এই বড় চুক্তি থেকে সরে আসল পাকিস্তান! ‘চিনকে বিশ্বাসঘাতকতা’ করল ইসলামাবাদ?

পাকিস্তান এবং চিনের বন্ধুত্ব সর্বজনবিদিত, কিন্তু এবার পাকিস্তান তার ‘বিশেষ বন্ধুকে’ কড়া ধাক্কা দিয়েছে। খবর ছিল যে, পাকিস্তান চিনের পঞ্চম প্রজন্মের J-35A স্টিল্থ ফাইটার জেট কেনার প্রথম বিদেশি দেশ হতে চলেছে। কিন্তু এখন ইসলামাবাদ এই খবরকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। পাকিস্তানের দাবি, এগুলো সবই নিছকই গুজব। তাহলে কি এটি চিনের কোনো চাল ছিল, নাকি বাজারে তাদের অস্ত্রশস্ত্রের প্রচারের চেষ্টা? আসুন, এই পুরো বিষয়টি বিস্তারিতভাবে জেনে নিই।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত অপারেশন সিন্ধুরের সময় পাকিস্তান চিনের অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় খবর ছড়ায় যে, পাকিস্তান চিনের J-35A স্টিল্থ ফাইটার জেট কিনতে চলেছে। এই বিমানটি তার উচ্চ-প্রযুক্তি এবং স্টিল্থ ফিচারের জন্য পরিচিত, যার তুলনা প্রায়শই আমেরিকার F-35 এর সাথে করা হয়। কিন্তু পাকিস্তান স্পষ্ট জানিয়েছে যে, এমন কোনো চুক্তি হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই খবরগুলি সম্ভবত চিনের কৌশলের অংশ, যাতে তারা তাদের বিমানগুলিকে বিশ্ব বাজারে প্রচার করতে পারে এবং অন্যান্য দেশকে আকৃষ্ট করতে পারে।
রাফালকে বদনাম করার ষড়যন্ত্র?
J-35A চুক্তি অস্বীকার করার খবরটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন এই আলোচনাও চলছিল যে চিন ফ্রান্সের রাফাল ফাইটার জেটকে বদনাম করার চেষ্টা করছে। মে ২০২৫-এ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষে ভারত রাফাল ব্যবহার করেছিল, যা তার শক্তি দেখিয়েছিল। কিন্তু ফ্রান্সের একটি গোয়েন্দা সংস্থা দাবি করেছে যে, চিনের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বিদেশে রাফালের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এর উদ্দেশ্য ছিল ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোকে রাফাল কেনা থেকে বিরত রাখা এবং তাদের J-35A বিক্রির পথ সহজ করা।
ডিসকাউন্ট অফার থেকে শেয়ারের উল্লম্ফন
জুন ২০২৫-এ ব্লুমবার্গসহ (Bloomberg) অনেক আন্তর্জাতিক মিডিয়া হাউস খবর দিয়েছিল যে, পাকিস্তান চিনের শেনইয়াং এয়ারক্রাফ্ট কর্পোরেশনের J-35A জেট কিনতে প্রস্তুত। এও বলা হয়েছিল যে, পাকিস্তান এই চুক্তিতে প্রথম বিদেশি ক্রেতা হবে। এই খবরের পর শেনইয়াংয়ের শেয়ারে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা যায়। খবর ছিল যে, পাকিস্তান ৪০টি J-35A জেট সস্তায় কেনার পরিকল্পনা করছে। এই চুক্তিটি ‘ফ্ল্যাশ সেল’-এর আওতায় ছিল, যেখানে সহজ পরিশোধের শর্ত এবং আগস্ট ২০২৫-এর মধ্যে সরবরাহের প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই বিমানে AESA রাডার এবং PL-17 দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যা এটিকে অত্যন্ত বিপজ্জনক করে তোলে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর অস্বীকার
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ একটি টিভি সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করেছেন যে, J-35A নিয়ে কোনো চুক্তি হয়নি। তিনি ইশারা-ইঙ্গিতে বলেছেন যে, এই খবরগুলি চিনের প্রতিরক্ষা শিল্পকে উজ্জ্বল করার জন্য ছড়ানো হয়েছে। যদিও, কিছু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিরক্ষা সূত্র এর আগে দাবি করেছিল যে, পাকিস্তান বিমান বাহিনী এই চুক্তি অনুমোদন করেছে। শুধু তাই নয়, এও বলা হয়েছিল যে, পাকিস্তানি পাইলটদের প্রশিক্ষণ চিনে শুরু হয়ে গেছে। দাবি অনুযায়ী, এই জেটগুলি ভারতের অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট (AMCA) প্রোগ্রামের জবাব দেওয়ার জন্য কেনা হচ্ছে। AMCA ২০৩৫ সালের পর শুরু হওয়ার কথা।
এই অস্বীকারের পেছনের গল্প কী?
পাকিস্তানের অস্বীকার অনেক প্রশ্ন তৈরি করছে। এটি কি সত্যিই গুজব ছিল? নাকি চিন তাদের বিমানের বিপণনের জন্য এই খবর ছড়িয়েছিল? বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি চিনের কৌশল হতে পারে, যাতে তারা তাদের অস্ত্রশস্ত্রকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে পারে। অন্যদিকে, কিছু লোক মনে করেন যে, পাকিস্তান হয়তো অর্থনৈতিক বা কৌশলগত কারণে এই চুক্তি থেকে পিছিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।