উটনির দুধ ২০টি মারাত্মক রোগ সারায়! বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের মস্তিষ্ককে কম্পিউটারের মতো তীক্ষ্ণ করে তোলে

যদি আপনি উটনির দুধ (camel milk) এড়িয়ে চলেন, তাহলে এর উপকারিতা জেনে নিন। উটনির দুধ অনেক রোগের জন্য উপকারী এবং এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। উটনির দুধ মস্তিষ্কের রোগের জন্য একটি মহৌষধ হতে পারে। বিকানেরের ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার অন ক্যামেল (NRCC) সম্প্রতি একটি গবেষণা চালিয়েছে। এতে দেখা গেছে যে, উটনির দুধ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য অমৃতের সমান। রাজ্য সরকারও উটকে রাজ্য পশু হিসেবে ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে, NRCC উটনির দুধ থেকে তৈরি অনেক পণ্য বাজারে এনেছে এবং এই উপকারী দুধ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে কৃষকদের উৎসাহিত করছে।
কেন্দ্রের পরিচালক এন.ভি. পাতিল বলেছেন যে, পাঞ্জাবের ফরিদকোটের বিশেষ শিশুদের একটি কেন্দ্রে টানা তিন মাস ধরে প্রায় ১০ জন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুকে প্রতিদিন সকালে ৩০০ মিলি এবং সন্ধ্যায় ৩০০ মিলি উটনির দুধ দেওয়া হয়েছিল। এই শিশুদের মধ্যে অন্যান্য বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের তুলনায় বেশি বৃদ্ধি দেখা গেছে।
উটনির দুধের উপকারিতা
মস্তিষ্কের বিকাশ: যারা নিয়মিত উটনির দুধ পান করে, তাদের মস্তিষ্ক সাধারণ শিশুদের তুলনায় দ্রুত বিকাশ লাভ করে। এর ফলে তাদের চিন্তাভাবনা এবং বোঝার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এটি শিশুদের পুষ্টিহীনতা থেকে রক্ষা করে এবং তাদের বৌদ্ধিক ক্ষমতার বিকাশে সহায়ক।
সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর: উটনির দুধ খুব দ্রুত হজম হয়। এতে দুগ্ধ শর্করা, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, কার্বোহাইড্রেট, সুগার, ফাইবার, ল্যাকটিক অ্যাসিড, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ভিটামিন বি২, ভিটামিন সি, সোডিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, জিঙ্ক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ-এর মতো অনেক উপাদান পাওয়া যায়, যা আমাদের শরীরকে সুন্দর ও রোগমুক্ত রাখে।
হাড়ের শক্তি ও ক্যান্সার প্রতিরোধ: উটনির দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়, যা হাড়কে মজবুত করে। এতে থাকা ল্যাক্টোফেরিন নামক উপাদান শরীরকে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা তৈরি করে। এটি রক্ত থেকে টক্সিন দূর করে এবং লিভারকে পরিষ্কার রাখে। পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেও অনেকে এটি সেবন করেন। এটি ভাইরাল সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও সহায়ক।
প্রচুর ইনসুলিন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: উটনির এক লিটার দুধে প্রায় ৫২ ইউনিট ইনসুলিন পাওয়া যায়, যা অন্যান্য পশুর দুধে পাওয়া ইনসুলিনের পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি। ইনসুলিন শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করার কাজ করে।
সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ: উটনির দুধ ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানে ভরপুর। এতে অ্যান্টিবডিও থাকে যা শরীরকে সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত সেবনে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ হয় এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক। যক্ষ্মা, অন্ত্রের প্রদাহের ক্ষেত্রেও এটি উপকারী। এটি ছোটখাটো রোগের জন্য উপকারী এবং গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারের মারাত্মক কোষগুলিকে প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে। এতে হেপাটাইটিস সি, এইডস, ডায়াবেটিস, আলসার, হৃদরোগ, গ্যাংগ্রিন, কিডনি সংক্রান্ত রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করার প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। এটি শরীরে এমন কোষ তৈরিতেও সাহায্য করে যা সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি হিসেবে কাজ করে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি: উটনির দুধে আলফা হাইড্রোক্সিল অ্যাসিড থাকে, যা ত্বককে উজ্জ্বল করে। এই কারণেই এটি সৌন্দর্য সংক্রান্ত সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের জন্য একটি সুষম খাবার হিসেবে কাজ করে। যারা অল্প কাজ করেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন, তাদের সারাদিন কাজ করার ক্ষমতা তৈরি করে।
বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা: উটনির দুধ (camel milk) ডায়াবেটিস, হাঁজল, অটিজম, শিশুদের দুধে অ্যালার্জি, রক্তচাপ সহ বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে। এছাড়া ম্যালেরিয়ার জন্যও এই দুধ বেশ কার্যকর। উটনির দুধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি থাকে, যা পান করার পর মানুষ অনেক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা অর্জন করে।