বিষ্ণু নাগারের ব্যঙ্গ: সংঘ তো হিন্দুদের জাগাতে ব্যস্ত ছিল, কিন্তু আগের বেশিরভাগ হিন্দুরাই ছিল একগুঁয়ে!

খবর এসেছে যে, আগামী মাসে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত হতে চলা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রতিনিধিসভার বৈঠকে ‘হিন্দু জাগরণ’ নিয়ে আলোচনা হবে। এটি অত্যন্ত শুভ চিন্তা, কারণ গত সাড়ে দশ বছর ধরে হিন্দুদের এতটাই জাগানো হয়েছে যে, তারা রাতে কি, ঘুম কি, বিছানা কি, বিশ্রাম কি—সবই ভুলে গেছে।
সে এখন অসুস্থ, চড়চড়ে মেজাজের এবং আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। তার এখন চিকিৎসা ও বিশ্রামের প্রবল প্রয়োজন। ঘুম তার জন্য অত্যন্ত জরুরি। দরকার হলে তাকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া উচিত। ওষুধেও কাজ না হলে ইনজেকশন দেওয়া উচিত! এই দেশের হিন্দুরা এত বেশি জেগে রয়েছে যে, কুম্ভকর্ণের চেয়েও তার অবস্থা শোচনীয় হয়ে গেছে। কুম্ভকর্ণ অন্তত ছয় মাস জেগে থাকলে ছয় মাস ঘুমাতো, কিন্তু এই হিন্দুরা তো বছরের পর বছর জেগে আছে!
‘না খাব, না খেতে দেব’ বলার পরেও কিছু মানুষ নিজেদের মতো করে খায় ও খেতে দেয়। কিন্তু এই হিন্দুরা এতটাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এতটাই সত্যনিষ্ঠ যে, ‘না ঘুমাব, না ঘুমাতে দেব’—এই প্রতিজ্ঞায় অটল। অথচ অটল বিহারী বাজপেয়ীও তার নামে এতটা ‘অটল’ ছিলেন না! এই হিন্দু নিজে ঘুমাচ্ছে না, অন্য কাউকে ঘুমাতেও দিচ্ছে না। কখনও বুলডোজার নিয়ে বেরিয়ে আসে, কখনও নামাজের সময় হনুমান চালিসা পাঠ করতে শুরু করে। কখনও গরুর নামে হত্যাকাণ্ড চালায়, আবার কখনও সবজি থেকে মাংস বিক্রেতাদের পর্যন্ত হুমকি দেয়। কখনও উর্দুর বিরুদ্ধে, কখনও আবার ঔরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে হট্টগোল তোলে।
এটি গোটা দেশকে হিন্দু জাগরণ মঞ্চ বানিয়ে তুলেছে। তাই এখন তার ঘুমানো একান্ত প্রয়োজন। যদি এভাবে আরও জেগে থাকে, তবে দেশটাই ঘুমিয়ে পড়বে। তাই প্রতিনিধিসভার কাছে অনুরোধ, তারা যেন হিন্দুদের ঘুমানোর জন্য আহ্বান জানায়। বরং সংঘ ও তার মহান নেতারাও যেন ঘুমিয়ে যান, কিছুটা বিশ্রাম নিন। এতে তাদের স্বাস্থ্য যেমন ভালো থাকবে, তেমনই দেশেরও মঙ্গল হবে।
সংঘের নেতারা গত ১০০ বছর ধরে হিন্দুদের জাগাতে ব্যস্ত। এতদিনের পর তাদের বিশ্রামেরও অধিকার রয়েছে, এবং তারা যেন এই অধিকার আদায় করেই নেন! আমার তো পরামর্শ, আজ থেকেই, বরং এখন থেকেই সংঘের বিশ্রাম নেওয়া শুরু করা উচিত! তারা যদি ঘুমিয়ে পড়ে, নিশ্চিতভাবেই হিন্দুরা বিপদমুক্ত হবে।
হিন্দু-প্রধান দেশে হিন্দুরাই যদি বিপদে থাকে, সেটাই এক আজব ব্যাপার! আর তার চেয়েও বড় আশ্চর্য, যখন তাদেরই এক “বিশেষ” মানুষ গত ১১ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন, তখন হিন্দুরা সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে!
এখন তো সংঘের উচিত হিন্দুদের এই “বিপদ” থেকে মুক্ত করা। আর কত হুমকি সহ্য করবে এই হিন্দু? চীন থেকে ভয়, পাকিস্তান থেকে ভয়, আর এখন নিজের দেশের মুসলমানদের থেকেও ভয়!
সংঘ তো হিন্দুদের জাগানোর কাজে ব্যস্ত ছিল, কিন্তু আগের হিন্দুরা বেশ একগুঁয়ে ছিল। কখনও দু’দিনের জন্য জেগে উঠতো, তারপর আবার দুই, চার বা দশ বছরের জন্য ঘুমিয়ে পড়তো। মুখ ধুতো, চা-নাশতা করতো, আবার ঘুমিয়ে পড়তো। লাঞ্চ করতো, তারপর আবার ঘুম। রাতের খাবারের জন্য ডাকতে গেলে বলতো—”ডিনার পারবো না, লাঞ্চই এখনো হজম হয়নি!” এরপরও কোনোমতে খেয়ে আবার নাক ডাকিয়ে ঘুমিয়ে যেত।
যখন হিন্দুরা ঘুমিয়ে থাকতো, তখন সবাই শান্তিতে ছিল। সংঘ তখন বলতো, “উত্তিষ্ঠ—জাগৃত!” কিন্তু হিন্দুরা শুনতো না। এমনকি ধ্বজ প্রণামও তারা ঘুমের ঘোরেই করতো!
৪৩ বছর আগে সংঘ হিন্দুদের জাগাতে ‘হিন্দু জাগরণ মঞ্চ’ তৈরি করেছিল, কিন্তু হিন্দুরা তখন এতটাই ঘুমপ্রিয় ছিল যে, সেই মঞ্চে বসেই তারা ঘুমিয়ে পড়তো! তখন হিন্দুরা ঘুমালে সংঘ অস্থির হয়ে যেত। আর এখন তারা জেগে থাকায় পুরো দেশ অস্থির হয়ে উঠেছে!
তাই হে ভাগবতজি, এমন কিছু ভাগবত-কথা বলুন, যাতে আপনার শ্রোতারা শুনতে শুনতেই ঘুমিয়ে পড়ে। তারা স্বস্তিতে থাকুক, আপনিও কিছুটা বিশ্রাম নিন! হিন্দুদের জন্য আপনারা যথেষ্ট সেবা করেছেন। এখন যদি তাকে আরও বেশি সেবার অভ্যাস করিয়ে দেন, তাহলে আজীবন আপনাদের সেবায় ব্যস্ত থাকতে হবে!
আপনারা যে লাঠি তাদের হাতে লড়াইয়ের জন্য তুলে দিয়েছেন, তারা সেটাকে লাঠির মতো না ধরে ওয়াকিং স্টিক হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করলে কি করবেন? তাই এবার দয়া করুন—নিজের প্রতিও এবং তাদের প্রতিও!
আর মনে রাখবেন, ‘বিশ্রাম হারাম’—এই উক্তিটি কিন্তু নেহরু দিয়েছিলেন, সংঘ নয়! আর সংঘের সবচেয়ে বড় শত্রু তো তিনিই ছিলেন! সুতরাং, এবার বিশ্রাম করুন এবং অন্যদেরও বিশ্রাম নিতে দিন!