অন্যান্য দেশের মতো ভারতও এখন বিমান পরিবহনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করেছে। দেশে প্রথমবারের মতো এয়ার ট্যাক্সি পরিষেবা চালু হয়েছে, যা বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে এক নতুন পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।

এয়ার ট্যাক্সি কী?

এয়ার ট্যাক্সি বলতে বোঝানো হয় ছোট বিমান বা হেলিকপ্টারের মাধ্যমে শহরের মধ্যে দ্রুত এবং সুবিধাজনক ভ্রমণ। এই প্রতিবেদনে, আমরা ভারতের প্রথম এয়ার ট্যাক্সির ধারণা, এর নির্মাণ প্রক্রিয়া, এর ভাড়া, উচ্চতা, ওজন এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা সম্পর্কে আলোচনা করব।

ভারতের প্রথম এয়ার ট্যাক্সির ধারণা

এয়ার ট্যাক্সি হল একটি নতুন, স্মার্ট এবং দ্রুত বিমান পরিবহন পরিষেবা। এই পরিষেবার মাধ্যমে মানুষ ট্রাফিকের সমস্যার সমাধান পেতে পারে। দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু এবং অন্যান্য বড় শহরগুলিতে এই পরিষেবা চালু হয়েছে। ভারতে এয়ার ট্যাক্সি পরিষেবা শুরু করা কো ম্পা নির নাম “ডিসেন্ট এয়ারলাইনস”, যা এই ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে।

নির্মাণ প্রক্রিয়া

ভারতের প্রথম এয়ার ট্যাক্সি পরিষেবার নির্মাণ প্রক্রিয়া ২০১৯ সালে শুরু হয়। ডিসেন্ট এয়ারলাইনস সরকার থেকে সমস্ত প্রয়োজনীয় অনুমোদন সংগ্রহ করে এবং নিরাপত্তা বিধি মেনে চলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। বিমান সরঞ্জাম, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং পাইলট প্রশিক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা এবং সর্বাধুনিক উড়ান প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

কো ম্পা নির উদ্দেশ্য

ডিসেন্ট এয়ারলাইনসের প্রধান লক্ষ্য হল বড় শহরগুলিতে এয়ার ট্যাক্সির মাধ্যমে দ্রুত ভ্রমণের সুবিধা প্রদান করা। এই এয়ার ট্যাক্সি বিমানের আকার ছোট, কম জ্বালানী খরচ করে এবং পরিবেশবান্ধব। এর ফলে শহরের যানজট কমবে এবং মানুষ দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে।

এয়ার ট্যাক্সির চার্জ কত?

এয়ার ট্যাক্সির ভাড়া সাধারণ বিমান পরিষেবা বা হেলিকপ্টার পরিষেবার তুলনায় বেশি হতে পারে। তবে, ডিসেন্ট এয়ারলাইনস তাদের পরিষেবাকে সাধারণ মানুষের জন্য আরও আকর্ষণীয় করতে একটি সুবিধাজনক ভাড়া কাঠামো তৈরি করেছে।

একটি সাধারণ শহুরে রুটে ভ্রমণের সময়, একজন যাত্রীর জন্য ভাড়া ₹৫০০০ থেকে ₹১০,০০০ এর মধ্যে হতে পারে। এই ভাড়া বিমানের ওজন, রুট এবং যাত্রী সংখ্যার উপর নির্ভর করতে পারে।

বিমানের উচ্চতা, ওজন এবং আকার

এয়ার ট্যাক্সির উচ্চতা এবং ওজন সাধারণ বিমানের তুলনায় কম হয়। ডিসেন্ট এয়ারলাইনস Cessna 208 Caravan এবং Cessna 182 Skylane এর মতো হালকা বিমান ব্যবহার করছে। এই বিমানগুলি ৩০০০ থেকে ৫০০০ ফুট উচ্চতায় উড়তে পারে এবং এর ওজন সাধারণত ১০০০ কেজি এর কাছাকাছি হয়। এয়ার ট্যাক্সি পরিষেবার মূল লক্ষ্য স্বল্প দূরত্বে দ্রুত এবং নিরাপদ ভ্রমণ।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

ভারতের এয়ার ট্যাক্সি পরিষেবার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে, এই পরিষেবা দেশব্যাপী সম্প্রসারিত হবে। সরকার এয়ার ট্যাক্সির পরিকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে এবং হাইব্রিড ও বৈদ্যুতিক বিমানের ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশগত প্রভাব কমানোর চেষ্টা করছে।

এয়ার ট্যাক্সির সামাজিক প্রভাব

এয়ার ট্যাক্সি চালু হওয়ার ফলে ভারতের বড় শহরগুলিতে ট্রাফিক সমস্যার সমাধান হতে পারে। বিশেষ করে যেখানে রাস্তায় যানজট প্রচুর, সেখানে এয়ার ট্যাক্সি একটি কার্যকর সমাধান হবে। সময় বাঁচানোর জন্য এয়ার ট্যাক্সি একটি উত্তম বিকল্প।

এয়ার ট্যাক্সির প্রথম পর্যায়ের রুট

ভারতে এয়ার ট্যাক্সি পরিষেবা চালু হওয়ার পর, প্রথম পর্যায়ে কয়েকটি প্রধান রুটে পরিষেবা প্রদান করা হচ্ছে। এর লক্ষ্য ট্রাফিক জ্যাম থেকে মুক্তি পাওয়া এবং যাত্রীদের দ্রুত ও সুবিধাজনক ভ্রমণ প্রদান করা।

১. মুম্বাই-পুণে রুট

মুম্বাই ও পুণের মধ্যে যানজট একটি বড় সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য Blade India কো ম্পা নি মুম্বাই-পুণে রুটে এয়ার ট্যাক্সি চালু করেছে। এই রুটে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে মাত্র ৪৫ মিনিটে ভ্রমণ করা সম্ভব, যেখানে সড়ক পথে ৩-৪ ঘণ্টা সময় লাগে।

২. দিল্লি-গুরগাঁও রুট

দিল্লি ও গুরগাঁও (বর্তমানে গুরুগ্রাম) খুব কাছাকাছি হলেও, এই রুটে ট্রাফিক জ্যাম বড় বাধা। রোহিণী হেলিপোর্ট ও গুরুগ্রাম হেলিপোর্ট ব্যবহার করে এই রুটে এয়ার ট্যাক্সি চালুর পরিকল্পনা চলছে।

৩. মুম্বাই-নাসিক রুট

মুম্বাই থেকে নাসিকে দ্রুত যাতায়াতের জন্য এয়ার ট্যাক্সি পরিষেবা চালু করা হয়েছে। নাসিক একটি ধর্মীয় ও পর্যটন কেন্দ্র হওয়ায় এই রুটে দ্রুত যাতায়াতের চাহিদা রয়েছে।

৪. বেঙ্গালুরু-মাইসুরু রুট

বেঙ্গালুরু ও মাইসুরের মধ্যে সড়ক পথে যানজট সমস্যা সমাধানের জন্য এয়ার ট্যাক্সি পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

৫. দিল্লি-আগ্রা রুট

দিল্লি থেকে আগ্রার মধ্যে এয়ার ট্যাক্সি পরিষেবা চালু হচ্ছে। পর্যটকদের সুবিধার জন্য এই রুটে ১ ঘণ্টার মধ্যেই তাজমহলে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

৬. হায়দরাবাদ-ওয়ারাঙ্গল রুট

হায়দরাবাদ ও ওয়ারাঙ্গলের মধ্যে ছোট দূরত্বের দ্রুত ভ্রমণের জন্য এয়ার ট্যাক্সি পরিষেবা চালু হয়েছে।

৭. চণ্ডীগড়-শিমলা রুট

চণ্ডীগড় থেকে শিমলা যাওয়ার জন্য এয়ার ট্যাক্সি পরিষেবা চালু করা হয়েছে। শিমলা জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হওয়ায় এটি দ্রুত ও আরামদায়ক ভ্রমণের একটি বিকল্প হয়ে উঠবে।