ভারতীয় রেলওয়ে: যখন ট্রেন বিদ্যুতে চলে, তাহলে জেনারেটর কেন লাগানো হয়? রহস্য জানলে অবাক হয়ে যাবেন!

ভারতীয় রেলওয়েকে দেশের লাইফলাইন বলা হয়। এটি তার যাত্রীদের আরও ভালো পরিষেবা দেওয়ার জন্য ছোটখাটো বিষয়গুলোরও বিশেষভাবে খেয়াল রাখে। আপনাদের মধ্যে অনেকেই নিশ্চয়ই ট্রেনে ভ্রমণ (Train Journey) করেছেন।
অনেকবার লক্ষ্য করেছেন যে ট্রেন বিদ্যুতে চলছে, তবুও তাতে জেনারেটর কার সংযুক্ত থাকে। এটি প্রতিটি ট্রেনে হয় না, তবে কিছু নির্দিষ্ট ট্রেনে জেনারেটর কার সংযুক্ত করা হয়। এর পেছনে একটি বড় কারণ রয়েছে। যেসব ট্রেনে LHB (লোড জেনারেশন সিস্টেম) কোচ ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর জন্য জেনারেটর কার সংযুক্ত করা হয়।
কেন ট্রেনে জেনারেটর কার সংযুক্ত করা হয়?
আসলে, দীর্ঘ দূরত্বের ট্রেনে যেমন প্যান্ট্রি কার, স্লিপার কোচ, এসি কোচ থাকে, ঠিক তেমনি একটি সম্পূর্ণ কোচ আকারে জেনারেটর কারও সংযুক্ত থাকে। অনেক যাত্রীর মনে প্রশ্ন আসে, যখন ট্রেন বিদ্যুতে চলে, তখন এর কী প্রয়োজন? কিন্তু যাত্রীদের জন্য জেনারেটর কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দীর্ঘ দূরত্বের ট্রেনে জেনারেটরের ভূমিকা
অনেক মানুষ জানেন না যে দীর্ঘ দূরত্বের ট্রেনে জেনারেটর কার কেন সংযুক্ত করা হয়। আসলে, যেসব ট্রেন দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করে বা যেসব ট্রেনের এসি কোচ থাকে, সেগুলোতে অধিক বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ সরবরাহের ওপর নির্ভর করা সম্ভব নয়। জেনারেটর দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপন্ন ও ব্যবস্থাপনা করা হয়।
যদি কেবলমাত্র বৈদ্যুতিক সংযোগের ওপর নির্ভর করতে হয়, তাহলে প্রতিটি এসি কোচে এয়ার কন্ডিশনার চালানো কঠিন হয়ে পড়বে এবং বিদ্যুতের চাপও অনেক বেড়ে যাবে। এজন্য জেনারেটর কার সংযুক্ত করা হয়, যা প্রতিটি এসি কোচে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করে।
একই সঙ্গে, দীর্ঘ দূরত্বের ট্রেনের ইঞ্জিনের নিচে ব্যাটারিও থাকে, যা সর্বদা চার্জ থাকে। তবে, ব্যাটারির শক্তি যথেষ্ট নয়, তাই জেনারেটর কার সংযুক্ত করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এর ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনো বাধা আসে না এবং এয়ার কন্ডিশনিং ব্যবস্থা নির্বিঘ্নে চালু থাকে।
কোন কোন ট্রেনে জেনারেটর কার থাকে?
শতাব্দী, দুরন্ত, গরিব রথ, তেজস এবং রাজধানী এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনে জেনারেটর কার সংযুক্ত করা হয়। এগুলো দীর্ঘ দূরত্বের ট্রেন, যা দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যাত্রী পরিবহন করে। তাই, এই ধরনের ট্রেনে জেনারেটর কার ব্যবহৃত হয়।
ট্রেনের মাঝখানে এসি কোচ কেন রাখা হয়?
ট্রেনের দুই প্রান্তে লাগেজ কোচ, তারপর জেনারেল এবং স্লিপার কোচ রাখা হয়। এতে ভিড় বিভক্ত হয়ে যায়। ফলে, যারা এসি কোচে ভ্রমণ করেন, তারা তুলনামূলকভাবে কম ভিড়ের মুখোমুখি হন।
এছাড়া, বেশিরভাগ রেলস্টেশনের প্রবেশ ও প্রস্থানের গেট সাধারণত মাঝখানে থাকে। তাই, এসি কোচের যাত্রীদের ট্রেন থেকে নামার পর দরজাগুলোতে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগে না। তারা সহজেই, অতিরিক্ত ভিড়ের সম্মুখীন না হয়েই বাইরে বেরিয়ে আসতে পারেন। একই সুবিধা প্রবেশের ক্ষেত্রেও পাওয়া যায়। যাত্রীরা প্রবেশ করতেই তাদের নির্ধারিত কোচ সামনে পেয়ে যান।
সাধারণ বগিগুলো ট্রেনের শুরু এবং শেষে কেন রাখা হয়?
সাধারণ বগিগুলোতে খুব বেশি ভিড় হয়। তাই এগুলো ট্রেনের শুরু ও শেষে রাখা হয়, যাতে যাত্রীরা সামনের ও পিছনের অংশে বিভক্ত হয়ে যান এবং স্টেশনে অতিরিক্ত ভিড় বা জ্যামের সৃষ্টি না হয়।
এই কারণেই রাজধানী, শতাব্দী কিংবা অন্যান্য সম্পূর্ণ এসি ট্রেনের বগির বিন্যাস প্রায় একই ধরনের হয়।