১০০ টাকার বদলে ১১০ টাকার পেট্রোল ভরানোর সুবিধা, খুব কম লোকেই জানেন এই তথ্য! পেট্রোল পাম্প স্ক্যাম – এখনই পড়ুন এই খবর
আমরা অনেকেই হয়তো দেখেছি যে, কিছু লোক পেট্রোল পাম্পে ১০০, ২০০ বা ৫০০ টাকার বদলে ১১০, ২১০ বা ৫১০ টাকার পেট্রোল বা ডিজেল ভরাচ্ছেন। এটা দেখে অনেক সময় মনে প্রশ্ন জাগে যে, কেন এই লোকগুলো এমন অদ্ভুত অঙ্কে জ্বালানি ভরায়? এর পেছনে কি প্রতারণা থেকে বাঁচার কোনো কৌশল আছে, নাকি এটা কেবলই একটি ভুল ধারণা?
এই নিবন্ধে আমরা আপনাকে জানাব কেন মানুষ ১১০ টাকার পেট্রোল ভরায়, এর সাথে সম্পর্কিত ভুল ধারণা এবং বাস্তবতা কী এবং পেট্রোল পাম্পে তেল ভরানোর সঠিক পদ্ধতি কী হওয়া উচিত।
১১০ বা ৫১০ টাকায় তেল ভরানোর প্রবণতা কোথা থেকে শুরু হলো?
পেট্রোল পাম্পে সাধারণত গ্রাহকরা ১০০, ২০০ বা ৫০০ টাকার তেল ভরানোর কথা বলেন। কিন্তু আজকাল কিছু লোক ১১০, ২১০, বা ৫১০ টাকার পেট্রোল/ডিজেল ভরাওে। এর পেছনে একটি ধারণা হল যে, আপনি যদি এমন অস্বাভাবিক অঙ্কে পেট্রোল ভরান, তাহলে মেশিনে আগে থেকে সেট করা জালিয়াতি থেকে বাঁচতে পারবেন।
মানুষের সন্দেহ হয় যে, পেট্রোল পাম্পে মেশিনগুলোকে আগে থেকে ফিক্স করা থাকে, যাতে আপনি “১০০” বললেই বোতামটি চাপা হয় এবং আপনি কম পরিমাণে পেট্রোল পান।
পেট্রোল পাম্পের মেশিনে কি জালিয়াতি হয়?
এটা পুরোপুরি সঠিক নয় যে, প্রতিটি পেট্রোল পাম্পে জালিয়াতি হয়। কিন্তু এটাও সত্যি যে, কিছু জায়গায় গ্রাহকের সাথে প্রতারণা করা হতে পারে।
পেট্রোল পাম্পে মেশিনগুলো ডিজিটাল সেটিং এবং সফটওয়্যারের মাধ্যমে চলে। অনেক সময় কর্মীরা মেশিনে আগে থেকে সেট করা বোতাম যেমন ১০০, ২০০, ৫০০ টিপে তেল ভরে। এতে তাদের কাজ দ্রুত হয় এবং সময় বাঁচে।
কিন্তু কিছু ভোক্তা মনে করেন যে, এই সেটিংয়ের কারণে গন্ডগোল হতে পারে, তাই তারা মনে করেন যে, যদি তারা অস্বাভাবিক পরিমাণ যেমন ১১০ বা ৫১০ বলেন, তাহলে তারা তেলের সঠিক পরিমাণ পাবেন এবং মেশিনে আগে থেকে সেট করা কোনো গন্ডগোল কাজ করবে না।
১১০ টাকার তেল ভরানো কি প্রতারণা থেকে বাঁচায়?
এই কথায় পুরোপুরি সত্যি নেই। কারণ মেশিনে আপনি যে কোনো পরিমাণই প্রবেশ করান না কেন, তেলের পরিমাণ সেই দিনের নির্ধারিত হার অনুযায়ীই বের হবে। যদি মেশিনে কোনো গন্ডগোল থাকে, তাহলে তা ১০০ টাকাতেও কাজ করবে এবং ১১০ টাকাতেও।
তাই ১১০ টাকা ভরালে প্রতারণা থেকে বাঁচা যায়, এই ধারণাটি একটি ভ্রম। হ্যাঁ, এটা অবশ্যই যে, আপনি পেট্রোল ভরানোর সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখলে প্রতারণার শিকার হওয়া থেকে বাঁচতে পারবেন।
পেট্রোল ভরানোর সবচেয়ে সঠিক পদ্ধতি কী?
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হল, পেট্রোল বা ডিজেল ভরানোর সময় টাকার পরিবর্তে ‘লিটার’ হিসেবে ভরানো বেশি ভালো।
আসুন বুঝি কেন:
মেশিনে তেলের দাম আগে থেকে সেট করা থাকে, যেমন ৯৬.৭২ টাকা প্রতি লিটার।
যখন আপনি বলেন যে “২ লিটার পেট্রোল ভরুন”, তখন মেশিন সেই অনুযায়ী পরিমাণ নিজে থেকেই গণনা করে।
এতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আপনি যে পরিমাণ চান, সেটাই পাবেন, অনুমানের ভিত্তিতে নয়।
যখন আপনি টাকার পরিবর্তে লিটারে পেট্রোল ভরান, তখন কর্মীকে ম্যানুয়ালি এন্ট্রি করতে হয় এবং মেশিনের সেট বোতাম ব্যবহার হয় না, যার ফলে গন্ডগোলের সম্ভাবনা কমে যায়।
তেল ভরানোর সময় কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন?
সবসময় পেট্রোল পাম্প কর্মীকে “০” দেখাতে বলুন, যাতে মেশিনে আগে কোনো হস্তক্ষেপ না হয়।
লিটার অনুযায়ী পেট্রোল ভরান, টাকার হিসাবে নয়।
পেমেন্ট করার পর রসিদ (বিল) অবশ্যই নিন।
যদি সম্ভব হয়, সিসিটিভি ক্যামেরা (CCTV Camera) আছে এমন পেট্রোল পাম্পে যান।
তেল ভরার পুরো প্রক্রিয়াটির উপর নজর রাখুন এবং কারো সাথে কথোপকথনে জড়িয়ে পড়বেন না।
কিছু পেট্রোল পাম্পে কি জালিয়াতি হয়?
হ্যাঁ, কিছু ক্ষেত্রে এমনটা দেখা গেছে যে, পেট্রোল পাম্প কর্মীরা বিভ্রান্তি তৈরি করার কৌশল ব্যবহার করেন – যেমন কথায় ব্যস্ত রাখা, “নগদ টাকা নেই, ইউপিআই করুন” বলে মনোযোগ ঘুরিয়ে দেওয়া, অথবা দুটি নজল একসঙ্গে চালিয়ে গ্রাহককে বিভ্রান্ত করা।
তাই সবসময় সতর্ক থাকুন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ব্র্যান্ডেড পাম্পকে অগ্রাধিকার দিন। আপনি চাইলে ভোক্তা ফোরাম (Consumer Forum) বা পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের হেল্পলাইনে (Petroleum Ministry’s Helpline) অভিযোগও দায়ের করতে পারেন।