সিরিয়ায় সরকারি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শত শত সাধারণ নাগরিককে হত্যার অভিযোগ, আসাদের সঙ্গে কী সম্পর্ক

সিরিয়ায় সরকারি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শত শত সাধারণ নাগরিককে হত্যার অভিযোগ, আসাদের সঙ্গে কী সম্পর্ক

সিরিয়ার লাতাকিয়ায় চলমান সহিংসতায় বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
সিরিয়ায় যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী একটি সংস্থা জানিয়েছে যে সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী কথিতভাবে আলাওয়ি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শত শত মানুষকে হত্যা করেছে।

ব্রিটেনে অবস্থিত সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (SOHR) জানিয়েছে যে সিরিয়ায় শুক্রবার ও শনিবার আলাওয়ি সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে চালানো ৩০টি হামলায় প্রায় ৭৪৫ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছে।

তবে, বিবিসি স্বাধীনভাবে নিহতের সংখ্যা নিশ্চিত করতে পারেনি।

দেশে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে আসাদের ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর থেকে সহিংসতায় এখন পর্যন্ত এক হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। এরই মধ্যে সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শনিবার লাতাকিয়া এবং টারটাসের উপকূলীয় এলাকায় বিপুল সংখ্যক সৈন্য মোতায়েন করেছে। তাদের প্রেরণ করা হয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট আসাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য।

সিরিয়ার সাম্প্রতিক সহিংসতা নিয়ে তুরস্কের প্রতিক্রিয়া

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত সিরিয়া টিভি খবর দিয়েছে যে ৭ মার্চ সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি আহমদ আল-শারা সিরিয়ার প্রাক্তন আসাদ সরকারের “অবশিষ্ট সমর্থকদের” বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
তিনি ওই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতি “অত্যধিক দেরি হওয়ার আগে আত্মসমর্পণের” আহ্বান জানিয়েছেন।

বিবিসি মনিটরিং জানিয়েছে যে কয়েকটি আরব দেশ ও আঞ্চলিক সংস্থা সিরিয়ায় “অবৈধ গোষ্ঠীগুলোর” সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে, যার ফলে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

আরব দেশগুলো সিরিয়ায় শান্তি পুনরুদ্ধারে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর প্রতি নতুন সিরিয়ান সরকারের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।

লাতাকিয়া ও টারটাসে সংঘর্ষ এবং কারফিউ

এর আগে সিরিয়ার লাতাকিয়া ও টারটাসে সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগতদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৭ মার্চ উভয় শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

৭ ও ৮ মার্চ আরব মিডিয়াগুলোতে এই সহিংসতা নিয়ে ব্যাপক খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার পক্ষ থেকে সিরিয়ায় বিভিন্ন পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।

আরব দেশগুলো কী বলছে?

الخليج التعاون مجلس (GCC)-এর মহাসচিব জাসিম আল-বুদাইবি সিরিয়ার সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন,
“সিরিয়ান আরব রিপাবলিক তার জনগণের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তাতে জিসিসি দেশগুলো তাদের পাশে আছে।”

তবে, কিছু জিসিসি সদস্য দেশ সিরিয়ায় সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে পৃথক বিবৃতি প্রকাশ করেছে।

  • কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিরিয়ায় “অবৈধ গোষ্ঠীগুলোর অপরাধ ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর তাদের হামলার” নিন্দা জানিয়েছে।
  • সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব, স্থিতিশীলতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।
  • বাহরাইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিরিয়ায় “অবৈধ গোষ্ঠীগুলোর অপরাধ এবং নিরাপত্তা ও সামাজিক শান্তি দুর্বল করার তাদের প্রচেষ্টা” তীব্র ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে।
  • সৌদি আরব ও কুয়েত “অবৈধ গোষ্ঠীগুলোর” আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছে এবং মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিরিয়ার জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

এদিকে, জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইমান আল-সাফাদি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক পোস্টে সিরিয়ার নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও শান্তির জন্য নেওয়া সকল প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানান এবং “বহিরাগত হস্তক্ষেপের” নিন্দা করেন।

ইরাকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

সিরিয়ার ‘মুক্তি’র জন্য নতুন সংগঠন গঠিত?

সিরিয়ায় একটি নতুন গোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছে যা বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চায়।
তবে, এই তথ্য একটি অপ্রতিষ্ঠিত সূত্র থেকে পাওয়া গেছে এবং সিরিয়ান মিডিয়ায় এটি ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছে।

এটি প্রথমে সাবেক প্রেসিডেন্ট আসাদের ভাই মাহের আল-আসাদের ঘনিষ্ঠ একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রকাশ করা হয়।

৬ মার্চ সিরিয়ার টেলিগ্রাম চ্যানেল এবং আঞ্চলিক মিডিয়া একটি বিবৃতি শেয়ার করেছিল, যেখানে “সিরিয়ার মুক্তির জন্য সামরিক পরিষদ” নামের একটি নতুন গোষ্ঠী গঠনের ঘোষণা করা হয়।

এই সংগঠনের উদ্দেশ্য “সকল সিরিয়ান অঞ্চলকে দখলদার ও সন্ত্রাসী শক্তির হাত থেকে মুক্ত করা” এবং “দমনমূলক শাসন ও এর সাম্প্রদায়িক নীতি উৎখাত করা” বলে দাবি করা হয়েছে।

রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া

রাশিয়ার প্রধান টেলিভিশন নেটওয়ার্ক RT Arabic ৭ মার্চ রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতি প্রচার করে।

এতে বলা হয়,
“সিরিয়ার নেতৃত্বকে অবশ্যই রক্তক্ষয়ী সংঘাত বন্ধ করতে এবং সাধারণ মানুষ যাতে এই সহিংসতার শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে সকল প্রচেষ্টা চালাতে হবে।”

সিরিয়ার ভবিষ্যৎ কী?

সিরিয়ায় আলাওয়ি সংখ্যালঘুদের কেন্দ্রস্থল লাতাকিয়া ও টারটাসে নতুন সিরিয়ান নিরাপত্তা বাহিনী এবং আসাদপন্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে।
এর ফলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

আরব ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এই সংঘাতের প্রতি ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
কিছু মিডিয়া সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে, আবার কিছু মিডিয়া এই অভিযানকে সিরিয়ার স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে।

সিরিয়ায় সহিংসতা কোথায় গিয়ে শেষ হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।

O

Search

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *