ডলার নয়, স্থানীয় মুদ্রায় ব্যবসা! রাশিয়ার এই পরিকল্পনায় কেন ফুঁসছেন ট্রাম্প, ভারতেরই বা কী লাভ?

ডলার নয়, স্থানীয় মুদ্রায় ব্যবসা! রাশিয়ার এই পরিকল্পনায় কেন ফুঁসছেন ট্রাম্প, ভারতেরই বা কী লাভ?

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ব্রিকস দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যে জাতীয় মুদ্রার ব্যবহার বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ব্রিকস প্ল্যাটফর্মে একটি স্বাধীন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা (সেটেলমেন্ট সিস্টেম) তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন, যার লক্ষ্য লেনদেনকে দ্রুত, আরও দক্ষ এবং নিরাপদ করা। রাশিয়ার এই পরিকল্পনা আমেরিকার জন্য একাধিক ক্ষতির কারণ হতে পারে, আর সে কারণেই ডোনাল্ড ট্রাম্প এই প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ।

দশকের পর দশক ধরে মার্কিন ডলার বিশ্বের প্রধান রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে পরিচিত। এর মানে হলো, বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের একটি বড় অংশ ডলারে রাখে। বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিশেষ করে তেল এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের বাণিজ্য ডলারে সম্পন্ন হয়। এই আধিপত্য আমেরিকাকে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক অনন্য মর্যাদা দিয়েছে, যা তাদের কম সুদের হারে ঋণ নিতে এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার উপর গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সহায়তা করে। ডলারের এই আধিপত্যের কারণে আমেরিকা সরাসরি অনেক সুবিধা পায়; যেমন, কম খরচে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে এবং অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ডলার ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু ব্রিকসের ‘ডি-ডলারাইজেশন’ উদ্যোগ, যেখানে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নতুন সদস্য মিশর, ইথিওপিয়া, ইরান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত অন্তর্ভুক্ত, যদি সফল হয়, তাহলে ডলারের বৈশ্বিক চাহিদা ব্যাপকভাবে কমে যাবে, যার ফলে এর মূল্য হ্রাস পাবে এবং আমেরিকার আর্থিক ও ভূ-রাজনৈতিক সুবিধাগুলোও কমে যাবে।

ভারতের জন্য বড় সুবিধা
ডলারের পরিবর্তে জাতীয় মুদ্রায় ব্যবসা করার এই পরিকল্পনা ভারতের জন্য একাধিক বড় সুবিধা বয়ে আনতে পারে। বর্তমানে ভারত তার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য মার্কিন ডলারের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল, যা ডলারের মূল্যের ওঠানামার কারণে ভারতীয় অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলে। এর ফলে আমদানি ব্যয়বহুল এবং রপ্তানি কম প্রতিযোগিতামূলক হয়ে পড়ে। জাতীয় মুদ্রায় ব্যবসা করার সুযোগ পেলে ভারত এই মুদ্রার ঝুঁকি কমাতে পারবে। যখন রুপি ব্যবহার করে ব্যবসা হবে, তখন ভারতীয় ব্যবসাগুলোকে ডলার-রুপি বিনিময় হারের অস্থিরতা নিয়ে কম চিন্তা করতে হবে। এর ফলে ব্যবসার খরচও কমবে এবং রপ্তানি আরও প্রতিযোগিতামূলক হবে।

দ্বিতীয়ত, ভারত যখন তার বাণিজ্যের একটি বড় অংশ রুপি বা অন্যান্য জাতীয় মুদ্রায় নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হবে, তখন তাকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ (বিশেষ করে ডলার) বজায় রাখার প্রয়োজন কম হবে। এটি দেশের জন্য একটি বড় স্বস্তি হবে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সংকটের সময়, যখন ডলারের ঘাটতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এটি ভারতকে তার অর্থনৈতিক নীতিগুলোর উপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করবে। রুপির আন্তর্জাতিকীকরণ ভারতের বৈশ্বিক বাণিজ্যে দর কষাকষির ক্ষমতা বাড়াবে। যখন আরও বেশি দেশ রুপিকে পরিশোধের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করবে, তখন ভারত আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও বেশি অর্থনৈতিক প্রভাব অর্জন করবে। এটি ভারতকে নিজস্ব শর্তে বাণিজ্য চুক্তি করতে সক্ষম করবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *