বাবা-ভাইকে হারানো, বোনের ক্যান্সারের লড়াই… তবুও হাল ছাড়েননি আকাশ দীপ, গড়েছেন ইতিহাস!

বাবা-ভাইকে হারানো, বোনের ক্যান্সারের লড়াই… তবুও হাল ছাড়েননি আকাশ দীপ, গড়েছেন ইতিহাস!

ক্রিকেট বিশ্বে দ্রুত উদীয়মান নাম আকাশ দীপ আজ ইংল্যান্ডের এজবাস্টন মাঠে ভারতকে জয় এনে দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন। তবে তার পেছনের গল্পটি বেদনা, ত্যাগ এবং অটুট সাহসের এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত। একদিকে বাবার অসুস্থতা ও মৃত্যু, অন্যদিকে বড় ভাইয়ের আকস্মিক মৃত্যুতে ভেঙে পড়া পরিবার, আর এখন বোনের ক্যান্সার— এই সমস্ত ট্র্যাজেডির পরেও আকাশ কেবল নিজেকে সামলাননি, বরং দেশের জন্য ইতিহাসও তৈরি করেছেন। এটি কেবল ক্রিকেটার হওয়ার গল্প নয়, এটি সেই যুবকের কাহিনী जिसने প্রতিটি দুঃখকে সিঁড়ি বানিয়ে স্বপ্নের উচ্চতায় পৌঁছেছেন।

বিহারের রোহতাস জেলার ছোট্ট গ্রাম বাড্ডি থেকে উঠে এসে টিম ইন্ডিয়ার অংশ হওয়া এই দ্রুতগতির বোলার ইংল্যান্ডের মাটিতে এমন এক ইতিহাস তৈরি করেছেন, যার প্রতিধ্বনি এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শোনা যাচ্ছে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এজবাস্টন টেস্টে তিনি এমন বোলিং করেছেন যা বহু বছর ধরে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে তিনি মোট ১০ উইকেট শিকার করেন এবং ভারতের দুর্দান্ত জয়ের নায়ক হয়ে ওঠেন।

৪৬ বছর পর ভারতের হয়ে অনন্য রেকর্ড
আকাশ দীপ, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একই টেস্টে ১০ উইকেট নেওয়া হাতে গোনা কয়েকজন ভারতীয় বোলারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এর চেয়েও বড় কথা হলো, তিনি ১৯৭৬ সালের পর প্রথম ভারতীয় বোলার যিনি ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে তাদের টপ-৫ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে চারজনকে আউট করেছেন।

তার বাবা চাইতেন ছেলে সরকারি চাকরি করুক, কিন্তু ভাগ্য অন্য কিছু নির্ধারণ করে রেখেছিল। যখন আকাশ ক্রিকেটের দিকে এগোচ্ছিলেন, তখনই ২০১৫ সালে বাবা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এবং দুই মাসের মধ্যেই বড় ভাইও ম্যালেরিয়ায় মারা যান। আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায় এবং পুরো পরিবারের দায়িত্ব আকাশের উপর এসে পড়ে, কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি।

বোনের জন্য উৎসর্গীকৃত পারফরম্যান্স
ম্যাচের পর আকাশ দীপ জানান যে, তিনি এই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স তার বড় বোন জ্যোতি সিংকে উৎসর্গ করেছেন, যিনি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ছেন। লখনউতে থাকা তার বোনের অসুস্থতা তাকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিয়েছে, কিন্তু তিনি এই বেদনাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করেছেন।

আকাশ দীপ তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেন বিহারের সাসারাম থেকে, কিন্তু সীমিত সংস্থান এবং সুযোগের অভাবে তিনি দুর্গাপুরের দিকে চলে যান। সেখান থেকে তার যাত্রা তাকে কলকাতায় নিয়ে আসে, যেখানে আসল সংগ্রাম এবং পরিচিতি শুরু হয়। বাংলার অনূর্ধ্ব-২৩ দলে সুযোগ পাওয়ার পর তিনি ২০১৭-১৮ মৌসুমে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে ৪২ উইকেট শিকার করেন এবং নির্বাচকদের নজর কাড়েন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *