যদি বিয়ের মাত্র কয়েকদিন পরই কোনো নারীর স্বামী মারা যায়, তাহলে এটি সেই নারীর জন্য এক গভীর শোকের ঘটনা হয়। যার সঙ্গে তিনি সারা জীবন থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যদি তার সঙ্গে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, তবে এটি তার জন্য এক ভয়ানক বিপর্যয় হয়ে দাঁড়ায়।

তবে, এমন কঠিন পরিস্থিতিতে খুব কম মানুষই নিজেদের জীবনকে নতুনভাবে শুরু করার সাহস দেখান। এমনই এক উদাহরণ হয়ে উঠেছেন উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা সোনি বিষ্ট। তার জীবনগাঁথা এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

বিয়ের এক মাস পর স্বামীর মৃত্যু

প্রায় দুই বছর আগেও সোনি বিষ্টের জীবন ছিল সাধারণ। তিনি স্বাভাবিকভাবে পড়াশোনা শেষ করেন এবং ২০২৩ সালে তার বিয়ে হয়। সোনির স্বামী নীরজ ভাণ্ডারী ১৮ কুমায়ুন রেজিমেন্টে সৈনিক ছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের পরিকল্পনা ছিল অন্যরকম।

বিয়ের মাত্র ৩৪ দিন পর এক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান নীরজ। এই অল্প সময়ের মধ্যেই বিধবা হয়ে যান সোনি বিষ্ট। স্বামীর মৃত্যুতে তিনি ভেঙে পড়েন, তার পরিবারও গভীর শোকে ডুবে যায়।

স্বামীর স্বপ্ন পূরণ করলেন সোনি

কঠিন সময়ের মধ্যেও সোনি বিষ্ট যা করলেন, তা আজ অনেকের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি তার স্বামীর স্বপ্ন পূরণের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জানতে পারেন কুমায়ুন রেজিমেন্টের ‘বীর নারী এন্ট্রি’ সম্পর্কে, যা সেনাবাহিনীতে প্রবেশের একটি বিশেষ সুযোগ।

পিতার সাহস ও অনুপ্রেরণা

সোনির বাবা কুন্দন সিংহ, যিনি ব্রিগেড অব গার্ডস ব্যাটালিয়নের অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার, তিনি মেয়েকে সাহস জোগান। পরিবারের সমর্থন ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সোনি কঠিন পরীক্ষাগুলো উতরে যান। গত শনিবার চেন্নাই অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমি (OTA)-তে অনুষ্ঠিত পাসিং আউট প্যারেডে তিনি অংশগ্রহণ করেন।

সোনি বিষ্ট যা বললেন

নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সোনি বিষ্ট বলেন,
“যখন আমি কুমায়ুন রেজিমেন্টের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ‘বীর নারী এন্ট্রি’ সম্পর্কে জানলাম, তখন আমার বাবা আমাকে এই পথে চলার জন্য উৎসাহিত করেন। এটা আমার জন্য অনেক কঠিন পথ ছিল, কিন্তু সমস্ত প্রতিকূলতা জয় করেছি।”

বর্তমানে, সোনি আর্মি অর্ডন্যান্স কর্পস-এ যোগ দিয়েছেন।

লেফটেন্যান্ট হলেন সোনি

বিশেষভাবে নারী দিবসের দিন সোনি বিষ্ট ভারতীয় সেনাবাহিনীতে লেফটেন্যান্ট পদে নিযুক্ত হলেন। চেন্নাইয়ের ওটিএতে পাসিং আউট প্যারেড শেষে তিনি লেফটেন্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার প্রথম পোস্টিং হয়েছে আসামে।