হোলির আগে রেলের বড় পদক্ষেপ! দেশের ৬০টি প্রধান স্টেশনে প্রবেশের নিয়ম পরিবর্তন করা হয়েছে

ভারতীয় রেল: রেলস্টেশনগুলিতে ক্রমবর্ধমান ভিড় নিয়ন্ত্রণে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সভাপতিত্বে একটি উচ্চ-স্তরের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সভায় যাত্রীদের সুবিধা এবং নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে, সারা দেশের ৬০টি প্রধান স্টেশনে নতুন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই ব্যবস্থাগুলি রেলওয়ে স্টেশনগুলিতে ভিড় নিয়ন্ত্রণ, বিশৃঙ্খলা হ্রাস এবং যাত্রীদের নিরাপদ ও সুবিধাজনক ভ্রমণ অভিজ্ঞতা প্রদানের লক্ষ্যে।
৬০টি স্টেশনে স্থায়ী বহিরঙ্গন অপেক্ষার স্থান
উৎসবের মরশুম এবং মহাকুম্ভের সফল পরীক্ষার ভিত্তিতে, রেলওয়ে ৬০টি স্টেশনে স্থায়ী অপেক্ষার স্থান তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে এই ব্যবস্থাটি সুরাট, উধনা, পাটনা, নয়াদিল্লি, প্রয়াগরাজ এবং অন্যান্য স্টেশনে বাস্তবায়িত হয়েছিল এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছিল। এই নতুন পরিকল্পনার অধীনে, ট্রেনটি প্ল্যাটফর্মে আসার পরেই যাত্রীদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে, ফলে অপ্রয়োজনীয় ভিড় এড়ানো যাবে। বর্তমানে, নতুন দিল্লি, আনন্দ বিহার, বারাণসী, অযোধ্যা এবং পাটনায় পাইলট প্রকল্প শুরু হয়েছে।
প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়িত হবে
এই ৬০টি স্টেশনে সম্পূর্ণ প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়িত হবে। এখন কেবল নিশ্চিত টিকিটধারী যাত্রীদের প্ল্যাটফর্মে যেতে দেওয়া হবে। টিকিটবিহীন যাত্রী বা অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা যাত্রীদের বাইরের অপেক্ষমাণ স্থানে অপেক্ষা করতে হবে। অতিরিক্তভাবে, অননুমোদিত প্রবেশপথগুলি সম্পূর্ণরূপে সিল করে দেওয়া হবে, কেবলমাত্র অনুমোদিত যাত্রীরা স্টেশনে প্রবেশ করতে পারবেন।
প্রশস্ত ফুট-ওভার ব্রিজ (FOB) নির্মাণ
ভিড় নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করার জন্য স্টেশনগুলিতে প্রশস্ত ফুট-ওভার ব্রিজ (FOB) নির্মাণ করা হবে। মহাকুম্ভের সময় ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য এই প্রশস্ত সেতুগুলি সফলভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। এই মডেল অনুসরণ করে, ১২ মিটার (৪০ ফুট) এবং ৬ মিটার (২০ ফুট) প্রস্থের দুটি নতুন স্ট্যান্ডার্ড ডিজাইন প্রস্তুত করা হয়েছে, যা এখন সমস্ত প্রধান স্টেশনে বাস্তবায়িত হবে।
নিরাপত্তার জন্য উচ্চ প্রযুক্তির ক্যামেরা স্থাপন করা হবে
নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে, সকল স্টেশনে উচ্চ প্রযুক্তির ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। মহাকুম্ভের সময়, ক্যামেরার সাহায্যে ভিড় কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল, তাই এখন অন্যান্য স্টেশনেও এটি বাস্তবায়িত হবে। এর ফলে স্টেশন চত্বরের ভেতরে এবং আশেপাশের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা সহজ হবে এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা যাবে।
প্রধান স্টেশনগুলিতে যুদ্ধ কক্ষ স্থাপন
যানজট পরিস্থিতি তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রধান স্টেশনগুলিতে যুদ্ধ কক্ষ স্থাপন করা হবে। যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে, সকল বিভাগের কর্মকর্তারা যুদ্ধ কক্ষ থেকে কাজ করবেন, যা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে এবং ভিড় ব্যবস্থাপনাকে কার্যকর করতে সহায়তা করবে।
নতুন যোগাযোগ সরঞ্জাম স্থাপন করা হবে
রেলওয়ে স্টেশনগুলিতে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য, ডিজিটাল ওয়াকি-টকি, ঘোষণা ব্যবস্থা এবং কলিং সিস্টেমের মতো নতুন যোগাযোগ সরঞ্জাম স্থাপন করা হবে। এর ফলে রেল কর্মীরা একে অপরের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করতে পারবেন এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণ আরও কার্যকর করা যাবে।
রেল কর্মীদের জন্য নতুন ডিজাইন করা পরিচয়পত্র
কর্মী এবং পরিষেবা কর্মীদের নতুন ডিজাইন করা পরিচয়পত্র জারি করা হবে যাতে শুধুমাত্র অনুমোদিত ব্যক্তিরা স্টেশনে প্রবেশ করতে পারেন। এটি নিরাপত্তা কর্মীদের প্রকৃত কর্মচারী এবং বহিরাগতদের মধ্যে সহজেই পার্থক্য করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও, সকল রেল কর্মীদের নতুন ডিজাইনের ইউনিফর্ম দেওয়া হবে যাতে যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে তাদের সহজেই শনাক্ত করা যায়।
রেল কর্মীদের জন্য নতুন ইউনিফর্ম
রেল প্রশাসনকে আরও দক্ষ করার জন্য, স্টেশন ডিরেক্টর পদটি উন্নীত করা হবে। সকল প্রধান স্টেশনে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে স্টেশন ডিরেক্টর হিসেবে নিযুক্ত করা হবে এবং অন্যান্য সকল বিভাগকে স্টেশন ডিরেক্টরের কাছে রিপোর্ট করতে হবে। তাদের আর্থিক ক্ষমতাও দেওয়া হবে, যাতে তারা স্টেশনের উন্নতির জন্য তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
স্টেশন ডিরেক্টর পদের উন্নয়ন
ভিড় নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আরেকটি বড় পরিবর্তন হল, এখন স্টেশন ডিরেক্টরকে স্টেশনের ধারণক্ষমতা এবং উপলব্ধ ট্রেনের সংখ্যা অনুসারে টিকিট বিক্রি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেওয়া হবে। এটি অপ্রয়োজনীয় ভিড় এড়াবে এবং যাত্রীদের অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করবে।
টিকিট বিক্রির জন্য নতুন ব্যবস্থা
রেলওয়ের এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলি যাত্রীদের জন্য একটি নিরাপদ, সুসংগঠিত এবং উন্নত ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করবে। এই ব্যবস্থাগুলি স্টেশনগুলিতে ভিড় নিয়ন্ত্রণে, অননুমোদিত প্রবেশ রোধে এবং নিরাপত্তা জোরদার করতে সাহায্য করবে। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব কর্তৃক ঘোষিত এই পরিবর্তনগুলি ভবিষ্যতে ভারতীয় রেলের কার্যক্রমকে আরও দক্ষ এবং আধুনিক করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।