নাইটিতে শরীর, আট মাসের সন্তান গর্ভে, হাতে মাত্র ৫ টাকা… বিয়ের পর তছনছ হয়ে গেল জীবন

কিছু গল্প এতটাই আবেগপ্রবণ হয় যে বিশ্বাস করাও কঠিন হয়ে যায়। বিশেষ করে যখন সেই ক্ষত নিজের কাছের মানুষদের দেওয়া হয়। ‘নিউজ ১৮’-এর বিশেষ সিরিজ ‘ইউটিউব রৌলা’-তে আজ আমরা কথা বলব এমন এক ইউটিউবারের, যাকে প্রতারণা করেছে তাঁর নিজের পরিবার।
শ্বশুরবাড়ি গ্রহণ করেনি, এমনকি নিজের বাবা-মাও ফিরিয়ে দিয়েছেন। এই কাহিনি বলতে গিয়েই তিনি নিজেও কেঁদে ফেলেন। আসুন, পরিচয় করিয়ে দিই সেই ইউটিউবারের সঙ্গে।
কে এই ইউটিউবার?
এই ইউটিউবারের নাম অলকা জয়সওয়াল। তিনি এক মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছেন, যেখানে তাঁর বাবা একজন সরকারি কর্মচারী এবং তিনি ছয় ভাই-বোনের মধ্যে ছোট। মাত্র ৬ বছর বয়সে তিনি টিবির মতো ভয়ানক রোগের কষ্ট সহ্য করেছেন। অনেক সংগ্রামের পর সেই রোগকে জয় করে তিনি পড়াশোনা সম্পন্ন করেন।
অলকা জয়সওয়ালের জীবনসংগ্রাম
অন্য মেয়েদের মতো তিনিও স্বপ্ন দেখেছিলেন সুন্দর এক দাম্পত্য জীবনের। কিন্তু তিনি কখনো ভাবতেও পারেননি যে বিয়ের পর তাঁর জীবন এতটা দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। পরিবারের পক্ষ থেকে যাচাই-বাছাই করে তাঁদের ছোট মেয়ের বিয়ে ধুমধাম করে দেওয়া হয়।
বিয়ের পর শুরু হলো প্রতারণা
অলকা মাঙ্গলিক, তাই তাঁর পরিবারও একটি মাঙ্গলিক ছেলের সন্ধান করেছিল। বিয়ের আগে তাঁকে জানানো হয়েছিল যে ছেলেটি একজন সরকারি অফিসার এবং মার্চেন্ট নেভিতে স্থায়ী চাকরি করছে। এটি শুনে তিনি খুশি হয়েছিলেন, কারণ তিনি মনে করেছিলেন যে তাঁর জীবনসঙ্গী একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি হবেন।
কিন্তু বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে তিনি হতবাক হয়ে যান। প্রথম এক-দুই দিন সব ঠিকঠাক চললেও দ্রুতই তিনি বুঝতে পারেন যে তাঁর সঙ্গে ভয়ানক প্রতারণা করা হয়েছে।
মিথ্যা পরিচয় এবং জালিয়াতি
অলকা এবং তাঁর পরিবারকে বলা হয়েছিল যে বর মার্চেন্ট নেভিতে চাকরি করেন। কিন্তু বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, ছেলেটির কোনো স্থায়ী চাকরি নেই। এমনকি তার দ্বাদশ শ্রেণির সার্টিফিকেটও নকল। বয়স নিয়েও প্রতারণা করা হয়েছিল—ছেলেটি অলকার চেয়ে অনেক বড় ছিল।
যখন অলকা এই সত্যটা তাঁর বাবার বাড়িতে জানান, তখন তাঁর পরিবার তাঁকে আবার শ্বশুরবাড়ি ফিরে যেতে বলে। তিনি মনের কষ্ট গোপন রেখে সবকিছু মেনে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
গর্ভাবস্থায় অসহনীয় কষ্ট
এর মধ্যেই অলকা গর্ভবতী হন। কিন্তু তাঁর কাছে চিকিৎসার খরচ চালানোর মতো টাকাও ছিল না। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাঁকে সন্তানসম্ভবা অবস্থায় বাবার বাড়ি ফিরে যেতে বলে। কিন্তু তিনি কোনোভাবে সেখানে থেকেই টিকে থাকার চেষ্টা করেন। প্রতিদিন তিনি এই দুশ্চিন্তায় থাকতেন যে কীভাবে ডেলিভারির খরচ জোগাড় করবেন, কীভাবে ব্যথা সহ্য করবেন।
গার্হস্থ্য সহিংসতার শিকার
অলকা ইউটিউবে তাঁর কাহিনি শেয়ার করেছেন, যেখানে তিনি জানিয়েছেন যে তাঁর স্বামী কোনো কাজ করতেন না, উপরন্তু নেশাগ্রস্ত ছিলেন। একাধিকবার তিনি স্বামীর হাতে মারও খেয়েছেন। তাঁর বাবা-মা বিষয়টি পুলিশে পর্যন্ত জানিয়েছিলেন।
স্বামী তাঁকে ছেড়ে পালিয়ে যায়
অলকার সন্তান প্রি-ম্যাচিউর জন্ম নেয়। এই কঠিন সময়েও তাঁর স্বামী তাঁকে সম্পূর্ণ একা ফেলে দেন। তিনি কোনো দায়িত্ব নেননি, এমনকি হাসপাতালের বিলও পরিশোধ করেননি। শেষমেশ অলকার বাবা-মাকে ৪১ হাজার টাকা দিয়ে হাসপাতালের বিল মেটাতে হয়, আর ততক্ষণে অলকার স্বামী সেখান থেকে পালিয়ে যায়। তখনই অলকার বাবা-মা সিদ্ধান্ত নেন যে তাঁদের মেয়ে আর এই লোকের সঙ্গে থাকবে না।
৮ মাসের গর্ভবতী অবস্থায় রাস্তায় নিঃস্ব অবস্থায়
এক ভিডিওতে অলকা তাঁর সবচেয়ে খারাপ দিনের কথা বলেন—যখন তিনি ৮ মাসের গর্ভবতী ছিলেন এবং শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাঁকে তাড়িয়ে দেয়। তিনি তখন শুধু একটি নাইটি পরে ছিলেন, হাতে ছিল মাত্র ৫ টাকা, আর পেটে ছিল ৮ মাসের সন্তান। সেই দিন তিনি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছেন, কোথাও আশ্রয় পাননি।
মাত্র ৫ টাকা হাতে, আত্মহত্যার চিন্তা
অলকা বলেন, “আমার মনে হচ্ছিল আমি আত্মহত্যা করে ফেলি। আমি পরিবারকে বোঝা বানতে চাইনি। পেটে বাচ্চা ছিল, মুখে-নাকে আঘাতের চিহ্ন ছিল। আমি একটা নাইটি পরে ছিলাম, আমার অবস্থা ছিল একেবারে পাগলের মতো। হাতে মাত্র ৫ টাকা ছিল। ভাবছিলাম, কি করব? ভিক্ষা করব নাকি অন্য কিছু করব? আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল।”
জীবন সংগ্রামের পর দ্বিতীয় বিয়ে
অলকা নিজেকে শক্ত করে তোলেন, জীবনের সঙ্গে লড়াই করেন। তিনি নিজেকে কর্মক্ষম করে তোলেন এবং একজন ব্যাঙ্কার হয়ে ওঠেন। পাশাপাশি তিনি ইউটিউব ও সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের পরিচিতি তৈরি করেন। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেন, ‘সুপারমম’ থেকে ‘মিস গোরখপুর’ পর্যন্ত জেতেন।
অবশেষে, তিনি আবার বিয়ে করেন। তিনি বলেন, তাঁর বর্তমান স্বামী তাঁর সাফল্যের সবচেয়ে বড় উৎসাহদাতা এবং তাঁর জীবনের নতুন আলো।