪০ শতাংশ এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় ২৬ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে, জলবায়ু অর্থায়ন, টেকসই উন্নয়ন এবং প্রযুক্তির সহজলভ্যতা মতো বিষয়গুলোতে ‘গ্লোবাল সাউথ’ প্রায়শই আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই পায়নি। তিনি বলেন, ২০ শতকে নির্মিত বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানবতার দুই-তৃতীয়া অংশ এখনও যথাযথ প্রতিনিধিত্ব পায়নি। তিনি আরও বলেন, “আজকের বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যেসব দেশের বড় অবদান আছে, তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী মঞ্চে স্থান দেওয়া হয়নি।” তিনি যোগ করেন, “এটি কেবল প্রতিনিধিত্বের প্রশ্ন নয়, বরং বিশ্বাসযোগ্যতা এবং কার্যকারিতারও প্রশ্ন।” প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে বা ২১ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অক্ষম। ‘গ্লোবাল সাউথ’ বলতে সেই দেশগুলোকে বোঝায়, যারা প্রযুক্তি এবং সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে কম উন্নত বলে বিবেচিত হয়। এই দেশগুলো মূলত দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত। এতে আফ্রিকা, এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেন, “বিশ্বজুড়ে চলমান সংঘাতই হোক, মহামারীই হোক, অর্থনৈতিক সংকটই হোক বা সাইবার বা মহাকাশে উদীয়মান চ্যালেঞ্জই হোক, এই প্রতিষ্ঠানগুলো সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়েছে।”
বার্ষিক ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের সূচনা হয় সদস্য দেশগুলোর নেতাদের দ্বারা একটি সম্মিলিত ছবি তোলার মাধ্যমে, এরপর ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা তার ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, আজ বিশ্বের একটি নতুন বহুমেরু এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থার প্রয়োজন এবং এর শুরু হওয়া উচিত বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে। তিনি বলেন, “সংস্কার কেবল প্রতীকী হওয়া উচিত নয়, বরং সেগুলোর বাস্তব প্রভাবও থাকা উচিত। শাসন ব্যবস্থা, ভোটাধিকার এবং নেতৃত্বের পদগুলোতে পরিবর্তন আনা উচিত।” প্রধানমন্ত্রী যুক্তি দেন যে, নীতি নির্ধারণে ‘গ্লোবাল সাউথ’ দেশগুলোর চ্যালেঞ্জগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। তিনি বলেন যে ব্রিকসের সম্প্রসারণ এই কথার প্রমাণ যে এটি এমন একটি সংগঠন যা সময়ের সাথে সাথে নিজেকে পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখন আমাদের জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) এবং বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতেও একই ইচ্ছাশক্তি দেখাতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) যুগে, যেখানে প্রতি সপ্তাহে প্রযুক্তির উন্নয়ন হয়, সেখানে কোনো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের ৮০ বছরে একবারও আপডেট না হওয়া গ্রহণযোগ্য নয়।” তিনি বলেছেন, “ভারত সবসময় নিজের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে মানবজাতির স্বার্থে কাজ করাকে নিজের কর্তব্য মনে করেছে।” প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “আমরা ব্রিকস দেশগুলোর সাথে মিলে সকল বিষয়ে গঠনমূলক অবদান রাখার জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”